• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

দাঙ্গাবাজ বিজেপিকেও সরিয়ে দেব: মমতা

৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে সরিয়েছি নিজস্ব প্রতিনিধি – কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বুধে উত্তপ্ত হলো বাংলা৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে পাওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে৷ এরপরই এই রায়ের পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ উল্লেখ্য, বুধেই জোড়া জনসভা ছিল মমতার৷ দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে খড়দহে এবং আগরপাড়ায়

৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে সরিয়েছি

নিজস্ব প্রতিনিধি – কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বুধে উত্তপ্ত হলো বাংলা৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে পাওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে৷ এরপরই এই রায়ের পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ উল্লেখ্য, বুধেই জোড়া জনসভা ছিল মমতার৷ দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে খড়দহে এবং আগরপাড়ায় আয়োজিত জোড়া জনসভা থেকেই হাইকোর্টের রায়কে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা মানেন না বলে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে৷ তা এ ভাবে বাতিল করে দেওয়া যায় না৷ এই রায়কে ‘বিজেপির রায়’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি৷ পাশাপাশি, কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি মমতার৷ ঘটনাচক্রে ২০১১ সাল থেকে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল৷ ফলে আদালতের নির্দেশ মূলত কার্যকর হতে চলেছে তৃণমূল জমানায় ইসু্য করা ওবিসি সার্টিফিকেটের উপরেই৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি জনসভা থেকে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুরা তপশিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে৷ এরই পাল্টা দিয়ে দুই জনসভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ বদমাইশগুলো এজেন্সিকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে৷ আজও এক মামলার রায় বেরিয়েছে, সেই রায় মানি না৷” মমতা অবশ্য বলেছেন, তিনি সকল বিচারপতির সমালোচনা করছেন না৷ তবে তাঁর বক্তব্য, ”কাউকে দিয়ে একটা অর্ডার করিয়েছে৷ যদিও তাঁর রায় আমি মানি না৷ ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছিল, তখনও বলেছিলাম এই রায় মানি না৷ তেমন ভাবেই বলছি, এই রায় যিনি দিয়েছেন, যেই দিয়ে থাকুন, আমরা সেই রায় মানি না৷ এটা বিজেপির রায়৷ ওবিসি রিজার্ভেশন চলছে, চলবে৷ এর জন্য উচ্চতর কোর্টে যেতে হলে যাবো৷ কোর্টে কখনও ভাগাভাগি হয় না৷ দেশে এভাবে ভাগাভাগি হয় না৷ এটি কলঙ্কিত অধ্যায়৷” এরপর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তা কখনও হতে পারে না৷ হবেও না৷ তাহলে সংবিধান ভেঙে দিতে হয়৷ তাহলে নরেন্দ্র মোদি চাইছেন দেশ বিক্রি করে দিতে, সংবিধান বিক্রি করে দিতে?” এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা৷ মমতার হুঙ্কার, “এইভাবে ভয় দেখিয়ে বিজেপি বাংলা দখল করতে চাইছে৷ কিন্ত্ত তা হবে না৷ তারা কখনও বাংলা দখল করতে পারবে না, বরং এবার দিল্লি দখল করা হবে৷ মোদিবাবু আপনাকে বলছি, আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন৷ মুসলিমদের দোষ দেবেন না৷” একই সূত্রে টেনেছেন সন্দেশখালি ইসু্য৷ তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সরাসরি বলেন, “সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির চক্রান্ত-১ ফাঁস হয়ে গেল, হিন্দু মুসলিমে দাঙ্গা নিয়ে চক্রান্ত-২ ছিল আর এবার চক্রান্ত-৩? প্রধানমন্ত্রী কখনও বলতে পারেন, সংখ্যালঘুরা তপশিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে? সংরক্ষণ ব্যবস্থাটা সাংবিধানিক অধিকার৷ প্রধানমন্ত্রী কিছু বলতে পারেন না৷” মমতা উচ্চ আদালতের বিচারপতির নাম না করেও সরাসরি তাঁকে আক্রমণ করে বলেন, “নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করার জন্য এই রায়৷ উনি যা বলছেন, কেউ কেউ তাই করছেন৷ কিন্ত্ত গায়ের জোরে কেউ যদি মনে করেন, রাজ্য সরকারের অধিকার কেডে় নেবেন, তা হবে না৷ যত দূর যেতে হবে, যাব৷ এই রায় মানছি না, মানব না৷ আইনে বিভেদ হয় না৷” কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের উদ্দেশে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “কেউ অবসর নিয়ে বলছেন, আমি আরএসএসের লোক৷ কেউ আবার বলছেন, আমি বিজেপির লোক৷ এঁদের দিয়ে মানুষের বিচার হবে কোত্থেকে?” তবে এর সঙ্গেই মমতার সংযোজন, “কোর্টের সকলে খারাপ নন৷ কিন্ত্ত যিনি এই রায় দিয়েছেন, তাঁর রায় আমি মানি না৷ সংরক্ষণ চলবে৷”

সম্প্রতি, বিজেপির ভুঁয়ো বিজ্ঞাপন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল৷ এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন থেকে কলকাতা হাইকোর্ট বিজেপির এই কার্যের সমালোচনাই করেছে৷ এই প্রসঙ্গেও খড়দহের সভা থেকে বিজেপিকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, “আদালত বলে দিয়েছে এর থেকে নিম্নমানের কিছু হতে পারে না৷ এটা অন্যায় হয়েছে৷ এই ধরনের বিজ্ঞাপন করা যাবে না৷” দুর্নীতি ইসু্যতে মুখ্যমন্ত্রীকে এবং তাঁর দলকে নিশানা করায় বিজেপিকে আগেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দাবি করেছেন, কোনও প্রমাণ ছাড়াই ‘চোর, চোর’ বলা হচ্ছে, এর জবাব তিনি দেবেন৷ বুধবার বিজেপির বিজ্ঞাপন ইসু্যতে কথা বলতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ”যারা করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে মানহানির মামলা করব৷ কারণ প্রমাণ করতে হবে যে আমি কারও থেকে এক পয়সাও খেয়েছি৷ আর প্রমাণ করতে না পারলে তাঁকে আমাকে ১,০০০ কোটি টাকা দিতে হবে! আমি মানুষকে সেই টাকা দিয়ে দেবো৷” মুখ্যমন্ত্রীর খোঁচা, ”রায় আমি পেয়ে গেছি, এবার খেলাটা আমার হবে৷” বিজেপির দাবি, বিনামূল্যে বিদু্যৎ পৌঁছে দেওয়া হয় জনতার বাড়িতে৷ এবার এই ইসু্যতেও সরব মমতা৷

তিনি বলেন, “এতটাই বোকা ভেবেছেন আমাদের? সৌরশক্তির মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে বিদু্যৎ পৌঁছে দিতে হাজার বছর লাগবে৷  ততদিন আমরা বা আপনারা থাকবেন তো?’ আগরপাড়ার সভা থেকে এদিন নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর খোঁচা দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীকে৷ তিনি বলেন, ‘এখানে সিপিএমের কেউ কেউ যাদবপুর থেকে এসে দাঁড়িয়ে বড় বড় জ্ঞান দিচ্ছেন৷ এঁরা বিজেপির এক নম্বর দালাল৷ বিজেপি হয়েছিল কোথা থেকে? সিপিএমের হার্মাদ গুলোই বিজেপি করে৷ যাঁরা চিরকুটে চাকরি দিয়েছে তাঁদের মুখেই আবার দুর্নীতির কথা! লজ্জা করে না? ৩৪ বছর শুধু খুন করে গেছে৷’ সেই সূত্রেই বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘বাংলার সব টাকা বন্ধ করেছে এই বিজেপি৷ আবার বলে তৃণমূল সরকার ভেঙে দেবে৷ তৃণমূল ভাঙার আগে বাংলার মানুষ তোমার কোমরটা ভেঙে দেবে৷’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘বাংলায় ঢেলে শিল্প তৈরী হচ্ছে, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই কোনো শ্রমিককে৷ আগামীদিন বাংলাই পথ দেখাবে, বাংলাই দিল্লি গড়বে৷ একটা সিপিএমকে ভোট দেবেন না! এঁরা খুনির দল৷ ৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে যদি সরিয়ে দিতে পারি তাহলে মনে রাখবেন এই ভুঁয়ো, দাঙ্গাবাজ বিজেপিকেও আমরা সরাবো৷ এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা৷ বিজেপিকে এবার এমন ভাবে জবাব দিন যাতে পিল-এর নামে এঁরা আর মানুষ হত্যা করতে না পারে৷’ মোদি গ্যারান্টিকে ‘ফোর টোয়েন্টি’ বলে কটাক্ষ করেন মমতা৷ আগরপাড়া থেকে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি গ্যারান্টি দিই না, গ্যারান্টি মানে ফোর টোয়েন্টি৷ আমি কথা দি মানুষকে, আর যেটা করতে পারবো না সেটা স্পষ্ট বলে দিই৷’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর খড়দহের জনসভায় এদিন উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র, দমকল মন্ত্রী সুজিত বোস এবং আগরপাড়ার সভায় সুজিত বোসে পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক, বিধানসভার মুখ্যসচিব তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র এবং অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব৷