নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-কে তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

কলকাতা, ৩ মে: কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অকর্মণ্যতা নিয়ে তাজ্জব স্বয়ং হাইকোর্টের বিচারপতি। তদন্তের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কার কী এক্তিয়ার, তা জানেই না সিবিআই। যার ফলে গতকাল রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ভর্ৎসনা করলেও আজ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে কার্যত তুলোধোনা করল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।

গতকাল বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দিতে ফের সময় চাইলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা৷ আদালতে রাজ্য সরকারের তরফে আরও ৭ সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়৷ এর আগে আদালত মুখ্যসচিবকে চারবার সময় দেয়৷ আজ অর্থাৎ শুক্রবার জামিনের মামলার চূড়ান্ত শুনানির কথা ছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের৷ ২০২২ সালে সিবিআই সেই অনুমতি চেয়েছিল৷ রাজ্য সরকার ২ বছরের মধ্যে সেই অনুমতি দিয়ে উঠতে পারেনি৷ রাজ্য সরকারের তরফে দফায় দফায় সময় চাওয়া হয়৷ আদালতও দফায় দফায় রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে৷ এর আগের শুনানিতে আদালত ২ মে মুখ্যসচিবকে রাজ্যের মত জানানোর জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল৷ এদিন ছিল শেষ সময়সীমা৷

তবে এই অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে অনুমতি চেয়ে মুখ্যসচিবের কাছে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু এই দুইজনকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ার মুখ্যসচিবের হাতে নেই। কারণ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে একমাত্র রাজ্যপালই তদন্তের অনুমতি দিতে পারেন। আজ শুক্রবার আদালতে শুনানির সময় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবী বিষয়টি উত্থাপন করতেই সিবিআই আধিকারিকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।


সুবীরেশের আইনজীবী এদিন আদালতে বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ারই নেই মুখ্যসচিবের। অপদার্থ সিবিআই আধিকারিকরা এটাও জানেন না, কার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে কার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সুবীরেশ ও কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিতে পারেন একমাত্র রাজ্যপাল।’

এরপরই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই-এর ওপর অগ্নিশর্মা হয়। আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে বিচারপতি বলেন, আপনাদের কথা শুনে এতদিন মুখ্যসচিবকে অকারণে দোষারোপ করছিলাম।

প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিকদের ওপর তদন্তের অনুমতি চেয়ে বারবার আবেদন করলেও সেই অনুমতি দিতে গড়িমসি করছিল মুখ্যসচিবের দপ্তর। এরপরই মুখ্যসচিবকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর অনুমতি নিয়ে প্রায় ২ বছর ধরে টালবাহানা করছে রাজ্য সরকার। সিবিআই বিচার শুরুর অনুমতি চেয়ে বারবার চিঠি দিলেও কোনও সদুত্তর দেননি মুখ্যসচিব। শেষে কেন্দ্রীয় সংস্থা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টে একের পর এক নির্দেশের পরেও এব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ মুখ্য সচিবকে তীব্র ভর্ৎসনা করে। বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাধ্য করছেন মুখ্যসচিব৷ এটা কি বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার কৌশল? আমাদের মনে হচ্ছে, তিনি ইচ্ছা করে আমাদের নির্দেশ অমান্য করছেন৷ এই আদালত তো তাঁকে অনুমতি দেওয়ার জন্য বাধ্য করেনি৷ তাঁকে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে, নিজের দায়িত্ব পালন করতে বলেছে৷ এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা প্রয়োজন রয়েছে৷ গণতন্ত্রে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের এই ধরনের পদক্ষেপ কাম্য নয়৷ শেষ পর্যন্ত যদি মুখ্যসচিব অনুমতি না দেন, তাহলেও আমরা বিস্মিত হব না।’ বিচারপতি বাগচী জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র বলে আমাদের মনে হচ্ছে৷ অভিযুক্তরা এতই প্রভাবশালী যে, রাজ্যের মুখ্যসচিবের কলম কাজ করছে না৷ আদালতকে পর্যন্ত হিমশিম খেতে হচ্ছে নিজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে৷ এখানে আদৌ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া সম্ভব কি না সেটা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷’