১৪ বছর থমকে মাদ্রাসা গ্রুপ-ডি পরীক্ষার ফলাফল, তিনমাসে ফল প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের

দু’লক্ষ টাকা জরিমানা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, ১৩ জুন– একবছর বা দুবছর নয়। টানা চৌদ্দ বছর অপ্রকাশিত মাদ্রাসা গ্রুপ-ডি পরীক্ষার ফলাফল। তার উপর একের পর এক আদালত অবমাননার অভিযোগ। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের লিগ্যাল সার্ভিসে এই দুই লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। ২০১০ সালের মাদ্রাসা গ্রুপ ডি-র রেজাল্ট তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দিল এই ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১০ সালের মাদ্রাসা গ্রুপ ডি-র ফলাফল কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? তা নিয়েই মামলা। রেজাল্ট প্রকাশ করার আবেদন জানিয়ে দায়ের হয় মামলা। শুনানি চলাকালীন মাদ্রাসা বোর্ডের তরফ থেকে ফের পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। তা খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

২০১০ সালে মাদ্রাসাগুলিতে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় ওই চাকরিপ্রার্থীদের। তারপর প্রায় ১৪ বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত ফল জানতে পারেননি পরীক্ষার্থীরা। প্রথমে পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ফল প্রকাশ বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে এই নিয়ে অনেক মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় মামলাগুলির নিষ্পত্তির আগে ফল প্রকাশ করা যাচ্ছিল না। বন্ধ ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়াও। বৃহস্পতিবার সেই মামলায় হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য আর কোনও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না রাজ্যকে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই তিন হাজার পদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি, এতদিন ওই নিয়োগ না করার জন্য জরিমানাও দিতে হবে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে’।


বৃহস্পতিবার বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল মামলাটি। সেখানেই মামলাকারীর আইনজীবী গত ১৪ বছর ধরে ওই শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের গড়িমসির কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে, মাদ্রাসা কমিশন জানায়,’তারা ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ শুরু করতে চায়’। কিন্তু সেই প্রস্তাব শোনামাত্র নাকচ করে দেয় হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘আর অতিরিক্ত কোনও সময় নয়। তিন মাসের মধ্যে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে হবে কমিশনকে। এতদিন সময় নিয়েও নির্দেশ পালন না করার জন্য দু’লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।’ ২০১০ সালে বাম আমলে মাদ্রাসার গ্ৰুপ-ডি পদে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা হয়। জানানো হয়, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৩০০০ কর্মী নিয়োগ করা হবে। সিংহভাগ পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ইচ্ছাকৃত গড়িমসি করছে নিয়োগ ব্যাপারে’। মামলাকারীরা ডিভিশন বেঞ্চকে জানিয়েছেন, -‘২০১৯ সালে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গেল বেঞ্চ ওই শূন্যপদ ১৪ দিনের মধ্যে পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু তারপরেও নিয়োগ হয়নি।

সেই সময় মারণ ভাইরাস করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্দেশ কার্যকর করার জন্য আদালতের কাছে ছ’মাস সময় চেয়েছিল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। সেই ছ’মাস পেরিয়ে গেলে কোভিডের কারণ দেখিয়েই আরও ছ’মাস সময় নেওয়া হয়। এভাবে বেশ কয়েকবার সময় নিয়েও তিন হাজার গ্ৰুপ-ডি পদে নিয়োগ করতে পারেনি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে,’ একাধিকবার আদালতের নির্দেশ কার্যকর না করা এবং বার বার সময় নিয়েও নির্দেশ পালন করতে না পারার জন্য মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে ওই তিন হাজার শূন্যপদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’। এখন দেখার, কলকাতা হাইকোর্টের এহেন কড়া দাওয়াইতে কতটা সক্রিয় হয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন?