বাসুদেব ধর, ঢাকা, ১ আগস্ট: জামায়াতে ইসলামি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে জামায়াতের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনও নিষিদ্ধ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার
বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল থেকে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছিল। অবশেষে এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামি, ছাত্রশিবির ও
তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হল।
আজ দুপুরে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনি মতামত পাঠানোর পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামি, ইসলামি ছাত্রশিবির এবং তাদের সংশ্লিষ্ট সব সংগঠন আর এই নামে রাজনীতি করতে পারবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে ব্যাপকভাবে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত- শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামি লিগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও
ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হল।
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে
যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামির বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হলেও পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, এ বিষয়ও তারা এগিয়ে নেবেন। তিনি গত মঙ্গলবার বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামি দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ করেছে। সেই সময়ের দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার করার ব্যাপারেও সরকার এখন উদ্যোগ নেবে। সেজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্যও তারা পদক্ষেপ নেবেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার, কোনও ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবার নিয়ে দলটি চারবার নিষিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অন্য তিনটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে স্বাধীন বাংলাদেশে
প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াত। দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রসংঘও নাম পরিবর্তন করে ইসলামি ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে।
জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই মতামত পাঠানোর পর দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর এই দলের অধীনে ও এসব নামে রাজনীতি করতে পারবে না।
জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামি/জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়া এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
আপিল বিভাগ ওই রায়কে বহাল রেখেছেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামি ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে যে জামায়াতে ইসলামি, শিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত
রয়েছে।