কংগ্রেসের কাছ থেকে সােমবার ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়ে শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে এদিন বিকেলেই ছুটে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে। এদিন কংগ্রেসের অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব ঠাকরে।
গত ২৪ অক্টোবর মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত হয়, তাতে দেখা যায় বিজেপি-শিবসেনা জোটের অসন সংখ্যা প্রয়ােজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা পেরিয়েছে, কিন্তু শিবসেনা বিজেপিকে ৫০/৫০ ফর্মুলার কথা মনে করিয়ে দিতেই সরকার গড়ার প্রশ্নটি বিশ বাঁও জলে পড়ে। শিবসেনা দাবি করে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর রফা হয়েছিল যে, বিধানসভায় নির্বাচনে জেতার পর আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী হবে শিবসেনার এবং আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন বিজেপির। কিন্তু বিজেপি সেই শর্ত মানতে নারাজ।
এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না দুই শরিকদলের। ইতিমধ্যে রাজ্যপাল মহারাষ্ট্র বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপিকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানান। বিজেপি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ না করায় সরকার গঠনের তােড়জোড় শুরু করে শিবসেনা। পাশে পায় এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারকে। কিন্তু তারপরেও সরকার গড়ার জন্য সমর্থনের প্রয়ােজন হয় কংগ্রেসের। এরই মধ্যে দিল্লির এনডিএ সরকার থেকে পদত্যাগ করেন শিবসেনার একমাত্র মন্ত্রী।
সােমবার শিবসেনাকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নে শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব কথা বলেন কংগ্রেস নেত্রী সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে। এদিনই মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সমর্থনের প্রশ্নে সােনিয়া তাঁর বাসভবনে একটি বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ছােট একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কংগ্রেস জানিয়ে দেয়, যেহেতু বৈঠক অসমাপ্ত, তাই মঙ্গলবার ফের একবার মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন সােনিয়া, তারপর জানানাে হবে শিবসেনাকে কংগ্রেস সমর্থন করবে কিনা।
তবে রাজ্যপাল শিবসেনাকে সরকার গড়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে কংগ্রেসের উত্তরের অপেক্ষায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি পেশ করার জন্য আরও ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়ার আবেদন জানান, কিন্তু শিবসেনার সেই দাবি এদিন নাকচ করে দিয়েছেন রাজ্যপাল।
পাশাপাশি এদিন তৃতীয় বৃহৎ দল হিসেবে শরদ পাওয়ারের এনসিপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যপাল। ফলে মহারাষ্ট্রে ফের একবার সরকার গঠন নিয়ে শুরু হল অনিশ্চয়তা। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হবে কিনা তা নিয়ে এখন দেশীয় রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের বিষয়ে শিবসেনা-বিজেপি মতবিরােধের পরে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল উদ্ধব ঠাকরের দল। শিবসেনা সদস্য অরবিন্দ সাওয়ান্ত সােমবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সরকারের মন্ত্রিপদ থেকে নিজের ইস্তফা ঘােষণা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে নিজেদের একমাত্র মন্ত্রীকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অনেকেই জল্পনা করছেন এর মাধ্যমে আসলে শরদ পাওয়ারকে বন্ধুত্বর বার্তা দিল শিবসেনা।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য যে কোনও জোটের বিষয়ে আলােচনা করতে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দেওয়া অন্যতম একটি শর্তপূরণ করল শিবসেনা। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ টানাপােড়েনের পর রাজ্যপাল শিবসেনাকেই সেখানে সরকার গঠনের ডাক দেন। মনে করা হচ্ছে এনসিপি’র সমর্থন নিয়ে সে রাজ্যে সরকার গঠনের লক্ষ্যে নিজের দলের বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে শিবসেনা। অন্যদিকে দিল্লিতে এই বিষয় নিয়েই এক বিশেষ বৈঠকে বসেছে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব।
‘শিবসেনা সবসময়েই সত্যের দিক বেছে নিয়েছে। তাহলে এইরকম মিথ্যার পরিবেশে কেন আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে থাকবাে? সেই কারণেই আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি’, ট্যুইট করেন ভারী শিল্প দফতরের মন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত।
রবিবারই শিবসেনাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি কেননা আগেই বিজেপির পক্ষ থেকে জানানাে হয় যে তারা সরকার গঠনে আগ্রহী নয়। তবে শিবসেনা এটাও জানে যে এনসিপি এবং কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া তাদের মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়।
শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে সােমবারই শরদ পাওয়ারের সঙ্গে এক বৈঠক করতে পারেন। সূত্রের খবর শিবসেনার তরফ থেকে মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে এনসিপিকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পদ থাকবে শিবসেনার দখলেই। শিবসেনার সঙ্গে সরকার গড়া নিয়ে কোনও রফাসূত্র আসার আগে এনসিপি’র পক্ষ থেকে তাঁদের এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার শর্ত দেওয়া হয়। সেই শর্ত অনুযায়ীই এনডিএ ছাড়ে উদ্ধব ঠাকরের দল। সােমবারই নিজের দলের বিধায়কদের নিয়েও বৈঠক করবে শিবসেনা।
‘সেনা যদি কংগ্রেস এবং এনসিপি’র সমর্থন চায় তবে তাদের অবশ্যই ঘােষণা করতে হবে যে তারা বিজেপি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এবং এনডিএ’র বাইরে বেরিয়ে এসেছে। পাশাপাশি ওই দলের মন্ত্রীকেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে হবে’, সােমবার বলেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। তিনি আরও জানান যে, শিবসেনার কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত সরকার গঠন নিয়ে কোনও প্রস্তাব আসেনি। শিবসেনার মুখপাত্র সামনায় গত সপ্তাহেই বলা হয় ‘এনসিপি’র ৫৪ জন বিধায়ক, ৪৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক এবং কয়েকজন নির্দল বিধায়ককে নিয়ে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌছতে পারি। সেনা নিজেদের দল থেকে একজনকে মুখ্যমন্ত্রী পদে উপস্থাপন করতে পারে তবে তার জন্য তিনটি দলকেই স্বাধীন মতাদর্শের সঙ্গে মেলে এমন নীতি অবলম্বন করা উচিত যা সর্বজনগ্রাহ্য।
তবে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস প্রধান সােনিয়া গান্ধি শিবসেনাকে সমর্থন করার বিষয়ে সম্মতি দেননি। জানা গেছে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সােমবারই ফের বৈঠকে বসছে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকে ঠিক হবে যে দলটি সেনা-এনসিপি সরকারকে সমর্থন করবে কিনা এবং যদি তা হয়ও, তবে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা ভাববে কংগ্রেস।
শুক্রবারই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। রবিবার বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যপালকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে সরকার গঠনে আগ্রহী নয় গেরুয়া দল।
এরপরেই শিবসেনাকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানান মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। পরে, রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজ্য বিজেপি প্রধান চন্দ্রকান্ত পাতিল সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘জনাদেশ শিবসেনা-বিজেপি জোটের পক্ষে ছিল। তাই আমরা কখনােই এককভাবে সরকার গঠন করে সেই জনাদেশের অপমান করতে পারি না। শিবসেনা যদি মহারাষ্ট্রের জনগণের রায়কে অবমাননা করতে চায় এবং এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয় এ রাজ্যে সরকার গঠন করতে চায়, তবে তাঁদের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা রইল’।
সােমবার সকালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মােদি মন্ত্রিসভা থেকে যখন শিবসেনার প্রতিনিধি অশােক সাওয়ান্ত ইস্তফা দেন, তখনই বােঝা গিয়েছিল মহানাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে পারে মারাঠা মুলুকে। ক্রমশ সেদিকেই এগােচ্ছে মুম্বইয়ের রাজনৈতিক পালাবদল। বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘ তিন দশকের বন্ধুত্বের পর্ব চুকিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার বানানাের দাবি জানাতে পারে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী করে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাতে চলেছে শিবসেনা।
সূত্রের খবর, এনসিপি জানিয়ে দিয়েছে তারা শিবসেনাকে সমর্থন দেবে। অধিকাংশ কংগ্রেস বিধায়কও সমর্থন জানানাের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন হাইকমান্ডের কাছে। তবে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত হতে সােমবার সন্ধে সাতটা বেজে যাবে বলে খবর। মহারাষ্টে বিধানসভা ভােটের ফল ঘােষণা হয়েছে ২৪ অক্টোবর। তারপর প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল। কিন্তু বিজেপি-শিবসেনার মধ্যে কোনও রফা হয়নি। কারণ, শিবসেনা গােড়া থেকে দাবি জানিয়ে এসেছে সরকারের অর্ধেক মেয়াদ মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকবেন তাদের প্রতিনিধি। কোনও অবস্থাতেই বরফ না গলায় শেষমেশ বিজেপি গতকাল রাজ্যপালকে জানিয়ে দেয় যে, তারা সরকার গঠনের দাবি জানাবে না। এরপরেই শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের মধ্যে একাংশ নেতার মধ্যে আলােচনার গতি বেড়ে যায়।
ভােটের ফল প্রকাশের দিন থেকেই এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার বলেছিলেন যে মানুষ তাদের বিরােধী আসনে বসার পক্ষেই রায় দিয়েছে। ফলে এনসিপি সরকার গঠনের জন্য কোনও চেষ্টা করবে না। একই কথা বলেছিলেন কংগ্রেস নেতারাও। কিন্তু বিজেপি-শিবসেনা অক্ষে চিড় ধরার পর সেই পাওয়ারেই কৌশল বদলে যায়। ঘােলা জলে পােনা ধরতে নেমে পড়েন পাওয়ার। আহমেদ প্যাটেল ও সােনিয়া গান্ধির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
এনসিপি ও কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিজেপিকে রুখে দিতে তাদের একাংশ নেতা খুবই আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে আজ সকালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়। তবে ওয়ার্কিং কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সােনিয়ার উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার উত্তর সময়ে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের দখল মাত্র পাঁচ বছর ছিল শিবসেনার দখলে। কিন্তু বালাসাহেব নিজে কখনও মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি। প্রথমে মনােহর যােশীকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন তিনি। পরে এক বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নারায়ণ রাণে। কিন্তু সময় বদলেছে। অনেকের মতে, একে তাে উদ্ধবের উচ্চাকাঙ্খ রয়েছে তাছাড়া দলে এমন কেউ নেই যে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিয়ে মাতুশ্রীতে বসে থাকবেন তিনি।
আশঙ্কা রয়েছে, তিনি বিজেপির সঙ্গে না আপস করে বসেন। তবে অনেকের মতে, খেলা আরও হবে। এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি। কারণ, অমিত শাহরাও হাতগুটিয়ে বসে থাকার লােক নন। বরং দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে যাঁরা এনডিএ ছেড়েছেন তাদের শেষ পর্যন্ত কী হাল করে ছেড়েছে বিজেপি। নীতীশ কুমার তাে বিপ্লব বিসর্জন দিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাছাড়া কংগ্রেস, এনসিপি বাইরে থেকে সমর্থন দিলে যে সরকার তৈরি হবে তা গােড়া থেকেই থাকবে ভঙ্গুর। কতটা কাজ করতে পারবে সেও প্রশ্ন।