ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ কেবল সময়ের অপেক্ষা, দাসপুর পরিদর্শনে সেচ দফতরের অধিকারিক

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা:  যেমন কথা তেমন কাজ! কেন্দ্র-রাজ্য দীর্ঘ টাল বাহানার পর অবশেষে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজের সূচনায় সবুজ সংকেত মিলতেই ময়দানে নেমে পড়েছেন সেচ দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ নিয়ে গত ১২ই জুন বুধবার দুপুরে সল্টলেকে জলসম্পদ ভবনে সেচ দফতরে বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা ব্যারাকপুরের নবনির্বাচিত সাংসদ পার্থ ভৌমিক এবং ঘাটালের নবনির্বাচিত সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব।

পাশাপাশি এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেচ দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। এদিনের প্রায় এক ঘন্টার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, ঘাটালের বন্যার জলের চাপ কমাতে দাসপুরের দুই সেচ খাল চন্দেশ্বর ও শোলাটোপা খালকে গভীর করে খনন করতে হবে। পরিকল্পনার ব্যতিক্রম কিছু ঘটল না। বৈঠকের ১০ দিনের মাথায় সেচ দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা শনিবার আসেন এই দাসপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খতিয়ে দেখেন তাঁরা। এছাড়াও সঙ্গে ছিলেন ঘাটাল দাসপুরের একাধিক শাসকদলের নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন জেলা সেচ দফতরের একাধিক আধিকারিক। প্রতিনিধি দলটি দাসপুরের চন্দেশ্বর খালের মুখ থেকে দাসপুরের সুরতপুর পর্যন্ত এলাকা খতিয়ে দেখে। প্রায় ৫ কিলোমিটার প্রস্তাবিত খাল কাটার বিষয়টি খতিয়ে দেখলেন প্রতিনিধি দল। যদিও কবে থেকে এই খননকার্য শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এর কাজ শুরু হবে, ১২ই জুনের বৈঠক শেষে এমনটাই জানিয়েছিলেন সাংসদ দেব এবং পার্থ। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান পাঁচ বছরের প্রজেক্ট, এটিও জানিয়ে দিয়েছেন সাংসদদ্বয়। কিভাবে সম্পন্ন হবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ? এই প্রশ্নের উত্তরে দেব জানিয়েছিলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী করতে হলে আমাদের ঘাটালের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিছু খাল কাটতে হবে, আবার কিছু খাল চওড়া করতে হবে। আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা ফিল্ডে থেকে আগে সবকিছু দেখে নেবেন। কিছুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জেসিবি ঢোকার জায়গা নেই, সেই অঞ্চলের মানুষদের বোঝাতে হবে। কিছু অতিরিক্ত জমিও লাগবে আমাদের। মূলত তিনটি ধাপে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে। পাম্পিং স্টেশনের জন্য দুটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজের প্ল্যান করতে ৪ মাস বা তার কিছুটা বেশি সময় লাগবে, তারপর টেন্ডার সম্পর্কিত কিছু কাজ রয়েছে। আশা করা যায়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী থেকে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”


এবারের লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালের প্রধান ইস্যু ছিল এই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। এই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকেই হাতিয়ার করে ভোটযুদ্ধের ময়দানে জয়ের মুকুট পড়েছিল তৃণমূল। এবার নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে বদ্ধপরিকর শাসকদল। তাই লোকসভা ভোটে ঘাটালে দেবের জয়ের পরেই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে শুরু হলো তোড়জোড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম এই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপর ঘাটালের এক নির্বাচনী প্রচারে দেব কে পাশে নিয়েই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ঘাটালবাসী কে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবেই। যত টাকা বরাদ্দ -এর প্রয়োজন, রাজ্য সরকারই তা করবে। সেই নির্বাচনী প্রচার থেকে অভিষেক এও বলেছিলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী না হওয়ায় দেব অভিমান করেই রাজনীতি থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁকে বুঝিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে রাজ্য সরকারই তা বাস্তবায়িত করবে।

প্রসঙ্গত চলতি বছরেই নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশের পূর্বে দেব রাজনীতি থেকে সরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেন তৃণমূল নেতৃত্বগণ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের গুজব রটলেও পরে জানা যায়, দেবের রাজনীতি থেকে সরে আসার অন্যতম কারণ ছিল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন না হওয়া। উল্লেখ্য, দেব তথা তৃণমূল বহুবার কেন্দ্রের কাছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন নিয়ে একাধিক চিঠি লিখলেও তার কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি, এমনটাই দাবি শাসকদলের। এদিকে প্রত্যেক বছরই বর্ষায় প্লাবিত হয় ঘাটাল, জলকষ্টে ভোগেন এখানকার মানুষেরা। তাই কেন্দ্রের কাছে আর ভরসা নয়, রাজ্য সরকারই বাস্তবায়ন করবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী খোদ। সেই সুখবর দেব কে জানানো হলে, তিনি পুনরায় ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বিপুল ভোটে জয়ীও হন তিনি। কথা মতো, জয়ের মুকুট পড়তেই মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে ও পরামর্শে নিজ দায়িত্ব পূরণে নেমে পড়লেন অভিনেতা তথা সাংসদ দেব।