• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

‘লেজ মোটা হলে কেটে দেবেন অভিষেক’, দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্কবাণী নারায়ণের

নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতৃত্বের ‘শুদ্ধিকরণ’ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এ বিষয়ে কড়া ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও। এবার মমতা-অভিষেকের কথার অনুরণন শোনা গেল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতৃত্বের ‘শুদ্ধিকরণ’ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এ বিষয়ে কড়া ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও। এবার মমতা-অভিষেকের কথার অনুরণন শোনা গেল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর কণ্ঠে। দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘সমঝে’ চলার পরামর্শ দিলেন তিনি। ‘লেজ মোটা হলে কেটে দেবেন অভিষেক’, সোজাসাপ্টা সতর্কবাণী নারায়ণের। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘অভিষেক ময়দানে নেমে পড়েছেন।’

প্রসঙ্গত রবিবার আমডাঙার আওয়াল সিদ্দি চৌমাথায় একটি রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে যোগ দেন নারায়ণ গোস্বামী। সেখানেই দলীয় নেতা-কর্মীদের কড়া ভাষায় পরামর্শ দেন তিনি। তবে ঠিক কী বলেছেন নারায়ণ? তাঁর ভাষায়, “সকলকে খারাপ বলছি না। দু’-একজন যদি এ রকম থাকেন, তাঁদের জন্য সতর্কবাণী। অভিষেক ময়দানে নেমে পড়েছেন। আপনি যদি মনে করেন, পাড়ার হোমরাচোমরা প্রধান হয়েছেন, লেজ ফুলে মোটা হয়ে গিয়েছে, কেউ কাটতে পারবে না, তা ঠিক নয়। অভিষেক কিন্তু কাঁচি দিয়ে লেজ কুচ করে কেটে দেবেন। মা বলার সময় পাবেন না। মানুষের অধিকার মানুষকে দিতে হবে।”

নারায়ণ এদিন জানিয়েছেন, বাগদায় বিধানসভা উপনির্বাচনের কাজে গিয়ে তিনি দেখেছেন, মানুষের দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বা দলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, “মানুষের মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নেই। কিন্তু কয়েকজন সাংগঠনিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধির উপর মানুষের রাগ।” নারায়ণের দাবি, কিছু জায়গায় মানুষ সরকারি জমি দখলের অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এসব আর চলবে না। বিধায়কের কথায়, “জমি দখল করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তৃণমূল মানে পরিষেবার প্লাটফর্ম। করে কম্মে খাওয়ার জন্য যাঁরা দলে রয়েছেন, তাঁদের দিন শেষ। আমার নেতা অভিষেক একথা বলেছেন। সুতরাং সমঝে যান।”

২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে তৃণমূলে শুদ্ধিকরণের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, “বিত্তবানদের নয়, বিবেকবানদের দল হতে হবে তৃণমূলকে। আমি দলে বিত্তবান লোক চাই না। বিবেকবান লোক চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই।” অর্থাৎ, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার যে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়ের নিদর্শন দেখা যাচ্ছে, মমতা সেদিকে আঙুল তোলেন। মমতা বলেছিলেন, “যত জিতব, তত নম্র হতে হবে।”

অন্যদিকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, “আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কথা দিচ্ছি, নির্বাচনে যাঁরা পঞ্চায়েত বা পুরসভার পদে থেকেও মানুষকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন বা যাঁদের এলাকা থেকে প্রত্যাশিত ফল হয়নি, তাঁদের বিরুদ্ধে ও একইভাবে আমরা টাউন সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে প্রধানের বিরুদ্ধে, অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।” পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক বিরতিতে থেকে কী করেছেন, তা জানিয়ে বলেন, “আমি দেড় মাস পর্যালোচনা করেছি। সেই পর্যালোচনার ফল আপনারা তিন মাসের মধ্যেই দেখতে পাবেন।”

সুতরাং, মমতা-অভিষেকের প্রচ্ছন্ন সতর্কবাণীতে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃণমূলের আপামর বদল চান তাঁরা। সেটি নির্বাচনে ঢিলেমি দেওয়ার অপরাধে হোক কিংবা জনসাধারণের সমস্যা না মেটাতে পারার অপরাধেই হোক, দলে থেকে যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দোষ করেছেন, তাঁদের রাজনৈতিক জীবনে খাঁড়া নামতে চলেছে। লোকসভা নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে বিধায়ক ও সাংসদদের কাছে ইতিমধ্যেই লিখিত রিপোর্ট চেয়েছেন অভিষেক। মমতার নির্দেশে নিষ্ক্রিয় দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন অভিষেক তথা দল। এক কথায়, কোনোভাবেই দলে ‘বিভীষণ’ রাখতে চাননা মমতা-অভিষেক।

সেই সূত্রেই নারায়ণের স্পষ্ট বার্তা, ‘অভিষেক ময়দানে নেমে পড়েছেন।’ একেবারে সোজাসাপ্টা প্রাক্টিক্যাল রাজনৈতিক নেতা অভিষেক। অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বগণের ভাষায়, ‘অভিষেক যা বলেন, তাই করেন।’ অভিষেকের সতর্কবাণীতে ইতিমধ্যেই রীতিমতো কাঁপছেন দলের নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা। তাই কখনও দেখা গিয়েছে, কাউন্সিলরগণ মমতার ছবি নিয়ে জনসাধারণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চাইছেন, আবার কখনও দেখা গিয়েছে কাউন্সিলরগণ অনুশোচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের দেওয়া নারায়ণের ‘সমঝে’ চলার পরামর্শ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ‘দলীয় দাদাগিরি’ বরদাস্ত করেন না তৃণমূল সেনাপতি, বরং তিনি মানুষের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এই বিষয়টি অভিষেক নিজেই অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বদের বুঝিয়ে আসছেন, তাই এর বিপরীত পথে চালিত হলে তৃণমূলে থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবন খুব একটা সুখকর হবে না তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজ নিজেই। এবার অভিষেকের সতর্কবাণীর প্রতিফলন হল নারায়ণের কড়া বক্তব্যে। অভিষেক যে নিজ সিদ্ধান্তে অনড় এবং মমতার দেওয়া গুরুদায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর, তা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি।