বিজেপির দুই বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ কলকাতা হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন:  রাজ্যে ষষ্ঠ দফা নির্বাচনের আগে বড়সড় আইনি ধাক্কা খেল বঙ্গ গেরুয়া শিবির৷ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাস রাজ্যে বিজেপির বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল৷ আপাতত ওই নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন কোনও সংবাদমাধ্যমে দেওয়া যাবে না৷

এদিন বিচারপতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘যে কোনও ধরনের সংবাদমাধ্যমে এখন আর এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি৷ গত ৪, ৫, ১০ এবং ১২ মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল বিজেপি, সেই রকম কোনও বিজ্ঞাপন আর প্রকাশ করা যাবে না৷’ একটিতে ‘দুর্নীতির মূল মানেই তৃণমূল’, আর অন্যটিতে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ স্লোগান ছিল৷ বিজেপির জোড়া নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট৷ যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছে আদালত, ততদিন ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না কোনও সাংবাদমাধ্যমে৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য৷ শুধু মিটিং-মিছিল নয়, ভোটের প্রচারে এখন সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেয় রাজনৈতিক দলগুলি৷

বিজেপির দুটি বিজ্ঞাপনে আপত্তি জানিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল৷ সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে৷ আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে সুকান্তকে শোকজের জবাব দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন৷ তৃণমূলের অভিযোগ, প্রথমে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি৷ নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ সোমবার মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে৷ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায়, ‘কমিশনের যে পদক্ষেপ করার ছিল, সেই পদক্ষেপ করা হয়নি৷ নির্বাচনী বিধি না মেনে, অসম্মানজনক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল৷’ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে ‘সনাতন বিরোধী’ বলে তুলে ধরা হচ্ছে, তা নিয়ম বিরুদ্ধ৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর, বেঠিক ও অবমাননামূলক৷ এদিন কড়া নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘যে কোনও ধরনের সংবাদমাধ্যমে এখন আর এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি৷ বিজ্ঞাপন নিয়ে তৃণমূল যে অভিযোগ করেছিল তা নিয়ে যে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল কমিশন সেটা করেনি৷’


এই মামলার শুনানিতে বিজেপির পক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না৷ বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে এমন কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না’৷ লোকসভা ভোটের মাঝেই একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি৷ সেই বিজ্ঞাপন নিয়েই আদালতে মামলা হয়েছিল৷ সোমবার পঞ্চম দফা ভোট চলাকালীনই হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, এমন ধরনের কোনও বিজ্ঞাপন আর দিতে পারবে না বিজেপি৷ পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘তৃণমূল যে অভিযোগ করেছিল তার প্রেক্ষিতে আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল তাঁদের৷’

যদিও নির্বাচন কমিশন আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জবাবদিহি তলব করেছে৷ শুধু সংবাদমাধ্যমে নয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে অশালীন রাজনৈতিক প্রচার চলছে, তাতে নজরদারি চালাবার দাবি রেখেছেন অনেকেই৷