নিজস্ব প্রতিনিধি – বাংলার ৪২ টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম হাইভোল্টেজ লোকসভা কেন্দ্র হলো ব্যারাকপুর৷ এবার এই ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে নারী মুখ হয়ে প্রচারে নামলেন রাজ্য তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা তথা ফিরহাদ কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম৷ মঙ্গলের ৪৩° দাবদাহকে উপেক্ষা করেই পথসভা করলেন প্রিয়দর্শিনী৷ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আমডাঙ্গা এবং ভাটপাড়ায় একইদিনে জনসংযোগ এবং পথসভা করেন ফিরহাদ কন্যা৷ এদিন প্রিয়দর্শিনীর সাথে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী পারমিতা সেন সহ অন্যান্য তৃণমূল কর্মীবৃন্দ৷ হাত নেড়ে জনসমর্থন আদায় করা থেকে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেওয়া, এমনকি মানুষের সাথে কথা বলে তাদের অভাব, অভিযোগ শোনা কোনো কিছুতেই খামতি রাখলেন না তিনি৷ এদিন প্রচারে নেমে একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যুগান্তকারী প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরেন মানুষের সামনে, তেমনি আক্রমণ শানান পার্থর প্রতিদ্বন্দ্বী অর্জুন সিং কেও৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কার্যগুলির মধ্যে একটি হলো নারীর ক্ষমতায়ন৷ কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে বিধবা ভাতা, এমন বিভিন্ন যুগান্তকারী, নারী উন্নয়নমূলক একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সকল নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ নারী মুখ হয়ে এবার সেই প্রকল্পগুলির উপকারীতা তুলে ধরতেই ব্যারাকপুরের মাটিতে পা রাখলেন প্রিয়দর্শিনী৷ উল্লেখ্য, ব্যারাকপুর পরিচিত ছিল ‘অর্জুন গড়’ বলেই৷ ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুর জয় করে সেখানকার সাংসদ হয়েছিলেন অর্জুন৷ তারপর আবার ফিরে এসেছিলেন জোড়াফুলেই৷ কিন্ত্ত বারংবার দলবদল করায় দল ভরসার হাত রাখতে পারেনি অর্জুনের কাঁধে৷ তাই এবার তাঁকে টিকিটও দেয়নি শাসকদল৷ লোকসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে আক্ষেপের সুরে অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলে ফেরাটা ভুল হয়েছে৷’’ বহু জলঘোলার তিনি আবার ফেরেন গেরুয়া শিবিরেই৷ যদিও অর্জুনের সেই বক্তব্যে বিন্দুমাত্র আমল দেয়নি দল, বরং ওই কেন্দ্র থেকে ভোটের লড়াইয়ে দাঁড় করিয়েছে পার্থ ভৌমিককে৷ পুনরায় বিজেপির টিকিটে পার্থর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামেন অর্জুন৷ সব মিলিয়ে এক টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে৷
যদিও বারবার দলবদল করায় বহু সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে অর্জুনকে৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নিজেও এই তৃণমূলত্যাগী বিজেপি নেতৃত্বদের কটাক্ষের সুরে ‘আবর্জনা’ বলেছেন৷ এমনকি অভিষেকের মতে, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফল ভালো হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই ‘আবর্জনা’-দের বিজেপি যাত্রা৷ উল্লেখ্য, অর্জুন সিং সাংসদ থাকাকালীন প্রায় সময়ই উত্তপ্ত হতে দেখা গিয়েছে ব্যারাকপুর, ভাটপাড়া এলাকাকে৷ কখনও বিক্ষিপ্তভাবে ওই এলাকায় চলেছে গোলাগুলি, কখনও উদ্ধার হয়েছে বোমা, কখনও খুন হয়েছেন রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ৷ যে কারণে অর্জুনের বিজেপি-যাত্রায় স্থানীয়রা কার্যত স্বস্তিতেই ছিলেন৷ অনেকেই মনে করছেন, এবার ব্যারাকপুরে দাদাগিরি, তোলাবাজি কমবে৷ এ প্রসঙ্গে পার্থ ভৌমিক নিজেও মঙ্গলবার্তা দিয়েছেন ব্যারাকপুরবাসীদের৷ মনোনয়ন জমা দিয়ে ‘গুন্ডারাজ মুক্ত ব্যারাকপুর’ গড়ার শপথ নিয়েছেন পার্থ৷ এবার পার্থর এই অভিপ্রায়কে আরও সহজতর করতেই তাঁর সমর্থনে প্রচারে আসলেন ফিরহাদ কন্যা৷ যিনি নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য বারংবার দলবদল করেন, তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে জনসেবায় কিভাবে নিযুক্ত থাকবেন? প্রচারে এসে কটাক্ষের সুরে এমনই প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়দর্শিনী৷ আগামী ২০শে মে ভোট রয়েছে এই কেন্দ্রে৷ সেই মতো নিজ অধিকারকে সামনে রেখে জনসাধারণকে ভোট দেওয়ার বার্তা দিলেন প্রিয়দর্শিনী৷