• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

মুম্বই কংগ্রেসে অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে

মুম্বই কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব মঙ্গলবার এক চরম আকার নিয়েছে। বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের বিরুদ্ধে উর্মিলা মাতন্ডকারের এক চিঠি প্রকাশের পর।

উর্মিলা মাতন্ডকার (File Photo: Dinesh Parab/IANS)

মুম্বই কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব মঙ্গলবার এক চরম আকার নিয়েছে। বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী থেকে রাজনীতির আঙিনায় আসা উর্মিলা মাতন্ডকারের এক চিঠি প্রকাশের পর।

সম্প্রতি সমাপ্ত লােকসভা নির্বাচনে উমিলা মুম্বই উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। পরাজয়ের কারণ হিসেবে তিনি সঞ্জয় নিরুপমের অত্যন্ত আস্থাভাজন দুই সহযােগী সন্দেশ কোন্দভিলকর এবং ভূষণ পাতিলের বিপক্ষের সুবিধাকারী দল বিরুদ্ধ আচরণকেই দায়ী করেছেন।

দুই নেতার বিরুদ্ধে চিঠিটি উর্মিলা মুম্বই আঞ্চলিক কংগ্রেস কমিটির নেতা মিলিন্দ দেওরাকে লেখেন লােকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের এক সপ্তাহ আগে ১৬ মে। মিলিন্দ দেওরা মুম্বইতে দলের ভরাডুবির দায় নিয়ে গত রবিবার পদত্যাগ করেন।

উর্মীলা দুই নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের সঙ্গে যােগাযােগ, তাদের সঠিকভাবে পরিচালনার রসদ যােগানাের ব্যর্থতার সব দায়িত্ব চাপিয়েছেন। ঊর্মিলা তাঁর পরাজয়ের কারণ হিসেবে দুই নেতার বিরুদ্ধে সামগ্রিকভাবে অসহযােগিতা ও দল বিরােধী কাজের অভিযােগ করেছেন।

এপ্রিল মাসে শহরতলী বরিভলিতে দুই বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খারগে ও এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারকে নিয়ে যে নির্বাচনী সভার আয়ােজন করা হয়েছিল সেখানে বস্তুতপক্ষে প্রার্থী হিসেবে তাঁকে চরম অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন সভার আয়ােজক সংশ্লিষ্ট সঞ্জয় নি রুপমের দুই সহযােগী নেতা। এমনকী এরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য ওই দুই নেতা ঊর্মিলার পরিবারের সদস্যদের কাছেও অর্থের জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছেন। 

এছাড়া, নির্বাচনের প্রচারের জন্য কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ আহমেদ প্যাটেলের কাছে অর্থ চাওয়ার জন্যও উর্মিলার পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন বলেও তিনি অভিযােগ করেন।

মাতন্ডকার তাঁর চিঠিতে উত্তর মুম্বই জেলা কংগ্রেস সভাপতি অশােক সুত্রালেকেও কোনও পাত্তাই দিতে চাননি। তিনি অবিলম্বে ওই দুই কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য শাস্তির দাবিও জানান দলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।

তিনি আরও জানান, ওই নেতার সামগ্রিক অসহযােগিতা সত্ত্বেও তিনি নির্বচনের সময়ে সদর্থক সমর্থন লাভের জন্য দলের ভাবমূর্তি উন্নত করার সকল চেষ্টা করেছেন। মতন্ডকরের চিঠি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের জন্য সঞ্জয় নিরুপম দলের নেতা দেওরাকেই দায়ী করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সঞ্জয় নিরুপম তাঁর দুই সহযােগীর বিরুদ্ধে লােকসভা নির্বাচনের প্রার্থী মাতন্ডকারের সঙ্গে অসহযােগিতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশক চিঠি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করায় দলের ভাবমূর্তিতে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন।

অন্যদিকে দেওরা জানিয়েছে, দল এবং দলের আদর্শের ওপরে নয় কোনও ব্যক্তি। এজন্য অস্বস্তিকর এবং অনভিপ্রেত যেকোনও সমালােচনা এড়িয়ে যাওয়াই দলের পক্ষে মঙ্গলজনক। কংগ্রেস দল এমন বহু ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে এসেছে এবং বর্তমান অস্থিরতাও কাটিয়ে উঠবে উল্লেখ্য দেওরা এবং সঞ্জয় নিরুপম দুজনেই দক্ষিণ মুম্বই এবং মুম্বই উত্তর পশ্চিম লােকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন। 

এদিকে মুম্বই কংগ্রেস সহ সভাপতি জাকির আহমেদ নিরুপমের সমালােচনায় মুখর হয়েছেন। এক বিবৃতিতে জাকির আহমেদ জানিয়েছেন, সঞ্জয় নিরুপমের মুম্বই কংগ্রেসে কোনও জনপ্রিয়তাই নেই। আবােল তাবােল বক্তব্যের জন্য কেউ তাঁকে পছন্দ করে না।

সাম্প্রতিক লােকসভা নির্বাচনে দলের শােচনীয় অবস্থাই তার প্রমাণ। মুম্বইতে কংগ্রেস প্রার্থীদের পরাজয়ে ভােটের ব্যবধান অনেকটাই কমেছে, কেবল সঞ্জয় নিরুপমের ছাড়া। নিরুপম যে কেন্দ্রের প্রার্থী ছিল সেই মুম্বই উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রে ২০১৪ লােকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর পরাজয়ে ভােটের ব্যবধান ছিল ১.৭৫ লাখ সেখানে সম্প্রতি সমাপ্ত লােকসভা নির্বাচনে সঞ্জয় হেরেছেন ২.৭৫ লাখ ভােটে।

এছাড়া, দেওরা মুম্বই আঞ্চলিক সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করায় নিরুপম মন্তব্য করে বসেন, ‘দেওরা জাতীয় কমিটিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্যই পদত্যাগ করেছে’। লােকসভা নির্বাচনের আগেই সঞ্জয়কে সরিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেওরাকে মুম্বই কংগ্রেস দলের প্রধানের পদে বসানাে হয়েছিল।

এছাড়া, মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন পর্যন্ত মুম্বই শাখার কাজের পর্যালােচনার জন্য তিনজন বরিষ্ঠ নেতাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের দেওরার প্রস্তাবেরও সমালােচনা করেন সঞ্জয়। সঞ্জয়ের মতে এমন উদ্যোগ দলের ভবিষ্যৎকে আরও শােচনীয় করে তুলবে।