• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

লক্ষ্মীর ভান্ডারই বড় জয় এনে দিয়েছে তৃণমূলকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা– রাজ্যে ৪২ লোকসভার মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ আসন দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ বিধানসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আরও একবার প্রমাণ করল যে, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো নারী কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলি ব্যাপকভাবে জয় এনে দিচ্ছে দলকে। রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থায় অনিয়ম, সরকারি স্কুলগুলিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি, এমনকি সন্দেশখালিতে হিংসার মতো গুরুত্বপূর্ণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা– রাজ্যে ৪২ লোকসভার মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ আসন দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ বিধানসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আরও একবার প্রমাণ করল যে, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো নারী কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলি ব্যাপকভাবে জয় এনে দিচ্ছে দলকে। রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থায় অনিয়ম, সরকারি স্কুলগুলিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি, এমনকি সন্দেশখালিতে হিংসার মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তৃণমূলের কাছে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন, লক্ষ্মীর ভান্ডার, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজশ্ৰী, কন্যাশ্রীর মতো উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির জন্য বাংলায় বিজেপির ধর্মীয় আগ্রাসনের রাজনীতি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। রাজ্যের প্রায় ৫০শতাংশ ভোটার মহিলা। এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাজ্যের প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মহিলা প্রতি মাসে মাসে সরাসরি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে।”

এই প্রকল্প ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের মহিলাদের এই সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে নগদের পরিমাণ সাধারণদের জন্য প্রথমে ৫০০ টাকা করা হয়েছিল। এবার ভোটের আগে সেটা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতাকে ক্ষমতায় আনতে ২০১১ সালে রাজ্যের  ৫০ শতাংশ মহিলা ভোটার তাঁদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ মহিলা ভোটার রয়েছেন। যা নথিভুক্ত ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ পুরুষ ভোটারের তুলনায় মাত্র ১২ লক্ষ কম।

ফলে রাজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা ভোটার রয়েছেন, যাঁরা রাজ্যের ক্ষমতায় কারা আসবেন, তা নির্ধারণ করতে সক্ষম। লক্ষ্যণীয়ভাবে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরুষদের তুলনায় বেশি সংখ্যক মহিলারা ভোট দিয়েছিলেন। সেবার রাজ্যের পুরুষ ভোটারদের মধ্যে যেখানে ৮১.৩৫ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন। আর মহিলা ভোটারদের মধ্যে ৮১.৭৯ শতাংশ ভোটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ফলে ২০১৯ সালে মহিলারাই বেশি ভোট দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন যে, মহিলা ভোটাররা ধারাবাহিকভাবে তৃণমূলের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের ৩২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কও তৃণমূলের পক্ষে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূলের পক্ষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন জনপ্রিয় মহিলা মুখ রয়েছেন। যিনি রাজ্যের মহিলাদের জনসমর্থন আদায়ে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু যিনি খুবই সাধারণ দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেছেন। কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র মধ্যে এই ধরণের জনপ্রিয় মুখের খুবই অভাব রয়েছে।

একজন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলছেন,”লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে একটি পরিবারে ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের তিনজন মহিলা ১০০০ করে প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন।” এই লোকসভা নির্বাচনে ভোটের ধরণ দেখে এক নজরে বোঝা যাচ্ছে, অনেকগুলি লোকসভা আসনে পুরুষ ভোটারের তুলনায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা অভূতপূর্বভাবে বেশি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের চন্ডিপুরের ২২ এবং ২৫ বছর বয়সের বাসিন্দা শেখ সামিদুল ও শেখ রাজেশ নামে দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা তৃণমূলে ভোট দিয়েছেন বলে জানান। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন,”দিদি আমাদের পরিবারের মা, বোন এবং অন্যান্য মহিলা সদস্যদের লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য করেছেন। এছাড়া আরও অনেক মহিলা প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলারা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন।”

রাজ্যের মহিলা ভোটারদের মধ্যে চারটি ক্যাটেগরি রয়েছে। সেগুলি হল: সংখ্যালঘু, সাধারণ, তফসিলি-উপজাতি এবং সাবল্টার্ন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৫০ শতাংশ মহিলা ভোটারদের সমর্থন পেয়েছিল। যেখানে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত হওয়া লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। যেখানে গেরুয়া শিবির পেয়েছে ৩৮ শতাংশ। এবং কংগ্রেস ও বামেদের জোট মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পেয়েছে।