কেজরি-পত্নী সুনীতাকে ফোন মমতার

দিল্লি, ২২ মার্চ– বৃহস্পতিবার আবগারি দূর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর শুক্রবার সকালে তাঁর স্ত্রী সুনীতাকে ফোন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই সময় সুনীতার পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন মমতা৷

শুক্রবার সকালে তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে গ্রেফতারির নিন্দা করেছেন৷ জানিয়েছেন, বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে৷ কিন্ত্ত বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলে ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও ছাড় পাচ্ছেন, দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পারছেন৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ এটা গণতন্ত্রের উপর নির্মম আঘাত৷ শুক্রবার এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে নির্বাচন কমিশনে যাবে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দল৷ তাতে তৃণমূলের দুই সদস্যও থাকবেন৷’

মমতা আরও লেখেন, ‘‘আমাদের ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যেরা শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবেন এবং আদর্শ আচরণবিধি প্রযুক্ত থাকার সময়ে বিরোধী নেতাদের এ ভাবে ‘টার্গেট’ করার বিরোধিতা করবেন৷ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের তরফে থাকবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং নাদিমুল হক৷’


আপ মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরই আন্দোলনে নেমেছে তাঁর দল৷ আপ মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরই প্রশ্ন উঠছে, সরকার ও দল পরিচালনায় এবার কে নেতৃত্ব দেবে? যদিও মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়তে নারাজ কেজরি৷ তিনি জানিয়েছেন, জেলে বসেই দলীয় প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি৷ যদিও আপ দলীয় সূত্রে খবর, কেজরিওয়ালের যাবতীয় কাজ সামাল দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য তিনজনের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে– তাঁরা হলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল, মন্ত্রিসভার সদস্য অতীশী মারলেনা ও সৌরভ ভরদ্বাজ৷ তবে এদের মধ্যে কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়ালের নাম সবার ওপরে রয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে৷

উল্লেখ্য, আপ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা একদা ভারতীয় রাজস্ব বিভাগের উচ্চপদে ছিলেন৷ আইআরএস অফিসার (ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিস) হিসেবে আয়কর দফতরে ২২ বছর কাজ করেছেন৷ তারপর স্বেচ্ছা অবসর নেন৷ এখন সংসার ও সন্তানদের সামলাতেই ব্যস্ত৷ অবসরের আগে তাঁর পোস্টিং ছিল দিল্লির ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালে৷ সেখানে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি৷ জু’লজি নিয়ে মাস্টার্স করেছেন সুনীতা৷ ১৯৯৩ ব্যাচের আইআরএস অফিসার ছিলেন তিনি৷

প্রশিক্ষণ পর্ব চলার সময়েই অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর আলাপ৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ১৯৯৫ ব্যাচের আইআরএস অফিসার৷ দু’জনের বন্ধুত্ব প্রেম অবধি গড়াতে দেরি হয়নি৷ দুজনেই সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করবেন৷ শুরু হয় একসঙ্গে পথ চলা৷ সুনীতা-অরবিন্দর এক ছেলে ও এক মেয়ে৷ মেয়ে হর্ষিকা বাবারই মতো আইআইটি দিল্লিতে পড়াশোনা করছে৷ ২০১৪ সালের জয়েন্ট-এন্ট্রান্সে ৩,৩২২ র্যাঙ্ক করেন হর্ষিকা৷ তিনি পড়াশোনাতেও তুখোড়৷ ছেলে পুলকিতও মেধাবী৷ সিবিএসই দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে তিনিও দিল্লি আইআইটিতে পড়াশোনা শুরু করেন৷ সুনীতা কেজরিওয়াল চাকরি ও সংসার দুইই দায়িত্ব নিয়ে সামলেছেন৷ আয়কর দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলেছেন যেমন, তেমনই একজন স্ত্রী ও মা হয়ে সংসারের দায়িত্ব সামলেছেন একাই৷ সেই সুনীতাই স্বামীর জেলযাত্রার পর দল এবং রাজ্যের হাল সামলাবেন কিনা তাই এখন বড় প্রশ্ন৷