ডিভিসির জলে ফের বন্যার আশংকা

প্রশাসনের উদ্যোগে দামোদর নদে কড়া নজরদারি , বর্ধমানে বানভাসি এলাকায় ঘুরে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ

আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ৪ আগস্ট: একটানা রেকর্ড বৃষ্টিতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানেও বানভাসি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার পরিবার। তারই মধ্যে শনিবার ফের ডিভিসির জল ছাড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কৃষি প্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলায়। কারন রবিবারও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের জমি জলের তলায়। রবিবার বেশ কয়েকটি এলাকায় ডিভিসির জল পৌঁছে যাওয়ার ফলে উদ্বেগ সব মহলেই। যদিও নবান্নের নির্দেশ মেনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দামোদর নদে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে শহর বর্ধমানের বাঁকা নদীর জল কানায় কানায় পূর্ণ। যে কোন সময় নতুন করে নিচু এলাকাগুলো ডুবে যেতে পারে বলে আশংকা বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হলো সরকারি উদ্যোগে। জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে চলছে দুর্গত দের সাহায্য।

শনিবার ডিভিসির দুটি জলাধার মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র মাইথন থেকে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হল। ওই বাড়তি জলে নতুন করে প্লাবনের আশংকা দেখা দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলি জেলায়। সেই সব এলাকায় কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও শনিবারই মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুখ্যসচিবের মাধ্যমে ডিভিসিকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। আপাতত আর জল ছাড়া হবে না। অন্যদিকে দুদিনের একটানা বৃষ্টিতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকে বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কবলে পড়েছেন বহু পরিবার।কিছু কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুততার সাথে সেই সমস্ত পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো জামালপুর ব্লক প্রশাসন। এদিন বিডিও পার্থ সারথী দে , পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ভূতনাথ মালিক,পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান, প্রধান মিঠু পাল সহ অন্যান্যরা জামালপুর- ২ অঞ্চলের ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছে যান। সেখানে গিয়ে তারা যে সমস্ত বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে সেই বাড়ি গুলির পরিবারের লোকজন কে ত্রিপল তুলে দেন। এছাড়াও কিছু শুকনো খাবার ও দেন। বিডিও পার্থ সারথী দে বলেন ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। আর যেখানে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই পৌঁছে তাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা চলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশমতো।


অন্যদিকে মেহেমুদ খান বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বদাই এইসময় জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে বলছেন। তাই তারা সর্বদা সজাগ আছেন। আজ তারা ডাঙ্গা গ্রামে গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাথে কথা বলেছেন। প্রাথমিক ভাবে ত্রিপল ও শুকনো খাবার দিয়েছেন। তিনি সকল প্রধান ও উপ প্রধানদের সতর্ক থাকার জন্য বলেন। এছাড়াও জাড়গ্রাম অঞ্চলের মির্জাপুর গ্রামের অনিমা ধারা মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পরে গেলে তাকে তৎক্ষণাৎ জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে দেখতেও হাসপাতালে যান প্রশাসন সহ পঞ্চায়েত এর জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে জেলাশাসক রাধিকা আইয়ার এর নির্দেশে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে বেশ কয়েকটি ত্রান শিবির খোলা হয়েছে। ওই শিবির গুলোতে আটকে থাকা মানুষজনকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিবির চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে। শনিবার থেকে রবিবার জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে দুর্গত এলাকায় পরিদর্শন শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।

আউশগ্রাম,গুসকরা,কালনা, কাটোয়া, কেতুগ্রাম,মেমারি ,রায়না সব এলাকাতেই পরিদর্শন হয়। রবিবারও বেশ কয়েকটি এলাকায় যান সরকারি আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা। ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে তড়িঘড়ি ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ত্রিপল, শুকনো খাবার। কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীতে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এলাকার বিধায়ক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সবার কাছে সাহায্য পৌঁছে দেন তিনি। একই সঙ্গে বন্যা দূর্গতদের সাহায্য দিতে তিনি জরুরি বৈঠক করেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি গুলির জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। অন্যদিকে যে সব এলাকায় যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে বোটে চেপে পৌঁছে যাচ্ছেন আধিকারিকরা। এরই মধ্যে জেলায় এখনও কন্ট্রোল রুম চালু রাখা হয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হলে তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেবার কাজ চলছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমানের ২৩ টি ব্লকের ৩৩৩ টির মতো গ্রামীণ এলাকায় কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন। এছাড়াও তিনটি পৌরসভা এলাকায় বন্যার প্রভাব পড়েছে। জেলার প্রায় ১১ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ২৭২ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। আর ক্ষতি হয় ১৩৬১ টি বাড়ির। আর প্রায় ৫১১০ হেক্টর কৃষি জমি এখনো জলের তলায়। সব নিয়ে পরিস্থিতি খুবই জটিল। বিপদ সীমার মাত্র ৪ ফুট নিচে দিয়ে বইছে দামোদর নদ। ফলে ডিভিসির জলে প্লাবনের আশংকা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে অজয়, কুনুর সহ একাধিক নদীতে জলের পরিমাণ খুব বেশি থাকায় বিপদের সম্ভাবনা রয়ে গেছে। প্রশাসনের কর্তারা এ কথা স্বীকার করেই সব রকমের ব্যাবস্থা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে জামালপুর এলাকায় সতর্ক থাকার জন্য প্রচার চালানোর নির্দেশ জারি হয়। গুসকরা পৌরসভা, মেমারি শহর , রায়নার বেশ কয়েকটি এলাকায় বিপদ এখনো কাটেনি। বহু মানুষজন গৃহবন্দি।