মোল্লা জসিমউদ্দিন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বহু চর্চিত সন্দেশখালি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাদের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিল৷ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘সিবিআইয়ের তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে৷ জমির রেকর্ড নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কিছু অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে৷ আদালত আশা করে যে রাজ্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে৷ যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ নেই, তাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে মানতে হবে৷’ আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে কোনও এফআইআর যেন দায়ের করা না হয় এই মর্মে মহিলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷’ এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানুষের মনে আস্থা বাড়ানোর জন্য সিবিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে৷
নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে সিবিআইকে৷ মহিলাদের ভয় দূর করার জন্য প্রয়োজন হলে মহিলা আধিকারিক নিযুক্ত করবে সিবিআই৷’ রাজ্যের কাছে সিবিআই যদি কোনও নথি চায়, তাহলে রাজ্য সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে দেবে বলে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি৷ আগামী ১৩ জুন পরবর্তী রিপোর্ট পেশ করবে সিবিআই৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানিও ওইদিন ধার্য করা হয়েছে৷ একইসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে এই মামলায় যুক্ত হওয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিসিটিভি এবং এলইডি আলো লাগানো হয়েছে কি না? তা নিয়ে কোনও রিপোর্ট দেয়নি রাজ্য৷ তাহলে এটা ধরে নিতে হবে যে রাজ্য এই নির্দেশ পালন করেনি৷ রাজ্য যদি এটা না করে তাহলে কলকাতা হাইকোর্ট আদালত অবমাননার অভিযোগে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারে৷ যত দ্রুত সম্ভব সিসিটিভি এবং এলইডি আলো লাগাবার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে৷
উল্লেখ্য, সন্দেশখালি কাণ্ডে গত গত ১০ এপ্রিল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ জমি দখল, জমির চরিত্র পরিবর্তন, চাষের জমি ভেডি়তে পরিবর্তন করা, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই, এই মর্মে নির্দেশ দেয় আদালত৷ এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য৷ রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি পিছিয়ে যায়৷ জুলাই মাসে হবে সেই শুনানি৷
কিন্ত্ত সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে ‘মামলা বিচারাধীন আছে বলে কোথাও যেন কোনও তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ না থাকে৷’ সন্দেশখালিকাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই৷ সিবিআইয়ের তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে৷ রিপোর্ট দেখে মন্তব্য প্রধান বিচারপতির৷ জমির রেকর্ড নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কিছু অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে৷ আদালত আশা করে যে রাজ্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে৷ মন্তব্য প্রধান বিচারপতির৷ যেহেতু সিবিআই তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ নেই, তাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে মানতে হবে৷ স্পষ্ট জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি৷ এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জমির রেকর্ড নিয়ে একটা অভিযোগ এসেছে৷ সিবিআই-এর বক্তব্য রাজ্যের সহযোগিতা মিলছে না৷ এটা একটি গোপন রিপোর্ট৷ রাজ্য সহযোগিতা করবে এটা আদালত আশা করছে৷’ প্রধান বিচারপতি এও জানান, ‘এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত জেলাশাসক কোনও রিপোর্ট দেননি৷’ দ্রুত ওই নির্দেশ কার্যকর না হলে আদালত অবমাননা বলে ধরে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি৷ এদিনের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল সওয়াল করেন, ‘এখনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ মহিলারা এফআইআর করতে চাইছেন না৷ তাঁরা জানিয়েছেন তাঁরা এফআইআর করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে, এই ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷’
তখন অপর আইনজীবী বলেন, ‘মণিপুরে এই ধরনের সমস্যায় নতুন টিম গডে় দেওয়া হয়৷ মহিলা সিবিআই অফিসার নির্দিষ্ট করা যেতে পারে৷’ এদিন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের তরফেও আবেদন করা হয় মামলায় যুক্ত হওয়ার৷ তাদের সে আবেদনও গ্রহণ করা হয়৷ এদিনের শুনানির শেষে সন্দেশখালি মামলায় জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগে সিবিআইকে সাহায্য করতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় আদালত৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় সদস্যদের নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ ১৩ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে৷