নিজস্ব প্রতিনিধি – ফের বাংলায় ভোট প্রচারে এসে একাধিক ইসু্যতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ৷ রায়গঞ্জের পর এবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে এসে রাজনৈতিক পারদ চড়ান শাহ৷ বধর্মান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের সমর্থনে মেমারিতে আসেন তিনি৷ এদিন সভামঞ্চে শাহের সাথেই উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল৷ আগেই সন্দেশখালি ঘটনার অভিযুক্তদের ‘উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করে দেওয়ার’ শাস্তির নিদান দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এবার নিহত বিজেপি কর্মীদের হত্যাকারীদের পাতাল থেকে খুঁজে বার করে এনে জেলে ভরার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি৷ জনসভা থেকে ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই শাহ কয়েক জনের নাম করেন৷ সন্দীপ ঘোষ, সুশীল মণ্ডল, সুখদেব প্রামাণিক, রবিন পাল, বলরাম মাঝি, ভাদু দাস সহ কয়েক জন বিজেপি কর্মীর নাম উল্লেখ করেন তিনি৷ শাহের অভিযোগ, এঁরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধায়ের গুন্ডাদের হাতে খুন হয়েছেন৷ তার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘‘আমি আজ বলে যাচ্ছি, যাঁরাই এই হত্যা করছে, আমাদের সরকার গঠনের পর সকলকে পাতাল থেকেও খুঁজে বার করে এনে জেলে পাঠানোর কাজ করবে বিজেপি৷ আমাদের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করা হয়, লজ্জা হওয়া উচিত!’’
প্রধানমন্ত্রীর যোজনাগুলির সুবিধা বাংলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছতে দেন না মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তাছাড়াও বহুক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পগুলির নাম বদলে নিজের নামে চালিয়ে নেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই অভিযোগ শাহের৷ বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কার্যের খতিয়ান তুলে ধরে অমিত শাহ বলেন, ‘‘বাংলায় বিনামূল্যে যে চাল আসে, সেটা দেন মোদী৷ ১২ কোটি মানুষের বাডি়তে শৌচালয় বানিয়ে দিয়েছেন মোদি৷ ৪ কোটি মানুষকে বাডি় তৈরি করে দিয়েছেন মোদি৷ ১০ কোটি মানুষকে সিলিন্ডার দিয়েছেন, ১৪ কোটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন জল৷ কিন্ত্ত দিদি প্রধানমন্ত্রীর এই যোজনাগুলিকে নিচ অবধি পৌঁছতে দেন না৷’’ শাহের আরও সংযোজন, ‘‘কিছু প্রকল্পগুলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজের নামে করে নিচ অবধি পৌঁছে দিচ্ছেন৷ যেমন পিএম ফসল বিমা যোজনা হয়ে গেলো বাংলা ফসল বিমা যোজনা, পিএম আবাস হয়ে গেলো বাংলা আবাস, স্বচ্ছ ভারত মিশন হয়ে গেলো নির্মল বাংলা, পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা হয়ে গেলো খাদ্যসাথী, জল জীবন মিশন হয়ে গেলো মমতার জলস্বপ্ন৷ নরেন্দ্র মোদি বাংলার উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন, দাবি অমিত শাহের৷ সেই টাকা কোথায় গেল, সভামঞ্চ সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে তিনি গর্জে উঠে বলেন, ‘‘আপনার গ্রামে কিছু এসেছে? তৃণমূলের গুন্ডারা এই টাকা আত্মসাৎ করেছে৷ এই টাকা যারা আত্মসাৎ করেছেন, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তাদের উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে৷’’
রামমন্দিরে রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তাঁরা যাননি সেখানে৷ এই প্রসঙ্গে বর্ধমান থেকে সরব হন শাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ ও রামভক্তরা চাইতেন রামমন্দির তৈরি হোক৷ যখন মন্দির তৈরি হল, তখন মমতা দিদিকে রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত ওঁনারা গেলেন না৷ কেন গেলেন না জানেন? কারণ ওঁনারা অনুপ্রবেশকারীদের ভয় পায়৷ ” রামমন্দির ইসু্যতেই শাহ আরও বলেন, ‘‘অযোধ্যায় রামমন্দির করেছে বিজেপি সরকার৷ ৭০ বছর ধরে এই রামমন্দির ইসু্য ঝুলিয়ে রেখেছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, কমিউনিস্টরা৷ আপনারা বাংলা থেকে মোদীকে ১৮টা আসন দিলেন৷ দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী করলেন, আর ৫ বছরে মোদি কেস জিতে, রামমন্দির উদ্বোধন করে দিলেন৷’’ ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়েও শাহের সরাসরি আক্রমণ মমতা বন্দোপাধ্যায়কেই৷ মমতা বন্দোপাধ্যায় চাইতেন না ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হোক, কাশ্মীর আমাদের হোক কিন্ত্ত প্রধানমন্ত্রী তা করে দেখিয়েছেন, এমনটাই বলেন অমিত শাহ৷ এদিন একই আক্রমণের তীরে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বিঁধেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কেও৷ শাহের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ভয় পায়৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেতাদের জন্য হোটেল বুক করা যায় না, গাডি় পাওয়া যায় না৷ যে হোটেল বুক হয়, সেটা তৃণমূলের গুণ্ডারা খালি করে দেয়৷ আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ভয় পায়৷ কিন্ত্ত বিজেপির কার্যকর্তারা এদের ভয় পান না৷ যত সন্ত্রাস করার করে নিন, আপনার (মুখ্যমন্ত্রী) এবং ভাইপোর (অভিষেক বন্দোপাধ্যায়) বিদায় সুনিশ্চিত৷’’ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তৎপরতা নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছে তৃণমূল৷ এবার সেই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন অমিত শাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘মমতা দিদি বলেন ইডি সিবিআই এর কথা? তাঁর কেবল একজন মন্ত্রীর বাড়ি থেকেই এতো টাকা উদ্ধার হয়েছে যা গোটা মঞ্চ ঢেকে ফেলতে পারে৷’’
সন্দেশখালি ঘটনা নিয়েও এদিন প্রতিবাদের আওয়াজ তোলেন শাহ৷ ‘‘মা-বোনেদের যারা অত্যাচার করেছে, তাদের জেলে পাঠানো হবে’’, এমনটাই বলেন তিনি৷ একই সঙ্গে সিএএ কার্যকর হওয়া নিয়েও নিজ অবস্থানে অটল থাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ‘‘সিএএ করে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেবেই, মমতা বন্দোপাধ্যায় আটকাতে পারবেন না!’’, হুঙ্কার শাহের৷ কেন রাজ্য সরকার সিএএ বাংলায় লাগু করতে চায়না, সভামঞ্চ থেকে তার কারণও ব্যাখ্যা করেন৷ ওঁনার ভাষায়, ‘‘তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের আটকানোর চেষ্টা করছে না, কারণ তাদের ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কি সমস্যা বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীরা যদি নাগরিকত্ব পান? ওঁনার সমস্যা হলো অনুপ্রবেশকারীরা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ওপর রাগ করবেন৷ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘‘আসামে ভাজপা সরকার হওয়ায় আজ অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে৷ এই দিন বেশি দূরে নেই৷ বাংলাতেও ভাজপা সরকার হবে, একটা পাখিও অনুপ্রবেশ করতে পারবে না৷’’ আগের মতো এদিনও বাংলা থেকেই ৩০ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শাহের মতে, দেশ জুড়ে বিকাশ হচ্ছে কেবল বাংলা পেছনে থেকে গেছে৷ ত্রিশটি আসন দিয়ে বিজেপিকে জয়ী করলে পশ্চিমবঙ্গ ‘সোনার বাংলা’ হবে, দেশে এক নম্বর রাজ্য হবে৷ এই প্রসঙ্গেও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি শাহ৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মা, মাটি, মানুষের নাম করে মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার গঠন করেছিলেন৷ এখন মাফিয়াদের সরকার হয়ে গেছে৷’’