‘মাইক বন্ধ করে অপমান করা হয়েছে’, বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করে সরব মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, দিল্লি: বিরোধী শিবিরগুলি নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বয়কট করেননি। তিনি যোগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে শনিবার আয়োজিত নীতি আয়োগের বৈঠকে। কিন্তু সেই বৈঠকেই ‘অপমান’-এর শিকার হলেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, এমনই অভিযোগ করেছেন তিনি। তাই শেষমেষ বৈঠক থেকে ওয়াক আউটের সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমাকে পাঁচ মিনিটও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে।”

মমতার স্পষ্ট অভিযোগ, “অন্য কয়েকজনকে ২০ মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।”

মমতার দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ২০ মিনিট বলা সুযোগ পেয়েছিলেন। পাশাপাশি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও বলার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সময় তিনি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তাঁর মাইক বন্ধের ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলেও চিহ্নিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, “বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল।”


পাশাপাশি নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা নিজ অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “আমি বলেছি আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল। আমার আগে লোকেরা ১০-২০ মিনিট কথা বলেছিলেন। বিরোধী দল থেকে আমিই একমাত্র অংশগ্রহণ করেছিলাম। তবুও আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। বৃহত্তর স্বার্থে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এমন পক্ষপাতিত্ব অনুচিত। এটা অপমানজনক।” ক্ষুব্ধ মমতা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এরপরে নীতি আয়োগের কোনও বৈঠকে তিনি থাকবেন না। অথবা সরকারের কোনো বৈঠকে যোগ দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার দিল্লি রওনা হওয়ার পূর্বে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বলেছিলেন, “বৈঠকে থাকব কিছুক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব, ভয়েস রেকর্ড করতে দিলে করবো। আর না হলে প্রতিবাদ করে বেড়িয়ে আসবো। বাংলার হয়ে কথা বলব।” যেমনটা বলেছিলেন, ঠিকই তেমনই করলেন মমতা। শনিবার প্রমাণ হলো, মমতার অনুমানই সঠিক।

নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার পক্ষে জোরাল সওয়াল করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্ল্যানিং কমিশন যখন ছিল, রাজ্যের জন্য কাজ করত। নীতি আয়োগের কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই। এ কথা বলেছি। বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছি। দেশের স্বার্থে, বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনার প্রতিবাদে এই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলাম। বাংলা সহ সমস্ত বিরোধী রাজ্যগুলিকে বাজেটে বঞ্চনা করা হয়েছে। তিন বছর ধরে বাংলায় আবাস যোজনা, ১০০ দিনের টাকা আটকে রয়েছে। মোট ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া বাংলার। তারপরও বাজেটে শূন্য। এ কথা বলতে না বলতেই দেখলাম মাইক বন্ধ করে দেওয়া হল। আমার মাইক বন্ধ করা সমস্ত বিরোধী দলের অপমান। আরও অনেক কিছু বলার ছিল। তাই ওঁদের বলে এসেছি, এই বঞ্চনা আমি মানি না। মনে রাখবেন, আমি চললাম।”

কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি বিরোধীদের পক্ষ থেকে এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে এসেছিলাম। কেন্দ্র তা চায়না।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী— কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিংহ সুখু আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনায় প্রতিবাদে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কটের ঘোষণা করেছিলেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, আম আদমি পার্টির নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নও বৈঠক বয়কট করেন একই অভিযোগে। মমতা জানিয়েছিলেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বৈঠকে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনিও শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে গরহাজির ছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে ছিলেন না বিজেপির সহযোগী জেডিইউর প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও!