‘জগন্নাথদেবও নাকি ওঁর ভক্ত, তা হলে মন্দিরে থাকুন, পুজো করব’

অশোকনগরে মোদিকে খোঁচা মমতার

প্রশান্ত দাস: মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই জোড়া জনসভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের৷ বসিরহাটের সভা শেষ করেই তিনি পৌঁছে যান হাবড়ার অশোকনগরে৷ সেখানে বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সমর্থনে আয়োজিত জনসভা থেকে দফায় দফায় মমতা আক্রমণ শানান বিজেপিকে৷ একই সাথে বিঁধেছেন সিপিএমকেও৷ স্বামী বিবেকানন্দ এবং ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি বিক্রি নিয়ে সরব হন বিজেপির বিরুদ্ধে৷ তিনি বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল৷ খবর পাওয়া মাত্র একদিনের মধ্যে আমি পুরসভাকে দিয়ে ওই বাড়িটি কিনিয়ে দিয়েছিলাম৷ রাজ্য সরকারের টাকায়৷ কারণ তখন আমাদের পুরসভা ছিল৷ বাগবাজারে সিস্টার নিবেদিতার বাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছিলো সেটাও রাজ্য সরকারের টাকা দিয়ে আমি কিনিয়ে দিয়েছি৷” সম্প্রতি প্রভু জগন্নাথ দেবকে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভক্ত বলায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ এবার এই ইসু্যকেই হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, “জগন্নাথ দেবও নাকি ওঁনার ভক্ত! বুঝুন, ভগবানের থেকেও বড়? তাহলে আপনি মন্দিরে থাকুন৷ আমরা ফুল, চন্দন, তুলসী পাতা দিয়ে আপনাকে পুজো করবো৷”

অশোকনগর থেকে সিপিএমকে কড়া ভাষায় আক্রমণ মমতার৷ পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে দেন, ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল থাকলেও, বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের সহাবস্থান নেই৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিজেপি নোংরা পার্টি৷ সঙ্গে জুটেছে সিপিএম৷ হাবড়ায় শুনছি মিছিল মিটিং করছে, বালু নেই বলে৷ কিন্ত্ত কোন সিপিএম? যারা হাত, নাক, কান কেটেছে? বালিগঞ্জে ১৯ জন আনন্দমার্গীকে পুডি়য়ে মেরেছে৷ আমাকে রাস্তায় ফেলে মাথা চৌচির করেছিল এই সিপিএম দল! হাজার হাজার লোক খুন করেছিল এই সিপিএম৷ ভুলে যাবেন না, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে আজও বহু লোকের খোঁজ নেই৷ তাপসীকে পুডি়য়ে মেরেছিল৷ যাঁরা সিপিএম করত, তাঁরাই বিজেপি করে৷ রাম, বাম একই কাজ করে৷ ইন্ডিয়া জোটে আছি৷ জিতিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় আনব৷ কিন্ত্ত বাংলায় ওঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না৷ বাংলায় ওরা বিজেপিকে তুলে দেয়৷ ওদের ভোট দিয়ে কী লাভ? খায় না মাথায় দেয়? ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে নতুন হাসপাতাল করেনি৷ আমরা ৪২টি নতুন হাসপাতাল করেছি৷ আজ ৪০-৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷” এদিন এসএসসি প্রসঙ্গে ‘চাকরিখেকো বাঘ’ বলে কটাক্ষ বিজেপিকে৷ একই সঙ্গে আক্রমণ শানান সিপিএমকেও৷ নাম না করে সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্যকে নিশানা করে তিনি বলেন, “বিজেপির সঙ্গে জুটেছে সিপিএমের দু তিনটে অপদার্থ৷ আমরা করলে কিল, আর ওঁরা করলে পিল৷ ছাত্রছাত্রীদের চাকরি খেয়ে টাকা রোজগার করছে৷ নির্লজ্জ! আজ আমি যদি কোর্টে দাঁড়াই, গরিব মানুষ বিপদে পড়লে, আমি কি টাকা নেব? এঁরা রাজনীতিও করবে, বিধায়ক-সাংসদও হবে আবার টাকা নিয়ে মামলাও করবে৷”


দেশটাকে বিক্রি করছে বিজেপি সরকার, দাবি মমতার৷ তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “দেশটাকে বিক্রি করে দিল এই বিজেপি সরকার৷ আজ আর ইছাপুর ফ্যাক্টরিতে বন্দুক তৈরি হয় না৷ সব তৈরি হয় বিদেশে৷ ১০০ দিনের কাজে টাকা দেওয়ার টাকা নেই৷ আমাদের বলে চোর৷ এত টিম পাঠিয়েছে৷ একটা প্রমাণ দিতে পারেনি৷ আমরা ৪৩ লক্ষ বাডি় করে দিয়েছি৷ কর্মশ্রী প্রকল্প করেছি৷” সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়েও এদিন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন মমতা৷ তিনি বলেন, “আমি অনেক প্রধানমন্ত্রী দেখেছি৷ কিন্ত্ত এত অসত্য কথা বলার মতো মানুষ আমি দেখিনি৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মুসলিমরা নাকি তপশিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে৷ আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, এটা আমার প্রতিশ্রুতি মুসলিমরা আপনাদের গায়ে হাত দেবে না আর আপনাদের সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কোনো মুসলিমের নেই৷ আমারও সেই অধিকার নেই কারণ এটি সংবিধান প্রদত্ত৷” এর প্রসঙ্গেই তিনি আরও বলেন, “আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি মানুষ৷ আমিও হিন্দু পরিবারের ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে, কিন্ত্ত নিজ পরিচয় দিই না৷ কারণ আমি বিজেপির থেকে সার্টিফিকেট নিতে যাব না৷”

অশোকনগরে দাঁড়িয়ে উন্নয়নমূলক কার্যের খতিয়ান পেশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হিসেব দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, হাবড়া, অশোকনগরকে ধরলে আমাদের সরকার ৮৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে পানীয় জল প্রকল্প করছে৷ আংশিক উদ্বোধন করছে৷ পুরোটা হয়ে গেলে আরও তিনটি পুরসভা সুবিধা পাবে৷ পাঁচ লক্ষ মানুষ সুবিধা পাবেন এতে৷ অশোকনগরে গ্যাস উত্তোলন প্রকল্প হচ্ছে৷ তাতে কর্মসংস্থান হবে৷ অশোকনগরেও মেগা পাওয়ারলুম স্ট্রাকচার হচ্ছে৷ হবাড়ার জয়গাছিতে টেক্টটাইল হাব, বাণিপুর বিদু্যৎ প্রকল্প-সহ একাধিক প্রকল্প হয়েছে৷ হাবড়ায় ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে গডে় তোলা হয়েছিল৷

এদিনের অশোকনগরের জনসভায় মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী৷ সর্বশেষে প্রার্থী কাকলির হয়ে ভোট প্রার্থনা করে মমতা বলেন, ‘কাকলি আমার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী৷ অসমে গিয়ে মার খেয়েছিল৷ এদের মতো মহিলা চাই, যারা এগিয়ে যাবে৷ লড়াই করবে৷ এক নম্বরে ভোট দেবেন৷ যখন যেখানে যেতে বলি, ও যায়৷ খুব ভাল সাংসদ৷ মিথ্যেবাদী নেতাদের ছোঁবেন না৷ ওরা ৪৪৪ ভোল্ট৷’