দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সরকার গড়বে, আমরা সমর্থন দেব বাইরে থেকে : মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি— লোকসভা ভোট যত শেষের দিকে যাচ্ছে জোটের প্রসঙ্গ তত জোরালো হচ্ছে৷ একসময় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নামকরণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই জোটের বিরোধী নেতাদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত ‘ইন্ডিয়া’র সদস্য দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা না হওয়ায়, জোট নিয়ে একরকম নীরবই হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ লোকসভা ভোট যত এগিয়েছে ততই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে তৃণমূল যে যুক্ত রয়েছে, সেকথা বলতে শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে৷ বলেছেন দিল্লিতে জোট সরকার হলে তৃণমূল তার নেতৃত্ব দেবে৷ চতুর্থ দফা ভোট হয়ে যাওয়ার পরে নিজের অবস্থান আরও একটু স্পষ্ট করলেন নেত্রী৷ বুধবার হুগলির চঁুচুড়ার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়বে৷ সেই সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করবে তাঁর দল৷

চুঁচুড়ার সভা থেকে মমতা এদিন বলেন, চার দফায় যে ভোটগ্রহণ হয়েছে, তাতে বিজেপি পিছিয়েই গিয়েছে৷ বাকি তিন দফাতেও খুব বেশি সুবিধে করতে পারবে না মোদি সরকার৷ মমতার কথায়, অনেকে জেতা নিয়ে ‘জুমলাবাজি’ করে অনেক কথা বলবে৷ কিন্ত্ত এই লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি থেকে বিদায় নেবে মোদি সরকার৷ ‘ইন্ডিয়া’ জোটই সরকার গড়বে৷ বাইরে থেকে সবরকম সাহায্য করে আমরা সরকার গড়ে দেব৷ যাতে আমাদের মা বোনেদের কোনও অসুবিধে না হয়৷ একশো দিনের কাজ এবং বাংলার নানা প্রকল্পে যাতে টাকা আটকানো না হয়৷

উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া’তে তৃণমূলের জোট সঙ্গী কংগ্রেস এবং সিপিএম এই রাজ্যে বিরোধিতা করে ভোটে লড়ছে৷ এই প্রসঙ্গে অবশ্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, তৃণমূল রাজ্যে মাত্র দু’টি সিট দিতে চেয়েছিল৷ তাই রাজ্যের কংগ্রেস-সিপিএম সমর্থন নিয়ে লড়ছে৷ অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সিপিএম প্রীতির জন্যই রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়নি তৃণমূলের৷


তবে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের (কংগ্রেস ও বাম) সঙ্গে আলাদাভাবে লড়লেও কেন্দ্রে ইন্ডিয়া জোটের অস্তিত্ব নিয়ে যাতে কোনওরকম সংশয় না হয়, সেজন্য বুধবার জনতার উদ্দেশে মমতা বলেন, বাংলার সিপিএম-কংগ্রেসকে ধরবেন না৷ ওরা বিজেপির সঙ্গে রয়েছে৷ আমি দিল্লির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি৷ দিল্লিতে জোট সরকার এলে তৃণমূল বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে সরকার গড়ে দেবে৷

এদিকে বিজেপি জিতলেই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বন্ধ করা হবে, চালু করা হবে ‘অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার’৷ গেরুয়া শিবির থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই এরকম জল্পনা ছড়ানো হচ্ছে৷ এই জল্পনা উ‌ি.ড়য়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো প্রকল্প কোনওদিন বন্ধ হবে না৷ কোনও বিজেপির ঠাকুরদার ক্ষমতা নেই, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বন্ধ করার৷ ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এ কেউ হাত লাগালে খুন্তি, হাঁড়ি, কড়ার খেলা হবে৷ বাংলার মা বোনেরা জোট বাঁধলে ওদের বদলা নিতে বেশি সময় লাগবে না৷

এদিন নির্বাচনের প্রচারমঞ্চ থেকে সিএএ এবং এনআরসি ইসু্যতেও সুর চড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, চোর-ডাকাতদের নিজেদের ইচ্ছেমতো ওয়াশিং মেশিনে ভরছে৷ আর বাকি গোটা দেশটাকে জেলে ভরছে৷ নিজেরা দেশের টাকা লুট করছে৷ বিজেপির মতো চোর পার্টি আর নেই৷ সারা বিশ্ব বুঝতে পারছে, কী চলছে আমাদের দেশে৷

এরপর মমতা বলেন, বিজেপি বাংলাকে ভালোবাসে না৷ সন্দেশখালির চক্রান্ত দেখলেন তো? চক্রান্ত করে রেগে যাচ্ছে৷ যা খুশি করে জিততে চাইছে৷ ১৫ লক্ষ টাকা দেবে বলেও কিছুই দেয়নি৷ মমতা বলেন, সবসময় ভাঁওতা দেয়৷ আমি ওঁর নাম দিয়েছি ‘প্রচারবাবু’৷ নিজের প্রচার ছাড়া অন্য কিছু চায় না৷ যে কোনও পোশাক ছবি তোলেন আর সেটাই প্রচারে আনেন৷