নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মূল্যবৃদ্ধি থেকে রেশন দুর্নীতি মামলা এমন একাধিক প্রসঙ্গে এবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। “প্রতি কুইন্টালে একটা নির্দিষ্ট কাটমানি তৃণমূলের দলের নেতা এবং মন্ত্রীদের কাছে গেছে।” শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন জগন্নাথ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রেশন দুর্নীতি মামলায় দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ এবং তাঁর দাদা আলিফ নূর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বলেন, “নূর ব্রাদার্স বলুন বা রহমান ব্রাদার্স বলুন, এঁদের রেশন দুর্নীতির সাথে যোগ-টা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এই দুই ভাইয়ের চারটি চাল কলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু রাজ্যের প্রায় ১৬০-১৬৫টি চালকল এবং ৭৫ টির উপর আটাকল নিয়ে এই রেশন দুর্নীতি চলছে। কিষান মান্ডি থেকে কিভাবে কৃষকদের থেকে চাল কেনা হয়েছিল তা এখন দেখা শুরু হয়েছে।
ইডি সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, কৃষক তো দূরের কথা মূলত তৃণমূলের দালাল চক্রের মাধ্যমে চালকল গুলিতে চাল সংগ্রহ হয়েছে এবং প্রতি কুইন্টালে একটা নির্দিষ্ট কাটমানি তৃণমূলের নেতা এবং মন্ত্রীদের কাছে গেছে।” তাঁর আরও সংযোজন, “যে বারিক বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এই তদন্ত আবর্তিত হচ্ছে, আমাদের এখানেই একটা প্রশ্ন আছে। যখন বারিক বিশ্বাস দুবাইতে ছিলেন, তখন কি বাংলার কোনও নেতা একই সময়ে দুবাইতে গিয়েছিলেন? সেখানে তাঁদের কি কোনও মিটিং হয়েছিল? তাঁদের সঙ্গে কি রেশন দুর্নীতির কোনও যোগ আছে?”
বিজেপি নেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের ইলেকশন পিটিশন মামলায় ঘাটাল কেন্দ্রের নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত নথি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিভাস পট্টনায়ক। নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ দিয়ে একথা জানাতে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শুধু কেশপুর বিধানসভার বিভিন্ন বুথে অন্যান্য বিরোধী দলের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চমকিয়ে ধমকিয়ে যে ভোট হয়েছিল, তার প্রমাণ হল কেশপুরের ফলাফল। সম্পূর্ণ ঘাটাল লোকসভায় যথাযথ ওয়েব কাস্টিং পরীক্ষা করা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে কিভাবে ঘাটালের ভোট লুঠ হয়েছে।”
বারংবার বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় পুর প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন জগন্নাথ। তিনি বলেন, “পুরসভার ন্যূনতম কাজ হল নির্দিষ্ট পুর এলাকা পরিষ্কার রাখা, জমা জল দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করা, বিদ্যুৎবাহী তার দ্রুত সরিয়ে ফেলা। পুরসভার গাফিলতির কারণে হাওড়ায় এক তরুণীর প্রাণ গেল। এছাড়াও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় নর্দমা, ভ্যাট দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে বহুবার। আগেও আমরা দেখেছি পার্ক স্ট্রিটে, বেহালায় বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা গিয়েছেন। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী শহরে কেন এভাবে বিদ্যুৎবাহী তার যত্রতত্র পড়ে থাকবে? এর দায় সম্পূর্ণ রাজ্য ও পুর প্রশাসনের। এখন তাঁরা নিজ দায় এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই অবান্তর কথা বলছেন।”
মাটিগাড়ায় রামকৃষ্ণ মিশনের জমি বেদখলের অভিযোগ এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে জগন্নাথ বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্মে রয়েছে তোলাবাজি, জবরদখল! সুতরাং এটা কোনও নতুন বিষয় নয়। যদি শুনতাম রামকৃষ্ণ মিশনের বেদখল হওয়া জমি কোনও তৃণমূল নেতা উদ্ধার করে রামকৃষ্ণ মিশনকে ফিরিয়ে দিয়েছে, তাহলে আমরা বাহবা দিতাম।”
রাজ্যের অর্থনীতি প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের। তাঁর ভাষায়, “রাজ্যের অর্থনীতির বেহাল দশা। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, রাজ্যের শ্রমিকরা রাজ্যেই কাজ পাবেন। তাহলে ভিন রাজ্যে কেন আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা? এ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেও অনীহা শ্রমিকদের। তার কারণ, কম মজুরি। সে কারণেই বাঙালি শ্রমিকরা দক্ষিণ ভারতে চলে যাচ্ছেন। যা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যের।”