‘আর কতদিন আমরা সহ্য করব?’ রেল দুর্ঘটনার পর কেন্দ্রকে এক্সবাণে বিঁধলেন মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফের বিভীষিকাময় রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকলো ভারতবর্ষ। দু’মাসে পর পর তিনবার রেল দুর্ঘটনা ঘটায় রেল সফরটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে আম জনতার কাছে। এবার ঝাড়খণ্ডের রেল দুর্ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারকে তোপ দাগলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “প্রতি সপ্তাহে দুঃস্বপ্নের এই ধারাবাহিকতা, রেললাইনে এই মৃত্যুমিছিল – কত দিন আর আমরা সহ্য করব?”, সুপ্ত আর্তনাদ নিয়েও কড়া ভাষায় এভাবেই এক্সবাণে কেন্দ্রকে বিঁধলেন মমতা।

দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন মমতা। সেখানে এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানান তিনি। মমতা লেখেন, “আরও একটি ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা! আজ (মঙ্গলবার) ভোরে ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর ডিভিশনে লাইনচ্যুত হয়েছে হাওড়া-মুম্বই রেল। একাধিক মৃত্যু এবং বিপুল সংখ্যক আহত হয়েছেন, মর্মান্তিক পরিণতি!” এরপরই কেন্দ্রের মোদী সরকারের উদ্দেশে তোপ দেগে মমতা লেখেন, “আমি প্রশ্ন করতে চাই, এটাই কি সরকার চালানোর নমুনা?” একের পর এক রেল দুর্ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে মমতার আরও সংযোজন, “প্রায় প্রতি সপ্তাহে দুঃস্বপ্নের এই ধারাবাহিকতা, রেললাইনে অবিরাম মৃত্যু মিছিল – আর কতদিন আমরা সহ্য করব? ভারত সরকারের উদাসীনতা কি শেষ হবে না? শোকাহত পরিবার, আত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা জানাই।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস। ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে বেলাইন হয় ট্রেনটি। চক্রধরপুর ডিভিশনের বরাবাম্বু-রাজখরসাওয়ান স্টেশনের মধ্যবর্তী জায়গায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। রেলের তরফে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয় দুর্ঘটনাস্থলে। তৎপর হন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকার্য। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তৈরী হয়েছে জটিলতা। রেলের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, যে জায়গায় মুম্বইগামী ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তার কাছেই একটি মালগাড়িও বেলাইন হয়েছে।


তবে এই দু’টি দুর্ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। রেল দুর্ঘটনার এই বিভীষিকার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হওয়া চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মধ্য দিয়ে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও। দুর্ঘটনার অভিঘাতে একটি মালগাড়ির কামরার উপরে উঠে গিয়েছিল করমণ্ডলের ইঞ্জিন। দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়। এরপর চলতি বছরে গত ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় চণ্ডীগড় থেকে ডিব্রুগড়গামী ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের অন্তত ১০-১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার ঠিক এক মাস আগে, গত ১৭ জুন উত্তরবঙ্গের চটেরহাট এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যে লাইন দিয়ে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলছিল, একই লাইনে চলার অনুমতি পাওয়া একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। ধাক্কার জেরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা উঠে পড়ে মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপর। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ির কামরাও। কাঞ্চনজঙ্ঘার গার্ড এবং মালগাড়ির চালক-সহ মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৫০ জন। এই দুর্ঘটনাগুলির রেশ কাটতে না কাটতেই ঝাড়খণ্ডে ঘটলো অপর এক রেল দুর্ঘটনা। এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর এক্সবাণ কেন্দ্রের দিকে।