নিজস্ব প্রতিনিধি— দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের নির্বাচনে এবার বামেদের দাপটে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত আরএসএস’এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)৷ ছাত্র সংসদের নিবাচনের ফলাফলে জানা গিয়েছে, জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন বাম যুক্তফ্রন্টের আইসা প্রার্থী ধনঞ্জয়৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি’র প্রার্থী উমেশ চন্দ্র আজমিরাকে তিনি পরাজিত করেছেন ৮২২ ভোটে৷ ধনঞ্জয় পেয়েছেন ২৫৯৮ ভোট, আর উমেশচন্দ্র পেয়েছেন ১৭৬৭টি ভোট৷
ছাত্র সংসদের সহসভাপতি পদে বাম যুক্তফ্রন্টের এসএফআই প্রার্থী অভিজিৎ ঘোষ পেয়েছেন ২৪০৯ ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবিভিপি’র দীপিকা শর্মা পেয়েছেন ১৪৮২ ভোট৷ অভিজিৎ জয়ী হয়েছেন ৯২৭ ভোটে৷
সাধারণ সম্পাদক পদে বাম-যুক্তফ্রন্টের বাপসা (বীরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) প্রার্থী প্রিয়াংশী আর্য ২৮৮৭ ভোট পেয়ে ৯২৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি’র অর্জুন আনন্দ পেয়েছেন ১৯৬১ ভোট৷ আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বাম যুক্তফ্রন্টের এআইএসএফ প্রার্থী মহম্মদ সাজিদ পান ২৫৪১ ভোট৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি’র গোবিন্দ দাসি পান ২০৬৬ ভোট৷ এই পদও বামেরা দখল করেছেন ৫০৮ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে৷
উল্লেখ্য, জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদ নিবাচনে এই প্রথম কোনও দলিত ছাত্র নেতাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হলো৷ প্রায় ৩০ বছর পর কোনও দলিত ছাত্র নেতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হলো৷
কে এই ধনঞ্জয়? তিনি বিহারের গয়ার বাসিন্দা এবং জেএনইউ-এর স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড এসথেটিক্স বিষয়ের গবেষণারত ছাত্র৷ ধনঞ্জয় পড়াশোনা করেছেন এবং বড় হয়েছেন রাঁচিতে৷ সেখানে প্রথমে তিনি আরএসএস’এর সঙ্গে যুক্ত সরস্বতী শিশু বিদ্যামন্দিরে পেছেন৷ পরে দিল্লিতে পড়াশোনা করতে এসে প্রগতিশীল নাট্যচর্চা গোষ্ঠীর সঙ্গে নাটক করতে থাকেন এবং বুঝতে পারেন যে, রাঁচিতে তাঁর স্কুলের পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে হিন্দুত্ববাদকে ঢোকানো হচ্ছিল৷
এরপর সচেতনভাবে এবং পরিবারের সম্মতিতেই ধনঞ্জয় তাঁর পদবি ত্যাগ করেন, যাতে তাঁর নাম শুনেই তাঁকে কোনও ‘জাত’ দিয়ে বিচার করা না হয়৷ পথনাটক করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে, এর মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনা বা প্রতিবাদ প্রকাশ করতে পারছেন৷ তিনি দক্ষিণপন্থী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তাই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামতে প্রস্ত্তত হন এবং জয়ীও হয়েছেন৷
ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ফল প্রকাশ হলে দেখা যাচ্ছে এবার ৭৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছেন৷ সাম্প্রতিক অতীতে এরকমটা দেখা যায়নি৷