লোকসভা নির্বাচনের মাঝেই মোদির বক্তব্যকে কটাক্ষ দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের

নিজস্ব প্রতিনিধি— ‘‘আমি আদি ভৌতিক সন্তান নয়৷ আমি ইশ্বর প্রদত্ত৷’’ সম্প্রতি এমনটাই বলতে শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে৷ খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ‘ইশ্বরের দূত’ দাবি করছেন! যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দেশীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন তিনি৷ চুপ নেই দেশের বিরোধী দলগুলিও৷ তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন সকলেই৷ পাশাপাশি, এই ধরনের মন্তব্য করে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে হাসির খোরাক করে তুলেছেন বলে দাবি করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ৷

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আরও একটা অংশ  বলতে শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন৷ আর ঠিক সেই কারণেই এই ধরনের মন্তব্য করছেন৷ তাছাড়া নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বধীন কেন্দ্র সরকার দেশের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থাকে হাতিয়ার করে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন৷ যা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সরব হয়েছে দেশের সমস্ত বিরোধী দলগুলি৷ বৃহস্পতিবার এই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে গর্জে উঠল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, কুন্তল ঘোষ, প্রাক্তন বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত, বর্ণালী মুখার্জীর মতো বিশিষ্টি ব্যক্তিরা৷

বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ২০১০ সালের পর অর্থাৎ তৃণমূল জমানায় জারি হওয়া পাঁচ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়েছে৷ যদিও এই শংসাপত্র দেখিয়ে যারা ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়েছেন বা চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না বলেই জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ৷ যা নিয়ে কামারহাটির নির্বাচনী সভা থেকে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও৷ কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি৷ এই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার বিষয়ে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চকে এদিন আওয়াজ তুলতে শোনা গেল৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ নিয়ে যে রায় দিয়েছেন, সেই মামলা ২০১৫ সালে আরএসএস করেছিল৷ তারাই দেশকে চালাতে চাই৷ বিজেপি বরাবারই সংরক্ষণ বিরোধী৷’’


পাশাপাশি, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশকে বলতে শোনা গিয়েছিল কর্মজীবন শেষে আরএসএসে যোগ দেওয়ার কথা৷ অন্যদিকে সদ্য বিচারপতি পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে৷ পদ্ম প্রতীকে তিনি লোকসভা ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে পড়েছেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে৷ সব মিলিয়ে বিচারপতিদের বিজেপি যোগ নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন সুমন ভট্টাচার্য৷ তাছাড়া দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও৷ দেশের ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে পাঁচ দফার ভোট গ্রহণ পর্ব৷ তবে প্রতিবারই ভোট গ্রহণের হারে ধরা পড়েছে গড়মিল৷ প্রাথমিকভাবে কমিশনের তরফ থেকে যে তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে, তার পরেই এসেছে ভিন্ন পরিসংখ্যান৷ এ নিয়ে অবশ্য দেশের শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনকে কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়েছে, সেই তথ্য জনসম্ম্ুখে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিল৷ যদিও আদালতের রায়কে কার্যত উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের সেই তথ্য জানার কোনও অধিকার নেই বলে জানিয়েছে কমিশন৷

অন্যদিকে বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অতিসক্রিয়তার প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে দেশের বিরোধী শক্তিগুলি৷ কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি, এই অভিযোগও নেহাতই কম নয়৷ এ বিষয়ে কুন্তল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি একটি ফ্যাসিস্ট দল৷ যারা নির্বাচন মানে না৷ শুধু মাত্র সংসদীয় রাজনীতির কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে৷ নির্বাচনের আগে বারংবার কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে তারা৷’’ একই সঙ্গে নোটবন্দি নিয়েও সরব হন তিনি৷ ২০১৬ সালের শেষভাগে রাতারাতি নোটবন্দি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র সরকার৷ লক্ষ্য ছিল দেশের সমস্ত কালো টাকা উদ্ধার করা৷ যদিও তাতে বিশেষ ফায়দা মেলেনি বলে পরে স্বীকার করে নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল,‘‘আমি ইশ্বর প্রদত্ত৷ আমার কোনও বিকল্প নেই৷’’ একই সঙ্গে তিনি নিজেকে বিশ্বগুরু বলেও দাবি করেছেন, যা আরএসএসের নীতির বিপরীত৷ এ বিষয়ে বর্ণালী মুখার্জী বলেন, ‘‘আরএসএস একদল, এক নেতাতে বিশ্বাস করে৷ মোদি নিজের হার বুঝতে পেরে এই সমস্ত কথা বলছে৷’’