রাজকোটে গেমিং জোনে অগ্নিকান্ডে মৃত ৩২, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করল হাইকোর্ট

রাজকোট, ২৬ মে: গতকাল গুজরাটের রাজকোটে একটি গেমিং জোনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় গুজরাট হাইকোর্ট একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। আগামীকাল ২৭ মে, সোমবার এই মামলার শুনানি। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর রাজ্যের গেমিং জোনগুলি নিয়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে বড় কোনও নির্দেশ দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজকোটের ওই গেমিং জোনে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের পর ৯টি শিশুসহ ৩২ জনের খুবই দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গুজরাট সরকার ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠনের নির্দেশ দেয়। এই দলকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আজ, পাঁচ সদস্যের ওই তদন্তকারী দল (এসআইটি) অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করতে রাজকোটে পৌঁছেছে। এই টিমও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

উল্লেখ্য, এখন স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। তার উপর শনিবার সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় রাজকোটের টিআরপি গেম জোনে ভিড় জমিয়েছে শিশুরা। হঠাৎ তাদের খেলার পরিবেশে আনন্দের বদলে আতঙ্কের রূপ ধারণ করে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গেম জোনের একটি অস্থায়ী ছাউনি। হাওয়া বেশি থাকায় দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লেলিহান শিখায় জীবন্ত দগ্ধ হয় শিশু সহ ওই অস্থায়ী ছাউনির লোকজন। আগুন লাগার পরই ছাউনিটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। অনেকে প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। রাজকোটের পুলিস সুপার রাজু ভার্গব জানান, উদ্ধার কাজ শুরু হতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই গেমিং জোনের মালিক যুবরাজ সিং সোলাঙ্কিকে পুলিস জেরা করবে। কাদের গাফিলতিতে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, তদন্ত খতিয়ে দেখা হবে। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। হাওয়ার কারণে আগুন নেভানোর কাজে বেগ পেতে হয়। ওই অস্থায়ী ছাউনির নীচে ঠিক কতজন চাপা পড়ে আছেন, তা উদ্ধারকাজ শেষ না অবধি বলা সম্ভব নয়।’


এদিকে রাজকোটের গেমিং জোন নিয়ে তদন্ত শুরু হতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, ‘টিআরপি’ নামের ওই গেমিং জোনের কোনও ফায়ার লাইসেন্স ছিল না। পর্যাপ্ত এক্সিট গেটও ছিল না। মাত্র একটি এক্সিট গেট নিয়ে চলছিল ওই গেমিং জোনটি। আর সেই গেটটি আগুন লেগে ভেঙে পড়তেই বেরোনোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। একে স্কুলে গরমের ছুটি, তাতে শনিবার বিশেষ ছাড়ে মাত্র ৯৯ টাকায় টিকিট মেলায় অনেকেই গেম খেলতে ভিড় করে। সেই মুহূর্তে আচমকা আগুন লেগে ভয়াবহ বিপদ ঘনিয়ে আসে।

রাজকোটের মেয়র নয়না পেধাদিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেন, ”আমরা তদন্ত করে দেখব কী করে এত বড় একটা গেমিং জোন কোনও ফায়ার এনওসি ছাড়াই চলছিল। এর ফল কী হতে পারে সেটা সবার কাছে পরিষ্কার। এই ইস্যুতে কোনও রকম রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না।” তাছাড়া মাত্র একটি এক্সিট গেট থাকায় আগুন লাগার পর ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয় সেখান থেকে বেরনো নিয়ে। এপ্রসঙ্গে রাজকোটের ফায়ার অফিসার ইলেশ খের সাংবাদিকদিরে বলেন, ”তৈরি করা অস্থায়ী কাঠামোর ভিতরেই আটকে পড়েছিলেন বহু মানুষ। কেননা প্রবেশদ্বারের অংশটা ভেঙে পড়েছিল। ফলে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে যায়।”

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় নিহত ৩২ জনের মরদেহ স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতদেহগুলো আগুনে ঝলসে গিয়েছে। চেনার উপায় নেই। সেজন্য মৃতদেহ সনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

এখানকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এসিপি) বিনায়ক প্যাটেল এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “মৃতদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে, চেনার উপায় নেই। আমরা মৃতদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। যাতে যাঁরা মৃতদেহের দাবি করেছেন, তাঁদের আত্মীয়রা যাতে মৃতদের পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন।”

এই ঘটনায় আহত তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যেখানে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।  এসিপি প্যাটেল বলেন, “মৃতের সংখ্যা আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।”

এদিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, সহ-সভাপতি জগদীপ ধনখর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ অন্যান্য নেতারা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। এই অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। সিএম প্যাটেল মৃতদের আত্মীয়দের জন্য ৪ লক্ষ টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকা এক্স-গ্রাশিয়াও ঘোষণা করেছেন।

এদিকে, ভাদোদরার সমস্ত গেমিং জোনগুলি আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।