ঘরে উঠলাে শ্রমের ফসল। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভালাে ফল করলাে বামেরা। গড় আড়াই দশকে এমন উত্থান দেখা যায়নি। গােটা গণনা প্রক্রিয়ায় অন্তত ২৮ টি কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বামেরা। এর মধ্যে সিপিআই (এমএল)-এর আসন সংখ্যা ১২ টি। সিপিআই, সিপিএম এগিয়ে ছিল তিনটি করে আসনে। শেষ পর্যন্ত সিপিআই (এমএল) ১১টি, সিপিএম তিনটি এবং সিপিআই দুটি আসনে জয়ী হয়েছে।
তথ্য বলছে শেষ সিপিআই (এমএল) বিহারে ভালাে ফল করেছিল ১৯৯৫ সালে। অবিভক্ত বিহারে সেবার লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে গিয়েছিল। এরপরে টিমটিম করে জ্বলেছে দলের অস্তিত্ব। ২০০৫ সালে সিপিএম বিহারে দুটি আসন পায়। আর ২০১০ সালে সিপিএম বিহারে একটি আসনে জয় পেয়েছিল। এই অবস্থা থেকে বামেরা এতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা বিশেষজ্ঞরাও অনেকে আন্দাজ করতে পারেননি। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী বিহার সিপিএমের সম্পাদক অভধেশ কুমার সিংহ বলেছেন, আরও বেশি আসনে লড়লে ফল আরও ভালাে হত।
বিহারে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মহাগাঁটবন্ধনের মধ্যে প্রথম থেকেই মতবিরােধ ছিল। বারবার টানাপোড়েন সামনে আসায় হস্তক্ষেপ করেন লালুপ্রসাদ যাদব। স্থির হয় আরজেডি কংগ্রেস জোটে সামিল হবে তিন বাম দল সিপিআই (এমএল), সিপিআই এবং সিপিএম। এর মধ্যে লিবারেশন প্রার্থী দেয় ১৯ টি আসনে। সিপিআই প্রার্থী দেয় ছ’টি আসনে। আর সিপিএম প্রার্থী দিয়েছিল চারটি আসনে। এলাকা ও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বামেরা বেশ খানিকটা হােমওয়ার্ক করেই এগিয়ে ছিল। মরা গাঙে জোয়ার এসেছে তাতেই। ত্রিপুরা, কেরল ও বাংলা ছাড়া বামেদের অস্তিত্বের কথা বলতে হলে এবার থেকে বিহারের কথাও বলতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে তারা হারানাে জমি ফিরে পানে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
কিন্তু এখান থেকে আসছে অন্য প্রশ্ন। বাংলায় ভােটের রণ ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলায় জমি কামড়ে পড়ে থাকা বামেরা সহস্রাব্দে একটু একটু করে ক্ষইতে থাকে। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় তারা। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকের কান্না, লকডাউন, খেটে খাওয়া মানুষদের সমস্যাকে ইস্যু করে বিহারে যেভাবে মানুষের মন বামেরা জয় করেছে, বাংলায় কি তা পারবে?