পরিস্থিতি নজরদারির অনুরোধে হেমন্তকে ফোন মমতার
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা ব্যতীত ডিভিসির হঠাৎ জল ছাড়ার পরিকল্পনা রাজ্যে ইতিমধ্যেই বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি শনিবার ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকেও জল ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় চিন্তামগ্ন হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলার বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বা ‘মনুষ্যসৃষ্ট’ বলেও দাবি করেছেন মমতা। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবারই পড়শি এবং বন্ধু রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে কি কথা হয়েছে দুই মুখ্যমন্ত্রীর? সেই বিষয়টি মমতা নিজেই জানিয়েছেন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে। দুপুর দেড়’টা নাগাদ করা ওই পোস্টে মমতা লিখেছেন, “ঝাড়খণ্ডের জলে ইতিমধ্যেই বানভাসি হতে শুরু করেছে বাংলা। আমার সঙ্গে হেমন্তজির এই মাত্র কথা হল। আর এই বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবেই মানবসৃষ্ট। আমি ওঁকে অনুরোধ করেছি যাতে উঁনি দয়া করে এই পরিস্থিতি সামলে দেন।”
মমতা জানিয়েছেন, তিনি বাংলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁর কথায়, “তেনুঘাট থেকে হঠাৎ বড় পরিমাণে জল ছাড়ার বিষয়ে আমার সঙ্গে হেমন্তজির কথা হল। ওঁকে জানালাম, ওই জল বাংলাকে ভাসাতে শুরু করেছে।” পাশাপাশি বাংলার পরিস্থিতির তদারকি বিষয়ে বিশেষ বার্তা দিয়ে মমতা লিখেছেন, “আমি ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজেও পরিস্থিতির তদারকি করছি। জেলাশাসকদের আগামী ৩-৪ দিন সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বুঝে জনসাধারণের বিশেষ যত্ন নিতে বলা হয়েছে। কোথাও যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
শনিবারই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল নবান্ন। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি। যা রাজ্যের মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এর পরেই শনিবার ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকেও জল ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে জল এসে জমা হয় পাঞ্চেতে। রবিবার বাধ্য হয়েই পাঞ্চেত থেকে বাড়তি জল ছাড়তে হয় বলে জানান আধিকারিকেরা। ডিভিসি সূত্রের খবর, রবিবার সকালে মাইথন জলাধার থেকে ছ’হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
অন্যদিকে পাঞ্চেত জলাধার থেকে এদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত নতুন করে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি জলাধারের জল জমা হয় দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারাজে। জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, নিম্নচাপ বলয় বাংলা থেকে খানিক সরে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের উপরে অবস্থান করছে। তার প্রভাবে ঝাড়খণ্ডেও বৃষ্টি চলছে। সেখানকার তেনুঘাট জলাধার থেকে শনিবার দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। রবিবার সকালেও জল ছেড়েছে তেনুঘাট। একদিকে ডিভিসি, অন্যদিকে তেনুঘাট উভয়ের জেরেই বাংলা ডুবতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোল, বর্ধমান এই চার জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারেও জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। এই নিয়ে শনিবার নবান্নের তরফে জেলার প্রশাসনকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়। সেই সঙ্গে ডিভিসিকেও কড়া বার্তা দিয়েছিল নবান্ন। এবার পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই সরাসরি হেমন্তর সঙ্গে কথা বললেন মমতা।