নিজস্ব প্রতিনিধি— বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে জমা পড়ে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডির রিপোর্ট৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলাকালীন নাম জডি়য়ে যায় ‘লিপস এন্ড বাউন্ডস’ নামে এক সংস্থার৷ সেই সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা, একাধিক ব্যক্তিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়, যাঁরা ‘লিপস এন্ড বাউন্ডস’-এর সঙ্গে যুক্ত৷ সেই সংস্থার কত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে? সে কথা বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে জানালো ইডি৷
এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে ইডি জানায়, মোট ১৩৪ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ এ কথা শুনে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, দুর্নীতির টাকার অঙ্কের অনুপাতে এটা খুব নগণ্য বলে মনে হচ্ছে না? তিনি যে এই রিপোর্টে খুব একটা সন্ত্তষ্ট নন, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি৷ ইডি-র উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “অভিযোগ উঠেছে যে চাকরি বিক্রি হয়েছে৷ এটা একটা স্ক্যাম৷ সত্যিই কি চাকরি বিক্রি হয়েছে? তার কি কোনও প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন? টাকার উৎস জানতে আপনারা কি কোনও পদক্ষেপ করেছেন?” ইডি জানায়, প্রতিদিনই তদন্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা৷ এই মামলায় এদিন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যের নামও উঠে আসে৷ ইডি জানায়, প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতির মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই শুনানি হচ্ছে না৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছে ইডি৷ আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি৷ ফের রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহার বেঞ্চ৷ উল্লেখ্য, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর নামে থাকা যে সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার মধ্যে কালীঘাট রোডের দুটি বহুতল রয়েছে বলে চলতি বছরের শুরুর দিকে জানিয়েছিল ইডি৷ ইডি-র দেওয়া তথ্য বলছে, এর মধ্যে একটি বাডি় কিনেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ও অপরটি কিনেছিলেন অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ইডির দাখিল রিপোর্টে সুজয় ভদ্র এর কন্ঠস্বর সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে৷ যদিও ওই কণ্ঠস্বর নিয়ে রিপোর্টে সন্ত্তষ্ট হতে পারেননি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ৷ ইডির রিপোর্ট সংক্ষিপ্ত বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি৷ প্রাথমিকে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলার তদন্ত করছে ইডি৷ সেই মামলায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট বুধবার আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল৷ ওই তদন্তের সূত্রেই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা৷ সম্প্রতি ইডি সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছে৷ বুধবার আদালতে তা জমা দেওয়া হয়েছে৷ রিপোর্ট দিয়ে ইডি জানায়, তাঁরা ‘কাকু’র কণ্ঠস্বর নিয়ে যে সন্দেহ করছিল, তা মিলে গিয়েছে৷ সেই সন্দেহের সপক্ষেই রিপোর্ট এসেছে৷ বুধবার আদালতে ইডি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা পাঁচ পাতার৷ তার মধ্যে তিন পাতা জুডে়ই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের তথ্য রয়েছে৷ বাকি দু’পাতায় ছিল এই মামলায় ইডির সার্বিক তদন্তের রিপোর্ট৷ এতেই বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন৷ ইডির তদন্তের রিপোর্ট এত সংক্ষিপ্ত কেন? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিনহা৷ আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে৷