এবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও সক্রিয়তার সাম্প্রতিক মামলাগুলি বিচারপতি সিনহার পরিবর্তে শুনবেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ

মোল্লা জসিমউদ্দিন: আগামী সোমবার থেকে কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশের অতিসক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানির দায়িত্বে থাকছেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। ফলে ঢোলাহাট থানার রহস্য মৃত্যু মামলার শুনানি এবার হবে তাঁর (বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ) বেঞ্চেই। চলতি সপ্তাহে পুলিশের অতি সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা মামলাগুলি থেকে সরানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে। তবে পুরাতন মামলাগুলি তিনি (বিচারপতি অমৃতা সিনহা) শুনবেন।

জানা গিয়েছে, বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে শুধুমাত্র ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যেকার মামলাগুলি শোনারই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিককালে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে সমস্ত মামলা দায়ের হয়েছে, সেগুলি থেকে। বাড়তি সংযোজন হিসাবে প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানির দায়িত্ব গেল বিচারপতি সিনহার এজলাসে।

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি হিসাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতদিন প্রাথমিক স্কুল সংক্রান্ত মামলাগুলি তিনিই শুনতেন। এবার সেই মামলা যাবে বিচারপতি সিনহার এজলাসে। মনে করা হচ্ছে, টেটের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানিও বিচারপতি সিনহার এজলাসেই হবে। এক বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণেই সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত ১০ জুন কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতিদের একাংশের রোস্টার পরিবর্তন করেছে। গরমের ছুটির পরে হাইকোর্টে নতুন রোস্টার মেনেই শুনানি হচ্ছে।


বিচারপতিদের রোস্টার পরিবর্তন করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের অতিসক্রিয়তা বা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানির দায়িত্ব পেয়েছেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। ২০২২ সালের পর থেকে পুলিশের অতিসক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা বিষয়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলি শুনবেন বিচারপতি ভরদ্বাজ।

প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে বিচারপতি অমৃতা সিনহার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। পুলিশ সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে বিচারপতি অমৃতা সিনহার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মামলাকারীরা। বিচারপতি নিরপেক্ষ রায় দিতে পারবেন কিনা? সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেই মামলাকারী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়, বিচারপতির সিনহার স্বামীর বিরুদ্ধে একটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। পরবর্তীতে সেই মামলায় বিচারপতির নামও জড়িয়ে যায়। এই আবহে তাঁর এজলাস থেকে পুলিশ সংক্রান্ত বিচারের দায়িত্ব সরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছিল।

যদিও বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতি অমৃতা সিনহার নিরপেক্ষতা নিয়ে মামলা করায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাস ওই জনস্বার্থ মামলাকারীর কড়া সমালোচনা করেছিল। সেই মামলাও আর শোনেননি প্রধান বিচারপতি। তবে তারপর একমাস ঘুরতে না ঘুরতেই বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে সাম্প্রতিক পুলিশের অতিসক্রিয়তা বা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলির থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। পরিবর্তে বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে আসছে বাড়তি কিছু মামলা।

এতদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে থাকা প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির ২টি মামলার শুনানি হত বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে। এবার থেকে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে থাকা মামলাগুলিরও শুনানি হবে বিচারপতি সিনহার এজলাসে। সঙ্গে থাকছে জবরদখল ও বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মমলাগুলি। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে ইডি। বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় তাঁর নির্দেশে মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।

উল্লেখ্য, হাইকোর্টে কোন ধরণের মামলার শুনানি কোন বিচারপতির এজলাসে হবে? তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র রয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির। বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করতে পারে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট।