নিজস্ব প্রতিনিধি, ১৭ জুলাই: বাংলা থেকে অসম। সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যে বিজেপির নেতা মন্ত্রীদের একের পর বিতর্কিত মন্তব্যে জলঘোলা হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি সংখ্যালঘু নীতিতে কি বদল আনতে চলেছে গেরুয়া শিবির? নাকি ফের এনআরসি নিয়ে নতুন কোনও পদক্ষেপ নিতে চাইছে বিজেপি। না হলে একই সময়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং বাংলার বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী কেন একই বিষয়ে উত্তেজক মন্তব্য করছেন? শুভেন্দু অধিকারীর ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ বন্ধ করো, মন্তব্যের পর অসমের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে হিমন্তের সংখ্যালঘু মন্তব্যে সেই বিতর্কই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বার বার।
অসমের জনবিন্যাস বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘সংখ্যালঘু অনুপ্রবেশে বদলে যাচ্ছে জনবিন্যাস, এটা বড় সমস্যা। আমার জন্য খুব বড় ইস্যু। এখন অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ। ১৯৫১ সালে অসমের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ ছিল মুসলিম। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বহু জেলা আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। এটা আমার জন্য রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার।’
প্রসঙ্গত অনুপ্রবেশ প্রশ্নে বারবার রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছে বঙ্গ বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে বারবার এই ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে গেরুয়া শিবির। এবার অনুপ্রবেশের সঙ্গে সংখ্যালঘু-প্রসঙ্গ জুড়ে রাজ্যের জনবিন্যাস বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আক্রমণ শানাল কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বও। যেদিন শুভেন্দু অধিকারী সংখ্যালঘু মোর্চা বাদ দেওয়ার কথা বললেন, প্রকারান্তরে শুধুমাত্র হিন্দুদের নিয়ে চলার বার্তা দিলেন, সেদিনই অসমের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও আক্রমণ শানালেন সংখ্যালঘু অনুপ্রবেশ নিয়ে।
যদিও বাংলায় অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল বার বার সীমান্তের প্রহরায় থাকা বিএফএফ-এর ওপর দায় চাপিয়েছেন। বিজেপির আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যের শাসকদলের পাল্টা প্রশ্ন, সীমান্তে তারা দায়িত্বে থাকতে কিভাবে রাজ্যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে? এই প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা প্রথমে অসম, পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। এরপর অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খণ্ড, বিহারে যায়। আন্তর্জাতিক সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। কিন্তু একবার সীমান্ত পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলে, দায়িত্ব রাজ্যের। সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে আটকানোর দায়িত্ব রাজ্যের। একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ যেভাবে অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে, সেটা যথেষ্ট উদ্বেগের।’
বুধবার বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মোদির স্লোগান- ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-কে বাতিল করার ডাক দিয়ে তিনি দলের সংখ্যালঘু মোর্চা না রাখার পক্ষেও সওয়াল করেন। তাঁর দাবি, সংখ্যালঘুদের ভোট পায় না বিজেপি। সনাতনী হিন্দুদের ভোট পায়। তাই যাঁরা বিজেপির পাশে, তাঁদের পাশেই বিজেপি থাকবে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা। এরপরেই সাংবাদিক বৈঠকে জাতীয়তাবাদী মুসলমানের প্রসঙ্গ তুলে ওই মুসলমানদের পাশে বিজেপি রয়েছে বলে বিষয়টিকে সামাল দেন শমীক ভট্টাচার্য। তবে তিনিও সরাসরি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এবিষয়ে বিজেপির লড়াইয়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, ‘চুপিসারে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যাঁরা ভারত দখলের ছক কষছেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে। এটা আমাদের ঘোষিত নীতি।’ আর এদিন সেই একই সুরেই তোপ দেগেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
উল্লেখ্য, অসমে হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যালঘু জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার কারণ, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মুসলিম উত্তর পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে এসে বসবাস করতে শুরু করেছে। তাঁরা জাল নথিপত্র বানিয়ে এখানে এসে বসবাস করতে শুরু করেছে। সরকারি পরিসংখ্যানেই এই তথ্য মিলেছে। আর সেটা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একটি নির্বাচিত সরকারের জনপ্রতিনিধির এভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করা কতটা সাংবিধানিক? এই নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও হিন্দুত্বের পোস্টার বয় হিমন্ত এর আগে এই নিয়ে একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বহুবার মুসলিম বিরোধী মন্তব্য করেছেন। আর এই বিষয়টি নিয়েই কংগ্রেস ও তৃণমূল সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ করেছে।