আমি লোকের চোখ দেখেছি’ চরম আত্মবিশ্বাসী মমতা

‘বিশ্বাস করি না…

নিজস্ব প্রতিনিধি– দেশ ও রাজ্য জুড়ে গেরুয়া ঝড়ের পূর্বাভাস উঠে এসেছে বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষায়৷ যদিও এই সমীক্ষায় ভোটারদের প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আমজনতার পালস তিনি সবচেয়ে ভাল বোঝেন৷ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে নিবিড় জনসংযোগও করেছেন তিনি৷ সেই মমতাই এক বৈদু্যতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি কোনও নম্বরে যাব না৷ আমরা যেভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছি, আমি লোকের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনও মনে হয়নি মানুষ আমাদের ভোট দেবে না৷ আমি দলের কর্মীদের বলেছি, স্ট্রং থাকতে৷ গণনা ভালো করে করতে৷ যা মিডিয়া দেখিয়েছে তার দ্বিগুণ আসন যদি আামরা না পাই তখন বলবেন৷ সংবাদমাধ্যম কিভাবে বলছে কে কোন আসন জিতবে? ভোট যদি গোপন হয়, তাহলে কাউন্টিংয়ের আগে কীভাবে বলছে? আমি এ ধরনের রিপোর্ট মানি না৷ আমি এই মিডিয়ার ক্যালকুলেশন মানি না৷ মোদিকে যারা জিতিয়ে দিচ্ছেন তাদেরকে বলছি, এবার এত সহজে পার পাওয়া যাবে না৷ এই সরকার আর কতদিন চলবে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে৷’ মানুষের চোখ-মুখ দেখে তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন মমতা৷

এখানেই থেমে না থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ সালের এক্সিট পোল দেখেছি৷ কোনোটাই মেলাতে পারিনি৷ কারণ, এগুলো সব বিজেপির তৈরি৷ মিডিয়াকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে৷ দুই মাস আগেই এই এক্সিট পোলগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছিল৷ সেই কোম্পানিটাও বিজেপির কোম্পানি৷ অভিষেক আজ সাংবাদিক বৈঠক করবে৷ নিশ্চয়ই এই বিষয়ে কথা বলবে৷ বিজেপি কিছু লোক পোষে৷ সবাই বলে মিডিয়া থেকে ‘ই’টা উঠিয়ে দাও৷ ‘ও’ লিখে দাও তার বদলে৷ ‘মিডিয়া’ তখন ‘মোডিয়া’ হয়ে যাবে৷ এরা নির্লজ্জ মিডিয়া৷’


ইন্ডিয়া জোটের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে মমতা বলেন, “আমি এরকম কোনও কথা বলতে পারি না৷ অন্য রাজ্যের তথ্য নেই আমার কাছে, কিন্ত্ত নিজের রাজ্যের কথা বলতে পারি৷ যেভাবে আমরা গরমে কাজ করেছি৷ সিটগুলি নিয়ে পর্যন্ত বলছে যে এই সিটে হারছে, ওই সিটে হারছে৷ তার মানে কি বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল৷ জানল কী করে কোন সিটে কে জিতছে, কে হারছে৷ ভোটটা যদি মেশিনেই হয়, ভোটটা যদি গোপনেই হয়, তবে জানল কী করে৷ আমরা জানবার আগে, কাউন্টিং হওয়ার আগে মিডিয়া কী করে বলছে কে কোন সিটে কে জিতবে, কে হারবে৷’

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, দেশের অন্যান্য জায়গাতেও ভাল ফল করবে আঞ্চলিক দলগুলি, এমনটাই মনে করেন পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের প্রধান৷ এ প্রসঙ্গে আশাবাদী তৃণমূল সুপ্রিমো আরও বলেন, ‘অখিলেশরা ভাল করবে, তেজস্বীরা ভাল করবে, স্ট্যালিনরা ভাল করবে৷ উদ্ধবরা ভাল করবে৷ যেখানে যেখানে আঞ্চলিক দল রয়েছে, তারা ভাল ফল করবে৷ তবে যেই-ই আসুক না কেন, খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসবে না৷’
ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে সেই সরকারের অংশ হতে কোনও আপত্তি নেই মমতার৷ তবে সেই সঙ্গে তাঁর শর্ত, ইন্ডিয়া জোটে কোনও সমস্যা হবে না, যদি না সিপিএম নাক গলায়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বভারতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে কোনও অন্তরায় তৈরি হবে না যদি না সিপিএম নাক গলায়৷ আমার একটাই খারাপ লাগে, ইন্ডিয়া জোটে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, আমি ওদের সাপোর্টও দিই৷ কিন্ত্ত সিপিআইএম এদের সম্পূর্ণ মনিটরিং করছে৷ সিপিএম কেন মুখপাত্র হবে, আমার এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ প্রত্যেকটা আঞ্চলিক দলের নিজস্ব সম্মান রয়েছে৷ সবার সঙ্গে কথা বলে যেটা হয়, সেটা জোট৷ জোট মানে সবাইকে নিয়ে চলা৷ কাউকে বাদ দিয়ে নয়৷ কাউকে গায়ের জোরে বাদ দেওয়া-সেটা হয় না৷’

উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারে গিয়েও মমতা সাফ জানিয়েছিলেন, তাঁর দল বাইরে থেকে ইন্ডিয়া জোটকে সমর্থন করতে প্রস্ত্তত৷ তিনি এ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সরকারে যাব৷ আলোচনা করব আমরা৷ আমি অর্বাচিন উত্তর দিতে রাজি নই৷ আমি আগে রেজাল্ট দেখব, তারপর বিবেচনা করব৷ আমাদেরও একটা অঙ্ক রয়েছে৷’

বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়েও মুখ খোলেন মমতা৷ তাঁর অভিযোগ, ‘কংগ্রেসের এলাকাতে মুসলিম দেখে দেখে টাকা দেওয়া হয়েছে৷ তবে আমার মনে হয় না মুসলিমরা ওদের ভোট দেবে৷ তারপরও ওদের কংগ্রেস টাকা দিয়েছে, যাতে কংগ্রেসকে ভোটটা দেয়, তৃণমূলের ভোটটা কাটা যায়৷ সিপিএমও করেছে৷ আমরা একসঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে লডে়ছি৷’

এবারের লোকসভা নির্বাচনে খুবই স্পষ্ট ছিল মেরুকরণের অঙ্ক৷ শেষ দফা নির্বাচনের আগে বঙ্গে এসে মেরুকরণের অঙ্কটা আরও বেশি করে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ একইসঙ্গে নির্বাচনের মধ্যেই তৃণমূল জমানার সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল৷ আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই প্রধানমন্ত্রী মথুরাপুরের মঞ্চে দাঁডি়য়ে তোপ দেগেছিলেন, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতেই মুসলিমদের ওসিবি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল রাজ্যে৷ আর তাতেই যোগ্যরা শংসাপত্র পাননি৷

কিন্ত্ত এরপরও মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, ‘মুসলিম ভোট কেনা বেচা হয়েছে৷ তৃণমূলের ভোট কাটতে মুসলিম দেখে দেখে টাকা দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা কংগ্রেসকে ভোটটা দেন৷ যাতে তৃণমূলের ভোটটা কাটা যায়৷’ তবে আত্মবিশ্বাসী মমতা বলেন, ‘আমার মনে হয় না মুসলিমরা ওদের ভোট দেবে৷’