অভিষেক রায়, খড়গপুর, ২১ জুন: তিন দশক আগে বসানো পুরনো জলের পাইপলাইন। সেই পাইপ মাটি খুঁড়ে তুলে ছাঁটাই লোহা হিসেবে সকলের অলক্ষ্যে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খড়গপুর পুরসভায়। এই পাইপের আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। খড়্গপুর পুরসভার পুরপ্রধান এই অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত খড়গপুর পুরসভার জলের পুরনো পাইপলাইন জেসিবি দিয়ে মাটি খুঁড়ে তুলে ফেলা এবং সেই পাইপলাইন তুলে নিয়ে যাওয়ার কিছু ভিডিও ফুটেজ সম্প্রতি দৈনিক স্টেটসম্যানের হাতে আসে। ৯০-এর দশকে প্রথম কংসাবতী জল প্রকল্পের ওভারহেড ট্যাংক খড়্গপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি হয়। কংসাবতী থেকে তোলা জল পাইপলাইন করে খড়গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত ঝরিয়ায় আসে পুরসভার আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভারে। সেই রিজার্ভার থেকে জলের পাইপলাইন ১৬ নং জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে গিয়েছে। বরগাই-এর কাছে ওই পাইপ লাইন থেকে দক্ষিণ দিক বরাবর একটি পাইপ লাইন বসানো হয় দেবলপুরের ওভারহেড ট্যাংকার অবধি।
পুরসভার ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অপূর্ব ঘোষ জানান, মাস ছয়েক আগে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে বরগাই থেকে দেবলপুর পর্যন্ত নতুন পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু পুরনো পাইপলাইন তুলে ফেলার কোনও সিদ্ধান্ত বোর্ড মিটিংয়ে নেওয়া হয়নি। বোর্ড মিটিং-এ গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন পাইপলাইন বসানো হয়। নতুন পাইপ লাইনের সঙ্গে ওভারহেড ট্যাংকার জুড়ে যাওয়ার পর লোকসভা নির্বাচনের পর্ব মিটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো পাইপলাইন তুলে ফেলার কাজ শুরু করে কিছু অসাধু ব্যক্তি। দেবলপুর থেকে পুরসভার আবর্জনা ফেলে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবধি প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য পুরসভার আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এই অসাধু ব্যক্তিরা পাইপ লাইন তোলার পরেই সেই জায়গায় আবর্জনা ফেলে রাস্তার কাজ করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। সাব্বির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে জানান, ভোলা সিং-এর প্লট থেকে কাসট আয়রণ পুরনো জলের পাইপলাইন তুলে ফেলা হচ্ছে।
পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ জানান, পুরনো পাইপ তুলে ছাঁটাই লোহা আকারে নিলাম করার কোনও সিদ্ধান্ত পুরসভার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। আমরা স্থানীয় কিছু মানুষের অভিযোগ পেয়েছি। উপপুরপ্রধান তৈমুর আলী খানকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি। অন্য কোনও পাইপ তোলা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখে নিতে বলেছি। স্থানীয় কাউন্সিলর ফিদা হোসেনকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুরপ্রধান বলেন, কাউন্সিলারকে জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, ওই কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জলের পুরনো পাইপলাইন চার নম্বর ওয়ার্ডে এক ছাঁটাই লোহার ব্যবসায়ীকে বিক্রি করছে অসাধু ব্যক্তিরা।
পাইপলাইন তুলে ফেলা প্রসঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলর অপূর্ব ঘোষ বলেন, কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই কিভাবে পুরনো জলের পাইপলাইন তুলে ফেলে বিক্রি হচ্ছে, সে বিষয়ে পুরসভায় খোঁজ নেব। ঘটনার সত্যতা থাকলে পুরসভার নিয়ম মেনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজেপি কাউন্সিলর অনুশ্রী বেহেরা বলেন, দেবলপুরের পুরনো পাইপলাইন তুলে বিক্রি করা হবে এরকম কোনও সিদ্ধান্ত মিটিংয়ে গৃহীত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে তৃণমূলের আমলে বোর্ড মিটিং-এ যা আলোচনা হয়, তা নথিভুক্ত হয় না। যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি, সেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নথিভুক্ত হয়েছে বলে দেখতে পাই।