‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর তৃতীয় ভার্চুয়াল সামিটে সদস্য দেশগুলিকে বড়সড় অর্থনৈতিক লড়াইয়ে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এইসব দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রতিকূল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহবান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি এইসব দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের মূলত তিনটি বিষয়ে লড়াইয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, ১. খাদ্য সঙ্কট, ২. শক্তি নিরাপত্তা সমস্যা, ৩. সন্ত্রাসবাদ দমন। এজন্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীনা আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে এক ছাতার তলায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা কমাতেই এই উদ্যোগ ভারতের। সেজন্য গত ২০২৩ সালের প্রথম থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সামিট’-এর আয়োজন করে আসছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লোবাল সাউথের সব ক’টি সদস্য দেশই আর্থিকভাবে দুর্বল। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীন বিশ্বের মোট ১৬৫টি দেশকে ঋণ দিয়েছে। যেসব দেশগুলি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্যাটেগরির। এইসব দেশগুলিকে আর্থিক সহযোগিতার অছিলায় ঋণের জালে জড়িয়ে রেখেছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, চীনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে রাশিয়া। এর পরেই রয়েছে ভেনেজুয়েলা। এমনকি গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে ঋণের জালে জড়িয়ে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া দেশগুলির এখন অর্থনৈতিক নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, আগে থেকে যেসব দেশগুলি চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সঙ্কটে ছিল, তারা নতুন করে আবার অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। সেইসব দেশগুলিকে পুনরুদ্ধার বা বেল আউটের অছিলায় নতুন করে ঋণ দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের এরকম বেল আউট ঋণ নেওয়া দুটি শীর্ষ দেশ হল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আন্তর্জাতিক মহলে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে গৌরী সেনের ভূমিকা নিয়েছে চীন। আর সেই ঋণের ফাঁদে পা দিয়েই বিপদে পড়ছে এইসব দেশগুলি। চীন প্রথমে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির পুনর্গঠন ও উন্নয়নের গল্প ফেঁদে ঋণ নিতে প্রলুব্ধ করে। এবং বিভিন্ন শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে। এরপর চীনের আসল খেলা শুরু হয়ে যায়। এমনটাই অভিযোগ পাশ্চাত্য দেশগুলির। চিনের দেওয়া বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন বিশ্বের জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি। এভাবে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের (আইএমএফ) প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় নামতে চলেছে চীন।
তবে মোদি ঠিক কী উপায়ে চীনের অর্থনৈতিক ঋণের ফাঁদ থেকে এই দেশগুলিকে বাঁচাতে চাইছেন? মোদির পরিকল্পনা অনুযায়ী, এইসব দেশগুলিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে ভারত। সেজন্য এইসব দেশগুলিকে অর্থনৈতিক অনুদানও দেওয়া হবে। তাদের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একাধিক আর্থিক তহবিল গঠনেরও ঘোষণা করেছে ভারত। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির ডিজিটাল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এজন্য তাদের সামাজিক প্রভাব তহবিল অর্থাৎ সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ফান্ডে মোদি প্রথম পর্যায়ে ২০৯ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এবিষয়ে তিনি স্পষ্ট করেছেন, সদস্য দেশগুলির গ্লোবাল সাউথের সদস্য দেশগুলির উনন্নয়নই ভারতের একমাত্র উদ্দেশ্য। এই অনুদানের জন্য ভারত কখনও এই দেশগুলিকে আর্থিক ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেবে না। এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসও বিষয়টি নিয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। তিনি গ্লোবাল সাউথের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পক্ষপাতী বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত বর্তমানে গ্লোবাল সাউথ সামিটে ১৩৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১২৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এই অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান মুহাম্মদ ইউনুসও ভার্চুয়ালে উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবার চীন ও পাকিস্তান অংশগ্রহণ করেনি। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট জল্পনা বাড়িয়েছে। তবে শোনা যাচ্ছে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবারের এই সামিটে চীন এবং পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ না জানানোর কথা জানিয়েছেন।