‘হুক্কা বার বন্ধ নয়’, সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ

মোল্লা জসিমউদ্দিন, ১১ জুন, কলকাতা– কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা ও বিধাননগরে হুক্কা বার বন্ধে রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ‘এ বিষয়ে আগে সিঙ্গল বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, তাতে হস্তক্ষেপ করার কোনও কারণ নেই। তাই হুক্কা বার নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল থাকছে’। আদালত মনে করছে, ‘আগে হুক্কা-বার বন্ধ করার জন্য রাজ্যকে আইন বানাতে হবে। তবেই এই ব্যবসা বন্ধ করা যাবে’।

উল্লেখ্য, শহরের হুক্কাবারগুলি আলোচনায় আসে গত ২০২২ সালে। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে শহরের সমস্ত হুক্কা বার বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে কলকাতা পুরসভা। তারপর বিষয়টি নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানির পরে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ‘এ ব্যাপারে যেহেতু কোনও আইন নেই, তাই হুক্কা বার বন্ধ করা যাবে না’। এরপরে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই নিয়ে মামলা রুজু হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। কলকাতা পুরসভার পরে বিধাননগর পুরসভাতেও হুক্কা বার বন্ধের নির্দেশ জারি করে বিধাননগর পুরনিগম। এমনকি তখন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজে শহরের সব রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষকেই হুক্কা বার বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

পুরসভার নির্দেশের পরই ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রেস্টুরেন্টের তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীদের দাবি,’ ২০০৩ সালে ‘কেন্দ্রীয় টোব্যাকো আইন’ মেনে বার চালানো হয়। তাই পুলিশ ও পুরসভা কীভাবে হুক্কা বার বন্ধ করতে পারে?’ মামলার শুনানির পরে সিঙ্গল বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বর্তমান আইনে হুক্কা বার বন্ধ করা যাবে না। তা করতে হলে রাজ্য বা পুরসভাকে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। তারপরেই সেই আইন প্রয়োগ করে হুক্কা বার বন্ধ করতে হবে। তার আগে পর্যন্ত হুক্কা বারগুলির বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না’।


এবার একই কথা বলল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। উচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, হুক্কা বার বন্ধ করা যাবে না রাজ্যে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিল। সিঙ্গেল বেঞ্চের পর এবার ডিভিশন বেঞ্চও একই রায় দিল। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দিল রাজ্যের আপিল পিটিশনটি। বন্ধ করা হচ্ছে না কোনও হুক্কা বার।

গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা শহরের সমস্ত হুক্কা বার বন্ধের ঘোষণা করে কলকাতা পুরসভা। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চে। সিঙ্গল বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,’এই ব্যাপারে যেহেতু কোনও আইন নেই। তাই হুক্কা বার বন্ধ করা যাবে না’। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে রাজ্য। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়ও সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ের দিকেই রইল।

তবে এদিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে,’বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নতুন করে আইন বা নির্দেশিকা জারি করতে পারে। যেহেতু ২০০৩ সালে ‘সেন্ট্রাল টোব্যাকো আইন’ মেনে হুক্কা বার চালানো হয়। তাই সেগুলো বন্ধ করা যাবে না’। প্রথমে কলকাতা পুরসভা ও পরে বিধাননগর পুরসভায় হুক্কা বার বন্ধের নির্দেশ জারি করে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান,’শহরের সব রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষকেই হুক্কা বার বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনুরোধে কাজ না হলে, গোপনে হুক্কা বার চালানো হলে পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। নিয়ম অমান্য করলে রেস্তোরাঁর লাইসেন্স নবীকরণ করা হবে না’। এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র।

পুরসভা, পুলিশের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন হুক্কা বারের কয়েকজন মালিক। তাঁদের দাবি,’পুরসভার আইনে হুক্কা বার বন্ধের বিষয়ে বলা নেই’। মামলার শুনানির পর সিঙ্গল বেঞ্চ জানায়,’হুক্কা বার যদি বন্ধ করতে হয়, তবে রাজ্য বা পুরসভাকে নতুন আইন করতে হবে। তার আগে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না’। এখন দেখার, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় কিনা রাজ্য? নাকি আলাদা আইন করে বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে রাজ্য? এখন সবটাই সময়ের অপেক্ষা।