অ্যারেস্ট করলে করো, অভিষেককে পাশে নিয়ে চ্যালেঞ্জ মমতার

উত্তরপ্রদেশ-বিহারে বিজেপি কি হারবে?: মমতা

প্রশান্ত দাস: শেষ লগ্নের প্রচারে অভিষেক-গড়ে পদার্পন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ চব্বিশের লোকসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচারে বুধের দুপুরে এই প্রথম একই মঞ্চে দেখা গেলো মমতা-অভিষেককে৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সমর্থনে মেটিয়াবুরুজের কারবালা বাজারে জনসভায় করলেন মমতা৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখেই ব্যাপক প্রশংসিত হলেন অভিষেক৷ বক্তব্যের শুরুতেই অভিষেককে পাশে নিয়ে মমতা বলেন, “ঝড়-জল যা-ই হোক, ও নিজের কেন্দ্রের পাশে থাকে৷ ওকে বলি, তুই পারিসও বটে৷ ওঁর মতো কেউ (সাংসদ) লোকসভা দেখতে পারে না৷” এরপরই দফায় দফায় বিজেপিকে আক্রমণ শানান মমতা৷ নেতাজির বাড়ির সামনে দিয়ে করা প্রধানমন্ত্রীর পদযাত্রাকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “মোদিজী যেখানে রোড-শো করেছেন, সেই রাস্তাতেই মিছিল করে এসেছি৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের যে স্ট্যাচু, সেখান থেকে বিবেকানন্দের বাডি় পর্যন্ত গিয়েছিলাম৷ আজও নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি দেয়নি কেন্দ্র৷ মোদি ওখানে গিয়েছিলেন রাজনীতি করতে৷ আমি গিয়েছিলাম প্রতিবাদ করতে৷ মোদি টাকার জোরে দেশের নেতা হয়েছেন, আর তারপর অহংকারে কথার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন৷” এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে কটাক্ষ মমতার৷ তিনি বলেন, “কাকদ্বীপ থেকে মোদি বলেছেন পাড় বাধানোর টাকা দিয়েছে৷ আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম৷ এক পয়সাও দেয়নি৷ এতো মিথ্যে কথা বলেন, আপনার দ্বারা দেশ চালানো দূর বাড়ি চালানোও সম্ভব নয়৷ মোদি আরও বলেছেন, তিনি নাকি উত্তরপ্রদেশ, বিহারের থেকেও বেশি ভোটে বাংলায় জিতবেন৷ তাহলে কি ওখানে হারবেন? আর বাংলায় সব আসনে জিতলেও কি সরকার গঠন করতে পারবেন?”

সিপিএম-কংগ্রেস এবং বিজেপির যোগসূত্রের প্রসঙ্গ তুলে বিস্ফোরক দাবি করলেন মমতা৷ অভিষেক কে শুনিয়ে তিনি বলেন, “এখানে আসার সময় দেখলাম, বিজেপি কয়েকটা লাল পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে৷ বিজেপির টাকা নিয়ে কংগ্রেসকে দিয়ে খেলাচ্ছে সিপিএম৷ তৃণমূল কংগ্রেস মরে গেলেও সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির যত দিন গাঁটবন্ধন থাকবে, ততদিন আমি সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় কোনও অ্যাডজাস্ট করব না৷ আমি আজও আপনাদের একটা তথ্য দিচ্ছি৷ ক্রসচেক করে নিন৷ অনেক জায়গায় এই জিনিস হয়েছে৷ দমদমে সিপিএম পার্টি ঠিক করেছে, তাদের এমপি ভোটটা বিজেপিকে দেবে৷ আর বরাহনগরে যে এমএলএ ভোটটা সিপিএম বিজেপিকে দেবে৷ কিছু শুনলেন? আপনার এলাকায় টাকা আসছে নাকি? না এলে আসবে৷ এটা বিজেপির ছলনা৷ আর সবচেয়ে বড় কুলাঙ্গার পার্টি সিপিএম৷ এদের ছাড়ব না৷ ছাডি়ওনি৷ ৩৪ বছর লড়াই করেছি৷ বামফ্রন্টের সবাই খারাপ ছিল না৷ কিন্ত্ত সিপিএমটা সবচেয়ে বড় অত্যাচারী ছিল৷ তাই আমরা যদি লড়াই করে সেই বামফ্রন্টকে উপডে় ফেলতে পারি, মোদি সরকারকেও পারবো৷” তৃণমূল যদি চোর হয়, প্রমাণ করুন, মেটিয়াবুরুজ থেকে বিজেপিকে হুঙ্কার মমতার৷ তিনি বলেন, “আমাদের হুমকি দিয়ে কিছু করা যাবে না৷ আমরা লড়তে পারি৷ আমাকে, অভিষেককে অ্যারেস্ট করবে বলে৷ তো করো না! কত কারাগার আছে, অ্যারেস্ট করো৷” এরপরই “একটাই দল, যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়বে বিজেপির বিরুদ্ধে৷ ঝুঁকেগা নহি৷ খেলা হবে”, এমনটাই হুঁশিয়ারি দেন মমতা৷ প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে বারংবার আক্রমণ করেছেন অভিষেককে৷ এবার মেটিয়াবুরুজ থেকে তাঁর জবাব দিয়ে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কী যে বলেন! তাঁর হাঁটুর বয়সি একটা ছেলে (অভিষেক), তাঁকে বলছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে! একটা লোক বোঝেন না, কী বলা উচিত, কী নয়!” অভিষেককে পাশে নিয়ে মমতার আরও সংযোজন, “আড়াই বছর বয়স থেকে ও রাজনীতি করে৷ সিপিএমের গুন্ডারা যখন আমায় মেরেছিলো তখন থেকে ও তার প্রতিবাদ করেছিল৷ ” সর্বশেষে আত্মবিশ্বাসী মমতা বলেন, “ধসটা আগেই নেমেছিল৷ মুম্বাই মার্কেটের আওয়াজ ছিল, ইন্ডিয়া জোট একাই পাবে ৩৪৮৷”


এদিন অভিষেক বলেন, “যাঁরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করবে ভেবেছিলো, তারাতলার পর থেকে বিজেপি-সিপিএমের একটা ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন কেউ অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে বের করতে পারবে না৷ এটাই মানুষের ক্ষমতা৷” এদিনও অভিষেকের হুঙ্কার, “নো এনআরসি, নো সিএএ৷” দীর্ঘকালীন নির্বাচন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম এই প্রচন্ড গরমে দ্রুত নির্বাচন শেষ করানো হোক৷ কিন্ত্ত বিজেপির স্বার্থরক্ষার্থে সাত দফায় নির্বাচন করানো হয়েছে৷ সেই কারণেই আমরা আমাদের এক সক্রিয় কর্মীকে হারিয়েছি৷ ফ্ল্যাগ লাগাতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন আমাদের দলীয় কর্মী নাসিরুদ্দিন মোল্লা৷ আমি নাসিরের পরিবারকে বলবো, যতদিন আমি আছি ততদিন চিন্তা করবেন না৷ আপনার পরিবারের সকল দায়দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে তুলে নিচ্ছি৷” নিজ বক্তব্য শেষে শায়েরির মাধ্যমে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অভিষেক বলেন, “যারা বিভাজন তৈরি করে, যারা অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায়, সেই বিজেপির উদ্দেশে বলি, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, এই দেশ সকলের৷ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, সকলের দেশ৷ এই মাটির উপর যতটা অধিকার আমার, ততটাই অধিকার আপনাদের৷ ” এ প্রসঙ্গেই প্রয়াত ঊর্দু কবি রাহত ইন্দোরির লেখা কবিতা আওড়ান অভিষেক, “কিরায়েদার হ্যায়, জাতি মকান থোডি় হ্যায়? সবকা খুন হ্যায় শামিল ইয়াহাঁ কি মিট্টি মেঁ, হিন্দুস্তান কিসি কে বাপ কা থোডি় হ্যায়?” গোপাল দাস নীরজের কবিতা ধার নিয়ে যুবরাজ বলেন, “হ্যায় অন্ধেরা বহত, সুরজ নিকলনা চাহিয়ে, অব কুছ ভি হো, মৌসম বদলনা চাহিয়ে৷” এরপরই তাঁর ভাষায়, “মৌসম বদল গয়া হ্যায়৷ মে মাসে ছায়া নেমেছে৷ আবহাওয়া পাল্টে গিয়েছে৷ বিজেপি বিদায় নিতে চলেছে৷ এক ভাইকে অন্য ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভিডি়য়ে দেয় যারা, হিন্দু-মুসলিমের লড়াই করায় যারা, সেই বিজেপির বিসর্জন হবে, বিজেপির জানাজা বেরোবে৷ বাংলা বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি যেন সরে যায়, বাংলার মানুষের গর্জনে যেন কম্পন অনুভূত হয় দিল্লিতে৷”