• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

উত্তর ২৪ পরগনার বাকি চার কেন্দ্রে সবুজ ঝড়

নিজস্ব প্রতিনিধি— আজ দিল্লির সিংহাসনে কে বসবে সেই চিন্তায় দেশবাসী৷ অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার ৪২টি কেন্দ্রেই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই৷ বুথফেরত সমীক্ষা বিজেপির দিকে ইতিবাচক ইঙ্গিত করলেও, সেই সমীক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ তৃণমূল নেতৃত্বদের ভাষায়, বিজেপি ‘সিঙ্গেল ডিজিট’ পাড় করতেই ব্যর্থ হবে এবার, কারণ বিজেপির ‘বাংলা

নিজস্ব প্রতিনিধি— আজ দিল্লির সিংহাসনে কে বসবে সেই চিন্তায় দেশবাসী৷ অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার ৪২টি কেন্দ্রেই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই৷ বুথফেরত সমীক্ষা বিজেপির দিকে ইতিবাচক ইঙ্গিত করলেও, সেই সমীক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ তৃণমূল নেতৃত্বদের ভাষায়, বিজেপি ‘সিঙ্গেল ডিজিট’ পাড় করতেই ব্যর্থ হবে এবার, কারণ বিজেপির ‘বাংলা বিরোধী’ রূপ উন্মোচিত হয়েছে বঙ্গবাসীর কাছে৷ এবার নির্বাচনের আগে থেকেই বাংলা উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি ইসু্যতে, তাই গণনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নজর রয়েছে বসিরহাট কেন্দ্র তথা উত্তর ২৪ পরগনার বাকি ৪টি কেন্দ্র জুড়েই৷

উল্লেখ্য, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং এবং তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক৷ উভয়ের লড়াইয়ে টানটান উত্তেজনা৷ অর্জুন সাংসদ থাকাকালীন বারংবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ব্যারাকপুর এমনকি ভোটপর্ব মিটলেও ব্যারাকপুর কেন্দ্রে জারি ভোট পরবর্তী হিংসা৷ ভোট গণনার একদিন আগেও নৈহাটী থেকে মিলেছে বোমা৷ এবার এই অশান্ত ব্যারাকপুরকে শান্ত করে ‘গুন্ডারাজ মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পার্থ৷ শেষমেশ অর্জুন বধ করে ব্যারাকপুরে কি শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন পার্থ? তা স্পষ্ট হয়ে যাবে আজই৷ অন্যদিকে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক৷ এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এবং বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর৷ বিরোধীদের অভিযোগ, মতুয়া গড় বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে একছত্র অধিকার কায়েম করে রেখেছেন শান্তনু৷ তাছাড়াও তিনি সাংসদ থাকাকালীন বারংবার উত্তপ্ত হয়েছে বনগাঁ লোকসভার বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ নির্বাচনের দিনও একাধিক হিংসাত্মক পরিস্থিতিকে দমন করেছেন বিশ্বজিৎ৷ সুতরাং বিকল্প পথ হিসেবে, মানুষ ভরসা করতে পারেন বিশ্বজিতের ওপর, দাবি রাজনৈতিক মহলের৷

সন্দেশখালি কান্ডে একের পর এক স্টিং ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে বঙ্গ বিজেপি৷ নাম উঠে এসেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক বার বাংলায় এসে এই ইসু্যকে হাতিয়ার করলেও সন্দেশখালির মহিলাদের বিজেপি বিরোধী জনরোষের বিষয়ে মুখ খোলেননি তাঁরা৷ এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম এবং বিজেপি প্রার্থী হলেন সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্র৷ হাজি নুরুলের ভাষায়, সন্দেশখালির প্রকৃত স্বরূপ সামনে এসেছে৷ অর্থের বিনিময়ে বাংলার মহিলাদের সম্ভ্রম দিল্লির বুকে বিক্রি করে দেওয়ার যে বিজেপির ঘৃণ্য প্রচেষ্টা, তাও ব্যর্থ হয়েছে৷ মানুষ এর জবাব দেবেন ইভিএমের বোতাম টিপে৷ সন্দেশখালি ইসু্য তৃণমূলের ভোটে ব্যাঙ্কে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবে না, বরং উল্টে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বিজেপির ভোট ঝুলিতেই৷ এমনকি নির্বাচনের দিন এই কেন্দ্র দফায় দফায় অশান্ত হয়ে উঠলেও, চমকে দিয়ে বসিরহাটেই ভোট পড়েছে সর্বাধিক সপ্তম দফায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে৷ তাছাড়াও বসিরহাটে গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল, সাংসদ হয়েছিলেন নুসরৎ৷ বসিরহাটে সেভাবে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হয়নি, সেই ভুল বুঝতে পেরেই এবার এই কেন্দ্রের প্রার্থী বদল করেছে দল৷ পাশাপাশি অভিষেক বন্দোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে জয়ের লক্ষমাত্রা দিয়ে গেছেন, আড়াই লক্ষের ভোট ব্যবধানে হাজি নুরুলকে জেতানোর আর্জি জানিয়ে গেছেন জনসাধারণের কাছে৷ দলনেত্রী ভূমিপুত্রের কাঁধেই তুলে দিতে চেয়েছেন বসিরহাটের দায়িত্ব৷ অন্যদিকে বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে তৃণমূলের হাত ধরেই৷

উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকেই এই কেন্দ্রে উড়ছে তৃণমূলের পতাকা৷ এবারও বিগত পনেরো বছরের ন্যায় এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বিজেপির স্বপন মজুমদার, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক পাচারের মামলা৷ সুতরাং, উন্নয়নের নিরিখে মানুষ ভোটদান করেছেন তাই কাকলি-বিমুখ হবেন না বারাসাতবাসী, ধারণা রাজনৈতিক মহলের৷ কাকলির ভাষায়, তিনি এই কেন্দ্রের তিনবারের সাংসদ তাই মানুষের ভালোমন্দ কাছ থেকে দেখে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সর্বদা৷ তিনি যেভাবে নিজ কেন্দ্রকে সাজিয়ে তুলে দৃষ্টান্ত গড়েছেন তাতে তাঁর নিশ্চিত৷ লড়াইটা কেবল ব্যবধান বৃদ্ধি৷ এক ভোটের ব্যবধান হলেও এবার, গতবারের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে, আশাবাদী কাকলি৷ পাশাপাশি বালু’হীন হাবড়া এবং অশোকনগর থেকেও পূর্বের লিড ধরে রাখতে ময়দানে প্রথম দিন থেকেই নেমে পড়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, অশোকনগরের বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী সহ কাকলির সহযোদ্ধাগণ৷ এক কথায়, বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা থেকেই উড়তে চলেছে সবুজ আবির, নিশ্চিত তৃণমূল৷ উল্লেখ্য, নির্বাচনের দিন এক, দু জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয় বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রে৷ সেই কারণেই এই কেন্দ্রের অন্তর্গত দেগঙ্গা বিধানসভার কদম্বগাছি সর্দারপদ এফপি স্কুলের ৬১ নম্বর বুথে পুনর্নির্বাচন আয়োজিত হয় সোমবার৷ এই পুনর্নির্বাচন কাকলির জয় কে অনিশ্চিত করতে পারবে না, মন্তব্য রথীন ঘোষের৷

অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা ঘেঁষা কেন্দ্র হলো দমদম৷ এই কেন্দ্রও বিগত পনেরো বছর ধরে তৃণমূলের অধীনেই৷ দমদমের যাবতীয় উন্নতি হয়েছে সৌগত রায়ের হাত ধরেই৷ এবারও দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় এবং বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত৷ যদিও এবার এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সুজন ভট্টাচার্যও পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ এক ছটাক জমি ছাড়তে রাজি নন সুজন, পাল্টা প্রস্তুত সৌগতও৷ সৌগতর লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধানসভার মুখ্যসচিব নির্মল ঘোষ, মন্ত্রী শোভনদেব ভট্টাচার্য৷ নির্বাচনী প্রচারে সৌগতর সাথে পা মিলিয়েছিলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেব৷ সবমিলিয়ে এই কেন্দ্র হাইভোল্টেজ৷ যদিও জল্পনায় ইতি টেনে উন্নয়নের নিরিখে ভোটদানের মাধ্যমে এবং ভোট কাটাকাটির লড়াইয়ের শেষে দমদমে ফের ফুটবে ঘাসফুলই, মত রাজনৈতিক মহলের৷