আমি ধীরে ধীরে সাঁওতালি ভাষা শিখে নেব: মমতা

গোপেশ মাহাত:  সাঁওতালি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সে কারণে বিভিন্ন পরীক্ষা এখন দেওয়া যায় সাঁওতালিতে৷ চলতি লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন কালিপদ সোরেন৷ তিনিও পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক৷ ঝাড়গ্রামে শুক্রবার তাঁর সমর্থনে সভা করে মমতা বলেন, ‘‘বাংলা বুঝতে আপনাদের অসুবিধে হচ্ছে৷ কিন্ত্ত আমি ধীরে ধীরে সাঁওতালি ভাষাটা শিখে নেব৷ ‘অলচিকি’টা একটু শক্ত আছে, তবে সেটাও আমি শিখে নেব৷’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি ভাষা জানেন৷ বিভিন্ন ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দেন৷ রাজবংশী, সাঁওতালির মতো বিলুপ্তপ্রায় ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করতে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের নিঃসন্দেহে প্রশংসা প্রাপ্য৷ এদিন মমতা বলেন, ‘কুড়মালি ভাষাতেও আমার কবিতা আছে৷’ সাঁওতালি ভাষা প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেন, ‘জঙ্গলমহল আগে পড়াশুনোর দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল৷ এখন এই জঙ্গলমহল থেকেই অনেকে ডাক্তার হচ্ছেন, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন৷ আমরা এর জন্য গর্ব অনুভব করছি৷ আমরাই প্রথম এই ভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছি৷’

এদিন মমতার নিশানায় ছিলেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু৷ তিনি পেশায় সরকারি চিকিৎসক৷ তিনি সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির টিকিটে ভোটের ময়দানে৷ এদিন গোপীবল্লভপুরে জনসভা থেকে মমতা তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘তিনি চাইলেই বিজেপি প্রার্থীর ছাড়পত্র আটকে দিতে পারতেন৷ তাহলে বিজেপি প্রার্থীর আর ভোটে লড়া সম্ভব হত না৷’ এক্ষেত্রে বীরভূমে দেবাশিস ধরের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছিল৷ মমতা এদিন বলেন, ‘এলাকায় ডাক্তার নেই৷ তুমি যদি ভোটে লড়ো, তাহলে ডাক্তারিটা করবে কে? আমি ভাবলাম লোভ যখন তোমার খুব বেশি, তাহলে একটু ঘুরে আসুক৷ একটু টাকা করে আসুক৷’ ফলে মমতার মন্তব্যেই স্পষ্ট, তিনি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করলে বিজেপি প্রার্থীকে সমস্যায় পড়তে হত, যা তাঁর দলকে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দিত৷ সিএএ নিয়ে মমতা বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বিদেশে পড়তে গেলে বা কোনও কাজ করতে গেলে, অনেক বছর থাকার দরকার হলে একটা গ্রিন কার্ড করে দেয়৷ সিএএ এরকমই একটি ভাঁওতা৷’

উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম আসনটি বিজেপির নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল৷ এবার এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বদল করেছে৷ কুনার হেমব্রমের পরিবর্তে প্রার্থী হয়েছেন প্রণত টুডু৷ ছত্রধর মাহাতকে যেদিন জেল থেকে ছাড়ালাম, তারপরেই আবার একটি ঝাড়খন্ডের কেসে তাঁকে গ্রেফতার করে৷ ২০০৮ সালে সিপিএমের আমলে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তখন ঝাড়খন্ডে বিজেপির সরকার ছিল৷ আর এখন ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে গ্রেফতার করেছে৷ আমি জঙ্গলমহল যার হাত ধরে ঢুকেছিলাম তার নাম ছত্রধর মাহাত৷ শুক্রবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কালিপদ সরেনের ভোট প্রচারে এসে বিজেপি এবং সিপিএমকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, এক সময় লালগড় এলাকায় এক মহিলার কান কেটে নেওয়া হয়েছিল৷ এবং তিনজন গুলিতে মারা গিয়েছিল সিপিএমের হার্মাদদের হাতে৷ ছত্রধর তখন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন৷ আমি এসে সেই মৃতদেহগুলি নিয়ে মেদিনীপুরের চৌরাস্তায় গিয়ে মৃতদেহ রেখে ৫ ঘন্টা ধরে প্রতিবাদ করেছিলাম৷ তারপর তাদের মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে৷ সেই থেকে আমার জঙ্গলমহলে আসা, যখন ভয়ে লালগড়ে কেউ যেত না৷ ওই পিড়াকাটার জঙ্গল পেরিয়ে আমি দিনের পর দিন লালগড়ে গিয়েছিলাম৷ আমার গাড়ি আটকেছে, রাস্তা কেটে দিয়েছে, অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে৷ আর গোপীবল্লভপুর আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমি এগুলো কি করে ভুলবো৷ তাই জঙ্গলমহল আমি যেকোনো কারোর থেকে আমি ভালো বুঝি৷ তাই আমি প্রথম জেতার পর নয়াগ্রামে মিটিং করেছিলাম৷ সেদিন ঘোষণা করেছিলাম বেকার যুবকেরা হোমগার্ডে চাকরি পাবে৷ তোমরা দেশের জন্য অস্ত্র ধরবে৷ মানুষ খুন করার জন্য নয়৷