‘এটিই কি এগিয়ে বাংলার নিদর্শন?’ ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ সুকান্তর

নিজস্ব প্রতিনিধি– বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়ে নবনির্বাচিত সাংসদ হয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বও। এই পরিস্থিতিতে ভোট পরবর্তী হিংসায় বাংলা উত্তাল হয়ে ওঠার খবর পেতেই দিল্লি থেকে বঙ্গে ছুটে এসেছেন নব দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারত সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন ও শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করে, রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সুকান্ত। এদিন শুরুতেই তিনি বলেন, “ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের বহু দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মার খেয়েছেন। মন্ত্রীত্ব নেওয়ার পর অনেক বিষয় বোঝার এবং জানার থাকে। সেসব বাদ রেখেই আমি বাংলায় ফিরে এসেছি। আমি রবিবারই জয়নগর যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে আমাদের আহত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য এবং এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।” এরপরই তৃণমূল তথা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুকান্ত। তিনি বলেন, “ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্যে ভয়ঙ্কর অবস্থা। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। বসিরহাটেও ভয়ঙ্কর অবস্থা। কেন্দ্রীয় বাহিনী কে চুপ করে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। তৃণমূল যদি মনে করে এভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে ছাব্বিশের নির্বাচনে ফের জিতে যাবে, তাহলে তৃণমূল নেতৃত্বরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়ে তৃণমূল কে পরাজিত করবে। ২৮ টি রাজ্যে ভোট হয়েছে, কোথাও কোনো ইট পর্যন্ত পড়েনি। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন ব্যতিক্রম হবে? এটিই কি এগিয়ে বাংলার নিদর্শন?”
ভোট মিটতেই প্রকাশ্য শুটআউটের ঘটনা ঘটছে শহর কলকাতা থেকে বসিরহাটে। এই প্রসঙ্গেই সুকান্ত তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “প্রকাশ্য শুটআউটের ঘটনা প্রমাণ করছে রাজ্যে ল এন্ড অর্ডার নেই। এই ঘটনা গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে, নব্বই দশকে মুম্বাইতে দাউদ ইব্রাহিমের যে একটি তোলবাজির ৱ্যাকেট ছিল, তার কথা। ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হত, সেই ঘটনাই এবার কলকাতায় ঘটছে। আর এই অপরাধ রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার হয়ে দেখছে কারণ পুলিশের উচ্চস্তর এর থেকে উপকৃত হয়।” নিট পরীক্ষার দুর্নীতির জের অব্যাহত, এই পরিস্থিতিতে নিট পরীক্ষার দায়ভার রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁকেই কটাক্ষ করে সুকান্ত বলেন, “যেই শিক্ষা দফতর সুষ্ঠ ভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা চালাতে পারেনা, নিট চালাবে কি করে!” বৃহস্পতিবার ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত প্রায় ২০০ জনকে নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তাঁদের পুলিশ ঢুকতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এবার সেই প্রসঙ্গ টেনেই সুর চড়ান সুকান্ত। তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় যে রাজ্যপালের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া হলো না। কারণ দেখানো হলো ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাহলে তৃণমূল যখন ধর্ণা মঞ্চ করে ধর্নায় বসেছিল তখন ১৪৪ ধারা কোথায় ছিল? এইভাবে তৃণমূল কর্তৃক গণতন্ত্রকে হত্যা করার যে প্রচেষ্টা, সেটা গোটা বাংলা তথা দেশ দেখছে এবং বাইরের লোকেরা হাসছেন।”
পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসতে চলেছে বিজেপির ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ৪ সদস্যের দল গঠন করেছেন খোদ বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। এই বিষয়টিই এবার স্পষ্ট করলেন সুকান্ত। তিনি বলেন, “চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের আহ্বায়ক হয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা লোকসভা নির্বাচনে ওই রাজ্য থেকে জয়ী বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব দেব। এছাড়া থাকবেন জয়ী বিজেপি প্রার্থী রবিশংকর প্রসাদ, ব্রজলাল ও কবিতা পাতিদার। দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লোকসভা ভোট হয়েছে। ২টি রাজ্যে ক্ষমতায় পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কোথাও কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেনি। তাই এই রাজ্য পরিদর্শনে আসছে প্রতিনিধি দল। সঠিক তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে, সামনের সপ্তাহেই আসছে এই দল।” নির্বাচনে জেতার ‘সেটিং তত্ত্ব’ নিয়েও এবার মুখ খোলেন সুকান্ত। তিনি বলেন, “তৃণমূল যে ২৯টি আসন জিতেছে, বাস্তবে এই অবস্থা তাঁদের নেই। আইপ্যাকের কার্যকারিতা ছিল। তৃণমূলের ভেতরেই এতো বড়ো ফাটল! আগামীদিনে এই দল কতদূর যেতে পারবে, সেই নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”