বৃহস্পতির বদলে আজ দিল্লি যেতে পারেন মমতা

নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ নিয়ে জল্পনা

নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষ মুহূর্তের সফর সূচিতে রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। আগামী ২৭ তারিখ অর্থাৎ শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লি গেলেন না মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতির বদলে শুক্রবার অর্থাৎ আজ দিল্লি যেতে পারেন মমতা। আবার অন্য একটি সূত্রের দাবি, তিনি দিল্লি সফর পুরোপুরিই বাতিল করে দিতে পারেন। তৃণমূলের অন্দরমহলের দাবি ছিল, নীতি আয়োগের বৈঠককেই প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারেন তিনি।

তবে শেষ মুহূর্তে কেন মমতা তাঁর দিল্লি সফর পিছিয়ে দিলেন বা বাতিল করলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের বক্তব্য, এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই সাক্ষাৎ হচ্ছে না বলেই মমতা দিল্লি যাওয়া পিছিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, তেমন হলে মমতা শুক্রবারেও দিল্লি যেতে পারেন। কারণ, দিল্লিতে তাঁর অনেকগুলি কর্মসূচি ঠিক করা আছে। তার মধ্যে একটি হল, দলীয় সাংসদদের সঙ্গে মমতার বৈঠক। শুক্রবার দিল্লির বঙ্গভবনে এই বৈঠক রয়েছে মমতার। সেখানে চলতি বাজেট অধিবেশনে তৃণমূলের কী স্ট্র্যাটেজি থাকবে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অভ্যন্তরে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, একাধিক সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের যে মতান্তর দেখা দিয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে কীভাবে সমঝোতা তৈরি হবে, এই বিষয়গুলো দলীয় সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন মমতা। পাশাপাশি দিল্লিতে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও শুক্রবার ঘরোয়া ভাবে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। তা ছাড়াও দিল্লিতে বিরোধী শিবিরের কয়েক জন নেতা-নেত্রীর সঙ্গেও তাঁর দেখা করার কর্মসূচি রয়েছে।


এরপর শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আয়োজিত হবে নীতি আয়োগের বৈঠক। সেই বৈঠকের জন্য মমতা প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে তৈরিও হয়েছিলেন। কিছু নথিপত্র আগে নীতি আয়োগকে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল। গঙ্গা ভাঙন রোধে মালদা ও মুর্শিদাবাদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ, সুন্দরবন অঞ্চল-সহ উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য আর্থিক প্যাকেজ, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সংক্রান্ত বিষয়, ফারাক্কা ব্যারেজ ও ডিভিসির একাধিক জলাধারের সংস্কার সাধন, ন্যায়সংহিতা নিয়ে রাজ্যের আপত্তি, উচ্চশিক্ষায় রাজ্যপালের বেআইনি হস্তক্ষেপ সহ বেশ কতগুলি প্রসঙ্গের বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই নবান্ন থেকে পাঠানো হয়েছে নীতি আয়োগের কাছে। অনেকে অবশ্য বলছেন, মমতা নীতি আয়োগে বক্তৃতা না-ও করতে পারেন। তিনি শুধু নথিপত্র পেশ করতে পারেন। যদিও এ বিষয়টি স্পষ্ট নয় এখনও। এর মাঝেই মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটে কেবল বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে ঢেলে সাজানোর অভিযোগের সরগরম হয়ে ওঠে সংসদ। তবে এই বাজেটের সঙ্গে নীতি আয়োগের বৈঠকের কি সম্পর্ক?

উল্লেখ্য, বাজেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েই নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে বিরোধী শিবিরে খানিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ওই বৈঠক বয়কট করছেন। বৈঠকে যোগ দেবেন না তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। বৈঠকে আসবেন না ঝাড়খণ্ড এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীরাও। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মমতার বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জল্পনা এবং আলোচনা তৈরি হচ্ছিল। বস্তুত, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদের বয়কটের পাশাপাশি মমতা যে ওই বৈঠকে যোগ দিতে আগ্রহী, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁর প্রশংসাও করেছিলেন। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণে মমতা শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠকে যোগ না-ও দিতে পারেন। কারণ, তাতে বিরোধী শিবিরের ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

যদিও, মমতার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আসল কারণ পূর্বেই স্পষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে বহুবার নীতি আয়োগের বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন মমতা। তিনি একাধিক বার বৈঠকে যোগ না দিয়ে তাঁর স্পেশাল অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রকে পাঠিয়েছেন। মমতার বরাবরের অভিযোগ, নীতি আয়োগের বৈঠকে রাজ্যের কথা শোনা হয় না। বাংলার নাম নিচের দিকে থাকায় অনেক সময় বলতেও দেওয়া হয় না। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। নতুন এনডিএ সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম অনুষ্ঠিতব্য নীতি আয়োগের বৈঠক। একশো দিনের কাজ, আবাসের টাকা-সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে বলে বারবার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি বাংলা সবদিক থেকেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার, বারংবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্রের খবর, দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একবার রাজ্যের দাবিদাওয়া গুলোকেই তুলে ধরবেন বলে ঠিক করেছিলেন। মমতা নিজে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে ‘জোট’ মোদী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করলে রাজ্যের বকেয়া অর্থের সমস্যার খানিকটা সুরাহাও হতে পারে, মত রাজনৈতিক মহলের। সেক্ষেত্রে, অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ বৈঠকে যোগ না দিলেও মমতার বৈঠকে যোগ দেওয়ার গুরুত্ব তুলনামূলক বেশি। ঘটনাচক্রে, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা এবং স্ট্যালিন ও অন্যান্য বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করেছেন। ফলে বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ওই বৈঠকে কার্যত ‘একা’ পড়ে যাবেন। সে কারণে তিনিও শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক পুরোপুরি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে বৃহস্পতিবার সফর না-করার সিদ্ধান্ত যেমন মমতার, তেমনই তিনি কবে দিল্লি যাবেন বা আদৌ যাবেন কি না, তা-ও মমতাই ঠিক করবেন।