কুশলকুমার বাগচী, বহরমপুর, ৬ মে— রবিবার রাতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ দলীয় প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের সমর্থনে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি নরেন্দ্র মোদিকে তুঘলক রাজা হিসেবে সম্বোধন করে করোনার সময়ের কথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদি মানুষকে বাডি়তে আসার সুযোগ না করে দিয়ে হঠাৎ করে লকডাউন ডিক্লেয়ার করে দিলেন৷ তুঘলকি লকডাউন৷ কখনো বললেন ঘন্টা বাজাও করোনা চলে যাবে, কখনো বললেন আলো দেখাও করোনা চলে যাবে৷ তারপর দেখা গেল আস্তে আস্তে করোনার সেই ভয়ংকর দৃশ্য, যেখানে আমি বিশ্বাস করি এমন কোন মানুষ নেই যার জানাশোনা কেউ করোনায় মারা যাননি৷ আমার প্রিয়জন অনেকে মারা গেছে৷’ তিনি আরো বলেন যে, ‘এই ইলেকশন হলো ভারতবর্ষের ইলেকশন৷ এই ইলেকশন ঠিক করবে যে আগামী দিনে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সরকার থাকবে কি থাকবে না৷ এই ইলেকশন ঠিক করবে যে, আপনারা যারা ভারতবর্ষের মানুষ, আমরা যারা বাংলার মানুষ, আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ কীভাবে হবে৷ ২০১৪ সালে চারশো টাকার যে সিলিন্ডার ছিল, সেটা হাজার-বারোশো টাকা হয়ে গেল, সেটা মানুষের স্বার্থে আবার কমানো হবে কিনা সেটা এই ইলেকশন ঠিক করবে৷ এই ইলেকশন ঠিক করবে যে আজকে ভারতের যে অবস্থা, সেই স্বৈরাচারী অবস্থা থাকবে, না মানুষের গণতন্ত্র ফিরে আসবে৷ এই ইলেকশনে যদি নরেন্দ্র দির সরকার আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়, তাহলে এটা নিশ্চিত যে, ভারতবর্ষে এর পরে আর কোন ইলেকশন হবে না৷ তার কারণ, তারা বলেই দিয়েছে ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ অর্থাৎ আমাদের পৌরসভার ইলেকশন হবে না, বিধানসভার ইলেকশন হবে না, পঞ্চায়েতের ইলেকশন হবে না৷ শুধু নরেন্দ্র মোদির ইলেকশন হবে আর এই ইলেকশনে যারা সিলেক্টেড হবে তাদের দিয়ে ভারতবর্ষ চলবে৷ গণতন্ত্র আজকে বিপদের মধ্যে রয়েছে৷ সেটা আপনাদের ঠিক করতে হবে৷’’
মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাঁডি়য়ে থেকে মানুষের সেবা করা সবচেয়ে আগে দরকার ছিল৷ যদি নাড়ু এই কাজ করে না থাকে, নাড়ুর পৌরপ্রধান হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই৷ আপনারা বিচার করবেন করেছে, কি করেনি৷ যারা যারা রয়েছেন তারা প্রত্যেকে করেছেন বাংলায়৷ শুধু একজন, যাকে আমরা সবাই আগে শ্রদ্ধা করতাম, একটা সময় ঠিক যে ওর হাত ধরে এরা সব রাজনীতি শিখেছে৷ সেই লোকটা পুরো পাল্টে গেল৷ দুইটি বছর করোনার হাহাকারের সময় শুধু দিল্লির বাডি়তে বসে স্টেটমেন্ট দেওয়া ছাড়া মানুষের কোন সেবা করল না৷ মানুষের পাশে এলো না৷ বহরমপুরের মানুষ বাঁচলো কি মরলো, তারা হাসপাতালে স্থান পেল, কি পেল না, অক্সিজেন পেল, কি পেল না সেটা দেখতেও তিনি এলেন না৷ একটা সময় নিশ্চিতভাবে তিনি অ্যাক্টিভ ছিলেন৷ কিন্ত্ত একটা সময় এলো যখন তার চারিত্রিক পরিবর্তন হলো৷ এখন সে আর জনপ্রতিনিধি নেই, শুধু একটা স্বামী হয়ে রয়ে গেছে৷ এটা ভারতবর্ষের ইলেকশন৷ অনেকে বলেন যে ঘরের ছেলে অধীর চৌধুরী৷ ঘরে যখন আগুন লাগল, তখন সেই ছেলে যদি আগুন নেভাতে না এলো তাহলে সে আর ঘরের ছেলে রইল কি করে? সে তো দিল্লির ছেলে হয়ে গেছে৷ কলকাতার ছেলে হয়ে গেছে৷ ওই দু-বছরে আমি অন্তত চার থেকে পাঁচ বার নিজে বহরমপুরে এসেছি, কিন্ত্ত তিনি আসেননি৷ তাহলে ঘরের ছেলে কোথা দিয়ে হল?’ তারপর তিনি সিপিএমের সঙ্গে জোট এবং বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্কের অভিযোগ করে অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করেন৷ তিনি বলেন, ‘অধীরবাবুকে সেলিম সাহেব উত্তরীয় পডি়য়েছেন, যার মধ্যে কাস্তে হাতুডি়৷ অধীর বাবু সেটা পরে হাসতে হাসতে যাচ্ছেন৷ আমি বলি, সত্য সেলুকাস! বিচিত্র এই অধীর৷ একটা মানুষের চরিত্র ২৫ বছরে কিভাবে পরিবর্তন হয়! আরো পরিবর্তন হবে৷ ২০১৭ সালে যখন যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হলেন, কয়েকজন প্রিয় বন্ধুকে তার বাডি়তে আমন্ত্রণ জানালেন৷ সেই বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন আমাদের সাংসদ অধীর চৌধুরী৷ শুধু সিপিএমের সঙ্গে লাইন নয়, বিজেপির সঙ্গে লাইন৷ যোগী আদিত্যনাথ তার প্রিয় বন্ধু৷ যখন প্রেস তাকে জিজ্ঞাসা করল যে, আপনি এখানে এলেন, যার সঙ্গে কংগ্রেসের সবচেয়ে বেশি লড়াই? তখন সে বলল, ওটা ওর ব্যক্তিগত সম্পর্ক৷ যারা মানুষকে খুন করছে, যারা উন্নাও তৈরি করতে পারে, যারা হাথরস তৈরি করতে পারে, যারা নারীর ইজ্জত নষ্ট করতে পারে, যারা সাম্প্রদায়িকতায় গ্রামকে গ্রাম মুজাফফরনগর এর মত জায়গায় জ্বালিয়ে দিয়ে খুন করে দিতে পারে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখা যায়? আমি তো মনে করি যায় না৷ ব্যক্তিগত সম্পর্কে চলে গেলেন, লাইন হয়ে রইল৷ যোগী আদিত্যনাথ এখানে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জির নামে কি গালাগালি! কই অধীরবাবু, আপনার নামে তো যোগী কিছু বলল না! কারণ সেই রিলেশন৷ ওইখানে লাইন আছে৷