বারাসত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অভিনব চিন্তাতে ভর করেই এবার বিরাট মার্জিনে জয় কাকলির

নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত– বুথফেরত সমীক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সারা বাংলা জুড়েই কার্যত বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র কাকলি-গড় বারাসত। বারাসতের মাটিতে তৃণমূলের ইতিহাস অত্যন্ত গর্বের। গত তিনবারের লোকসভা নির্বাচনের মতোই এবারও বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে চতুর্থবার বারাসতের সাংসদ হয়েছেন ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। আর তাঁর এই জয়ের পথকে মসৃণ করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ১ লক্ষের বেশি লিড নিয়ে এবার জয়ী হয়েছেন কাকলি। তাঁর এই জয়ের পেছনে অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে “বার বার চার বার” স্লোগান তথা থিম সং। বারাসত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফ থেকে গৃহীত উদ্যোগগুলি কাকলির নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। নির্বাচনী প্রচারেও যে কতটা অভিনবত্ব আনা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্রবৃন্দ।

উল্লেখ্য, কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফ থেকে গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন বারাসত শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি কৌশিক কর্মকার এবং বারাসত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি সোহম পাল। তাঁদের উদ্যোগেই কখনও শহরের কোনায় কোনায় লাগানো হয়েছে অভিনব ফ্লেক্স, আবার কখনও নির্মিত হয়েছে মন ছোঁয়া ‘থিম সং’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এবার নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশিত হওয়ার আগেই ব্রিগেডের ময়দান থেকে নিজ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। সেই সন্ধিক্ষণেই কোমর বেঁধে রাজনৈতিক ময়দানে নেমে পড়েছিল বারাসত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কাকলি ঘোষ দস্তিদার বারাসতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হতেই বারাসতবাসীকে মিষ্টি মুখ করিয়ে নির্বাচনী যাত্রাপথে পদার্পণ করেছিলেন ছাত্র যুবরা। সেদিনই বারাসত ডাকবাংলো মোড়ে ছাত্র সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচারের শুভ সূচনা করেন তাঁরা। সোহম পালের মস্তিস্কপ্রসূত “বার বার চার বার, বারাসতের অহংকার, কাকলি ঘোষ দস্তিদার” নামক থিম সং যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া ফেলেছিল।


তবে নির্বাচনী থিম সং মানেই কোনও সাদামাটা গান ছিল না। গানের লেখক সোহম পাল এবং মিউজিক ডিরেক্টর সুশান্ত মজুমদার প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, একটি নির্বাচনী সঙ্গীতও কতটা মনোরঞ্জক হতে পারে। একাধিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, মন ছোঁয়া কণ্ঠস্বর, অসাধারণ সুর, সব মিলিয়ে গানটি একেবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটিই ছিল এবারের নির্বাচনে বাংলায় কোনও প্রার্থীর জন্য তৈরী হওয়া প্রথম নির্বাচনী সঙ্গীত। যা প্রশংসিত হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছেও। কাকলির রোড শো থেকে জনসভা প্রত্যেকটিতেই এক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিল এই থিম সংটি।

সোহমের ভাষায়, “নির্বাচনী সঙ্গীতটিই ছিল এবারের নির্বাচনী প্রচারের ইউএসপি।” অন্যদিকে এবারের নির্বাচনী প্রচারের অপর এক উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ ছিল থিম ভিত্তিক দেওয়াল লিখন এবং উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ‘দশভুজা কাকলি’র ফ্লেক্স। এগুলি প্রত্যেকটিই ছিল ছাত্র পরিষদের মস্তিস্কপ্রসূত। মূলত এই “বার বার চার বার”-এ ভর করেই চালানো হয়েছিল নির্বাচনী প্রচার। সেটি ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’ হোক কিংবা লিফলেট বিলি, দেওয়াল লিখন হোক, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার। নির্বাচনী প্রচার চালানো থেকে নমিনেশন ফাইলিং, প্রার্থীর এজেন্ট হওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সোহম পাল। তাঁর নেতৃত্বে গোটা ছাত্র পরিষদ।

সুতরাং, কাকলির বিরাট মার্জিনে জয়ের পেছনে যে অন্যতম কারিগর ছিলেন এই ছাত্রবৃন্দ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছাত্র পরিষদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম এবং তৎপরতা প্রশংসিত হয়েছে নবনির্বাচিত সাংসদ কাকলির কাছেও। ছাত্র-যুবদের সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং তাঁদের মস্তিস্কপ্রসূত অভিনব চিন্তার প্রতিফলন যেন বারাসতের রাজনীতিতে এক নজির গড়েছে।