ঢাকা, ৫ আগস্ট: জানুয়ারির ৭ তারিখ বিরাট জয় পেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই জয় দীর্ঘস্থায়ী হল না। সোমবার ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল ৩০০ আসনের মধ্যে ২২৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল। হাসিনা এবার গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিপুল ভোটে তিনি সেখান থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এই গোপালগঞ্জেই হাসিনা জন্মেছিলেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৩০০ জন। হাসিনা একাই পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬২টি ভোট। শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আবুল কালামের ঝুলিতে যায় মাত্র ৪৬০টি ভোট। এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানাধিকারী প্রার্থী মাহাবুর মোল্লা ভোট পান ৪২৫টি। বিরোধীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হাসিনা জয়ী হয়েছিলেন ভোটে। সিংহভাগ আসনে জয়ী হয়েও শেষরক্ষা হল না। ক্ষমতা হারাতে হল হাসিনাকে।
তবে ভোটের মাধ্যমে নয়, আমআদমির আন্দোলনের চাপে পড়ে। ছাত্র আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বাধ্য করল হাসিনাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরিয়ে দিতে। এত বড় জয় শেষ পর্যন্ত কোনও কাজে এল না হাসিনার। গোপালগঞ্জ-৩ কেন্দ্রে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটানা জয়ী হয়েছেন তিনি। ১৯৯১ সালে এই কেন্দ্র থেকে হাসিনা প্রথমবার পেয়েছিলেন ৭২.২ শতাংশ ভোট। ১৯৯৬ সালে হাসিনার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২.২ শতাংশ। ২০০১ সালে হাসিনার ভোট বেড়ে হয় ৯৪.৭ শতাংশ। ২০০৮-এ হাসিনার ভোট আরও বেড়ে হয় ৯৭.১ শতাংশ। ২০১৪ সালে হাসিনা এই কেন্দ্রে ভোট পেয়েছিলেন ৯৮.৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৯৯.৯ শতাংশ ভোট পান তিনি। ২০২৪ সালে এই আসন থেকে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৯.৬৫ শতাংশ। এবার বাংলাদেশের ভোট নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ভোট পড়েছিল ৪০ শতাংশ।
যদিও বিরোধীদের দাবি ছিল, ভোট অনেক কম পড়েছিল। কারণ বিরোধীদের মতে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ। ২০০৯ সালে আওয়ামি লিগ বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। এবার শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ ২২৪ আসনে জয়ী হলেও ৬৩ জন নির্দল প্রার্থীও জয়লাভ করেন। আওয়ামি লিগের টিকিট না পেয়ে অনেকে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এত বিপুল জয়ের মধ্যেও কাঁটা বিছানো ছিল, তা কি হাসিনা বুঝতে পারেননি? নাকি বুঝলেও বাস্তব এত নিষ্ঠুর হতে পারে তার আঁচ পেতে ব্যর্থ তিনি। সেই কারণে জয় করেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। ক্ষমতা হারানোর পর ভয়েই তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা। এখন তাঁর আশ্রয়স্থল কোথায় হয়, তা নিয়ে জোরদার জল্পনা শুরু হয়েছে।