নিজস্ব প্রতিনিধি: জল্পনা শুরু হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই৷ বহরমপুর আসনে অধীর রঞ্জন চৌধুরির হারের পরেই গুঞ্জন শুরু হয় যে তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে ইস্তফা দিচ্ছেন৷ কয়েকদিন আগে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্রও নাকি পাঠিয়ে দিয়েছেনে তিনি৷ যদিও প্রদেশ কংগ্রেস শিবির এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন৷ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার কলকাতায় বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অধীর বলেন, ‘আমি প্রদেশ কংগ্রেসের অস্থায়ী সভাপতি৷ মল্লিকার্জুন খাড়গে যেদিন থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছেন, সেদিন থেকে তো ভারতবর্ষের আর কোনও রাজ্যে সভাপতি হয়নি৷ এবার যখন করবে তখন আপনারা দেখতে পাবেন৷ আমি তো অস্থায়ী সভাপতি৷’
অধীর চৌধুরির এই মন্তব্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে তাঁর ইস্তফা দেওয়ার জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, এবারের ভোটে সারা দেশে ইন্ডিয়া শিবির যৌথভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করলেও বাংলায় জোট কার্যকর হয়নি৷ বামেদের সঙ্গে জোট করেই রাজ্যে লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেস৷ মূলত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বরাবরই বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে ছিলেন৷ এদিকে জোট নিয়ে একেবারেই খুশি ছিলেন না নিচুস্তরের কর্মীরা৷ এনিয়ে ভোটের আগে থেকেই উঠছিল বেশকিছু অভিযোগ৷ বাম-কংগ্রেসের এই জোট নিয়ে একাধিকবার আক্রমণ শানিয়েছে ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শরিক তৃণমূল কংগ্রেস৷ এবিষয়ে নিজের অসন্তোষের কথা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের থেকেও লুকিয়ে রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাও অধীর চৌধুরিকে কোনওভাবেই দমানো যায়নি৷ বাংলায় জোটের এই সমীকরণ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও৷ তিনি বলেছিলেন, ‘কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অধীর চৌধুরি কেউ নন৷ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের হাইকমান্ড আছে৷ আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব সেটাই হবে৷ যদি কেই সেটা মানতে না পারেন তাহলে বেরিয়ে যান৷’
ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে না চটাতেই কি প্রদেশ সভাপতির বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে! এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের৷ এদিকে বৃহস্পতিবারই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন৷ সংসদে বিজেপিকে চাপে রাখার পরিকল্পনা করতে এই বৈঠক বলে মনে করা হলেও এবিষয়ে দুপক্ষের কেউই মুখ খোলেনি৷ ৯৯ টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের তকমা ফের নিজেদের দখলে রাখলেও বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে তৃণমূলকে হাতে রাখতে চাইছে কংগ্রেস৷
তৃণমূলকে হাতে রাখার জন্য কি তবে বাংলায় জোট সমীকরণে বদল আনতে চাইছে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ! প্রদেশ সভাপতি পদে অধীর চৌধুরি টিকে থাকলে এই বদল কতটা সম্ভব তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা৷ তৃণমূলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারবে- এরকম কাউকে পদে বসাতে চাইছে একাধিক কংগ্রেস নেতা৷ আর এই দাবির প্রেক্ষিতে বেশি করে উঠে আসছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অধীর চৌধুরির ইস্তফা দেওয়ার জল্পনা৷ অধীরের পরে এই পদে কে বসবেন এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত শোনা যাচ্ছে৷ দৌড়ে রয়েছেন বাংলা থেকে কংগ্রেসের একমাত্র সাংসদ ইশা খান চৌধুরি৷ এছাড়াও দুঁদে রাজনীতিবিদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান এবং নেপাল মাহাতও দৌড়ে সামিল বলে জানা গেছে৷