জোটের নামে ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে সিপিএম
খায়রুল আনাম: বামফ্রন্টের নামে তিন দশকের বেশি সময় ধরে এ রাজ্যে বামফ্রন্টের ক্ষমতায় থাকার কথা বলা হলেও, মূলতই বেশিরভাগ ক্ষমতাটাই ভোগ করেছে সিপিএম এবং এ রাজ্যে বিরোধীদের হাতে বামফ্রন্টের শরীক দলগুলি যতখানি আক্রান্ত হয়েছে, তারচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সিপিএমের হাতে৷ সিপিএমের সীমাহীন অত্যাচার এবং ঔদ্ধত্যের কারণেই মানুষ মূলতই সিপিএমকেই বর্জন করে বিসর্জনের মধ্যে বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচু্যত করেছে৷ আর তাতে এমনই দুরাবস্থা হয়েছে যে, রাজ্য বিধানসভায় বামেরা একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছে৷ বিগত লোকসভা থেকে বিধানসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার লজ্জাজনকভাবে ছয় শতাংশের নীচে চলে এসেছে৷ কিন্ত্ত সিপিএমের এখন যা দুরাবস্থা তাতে নিকট ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না৷ এবারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে বামেরা আসন ভাগাভাগি করে লড়ার কথা বললেও, এক্ষেত্রেও বামফ্রন্টের নামে সিপিএমই মূলতই তাদের অতীতের সেই সীমাহীন ঔদ্ধত্য থেকে বেরিয়ে আসতে না পারার কারণেই এই জোট একেবারেই দানা বাঁধতে পারছে না৷ আর তাতে বামফ্রন্টের শরীক দলগুলি ছাড়াও এবারের ভোট-জোটের অন্যতম শরীক কংগ্রেসও সিপিএমের উপরে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়ে উঠেছে৷ সিপিএম কংগ্রেস প্রীতি দেখাতে গিয়ে তাদের হাত ধরতে যাওয়ার ফলে বামফ্রন্টের শরীক দলগুলিরই ক্ষোভের মুখে পড়েছে৷ শরীক দলগুলির প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে লড়াই করার কথা বলা সিএমএম নেতা মহম্মদ সেলিম ক্ষমতায় ফিরে আসার উদগ্র লিপ্সায় নিজের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর মুর্শিদাবাদে গিয়ে লজ্জাহীনভাবে প্রার্থী হয়েছেন৷ আর এ নিয়েই এখন তর্জা ও চর্চ্চা চলছে সর্বত্র৷ সিপিএমের ঔদ্ধত্য নিয়ে ফরওয়ার্ড ছাড়াও সিপিএমের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বামফ্রন্ট শরীক সিপিআই এবং আরএসপি৷ যদিও জোটের স্বার্থে আরএসপি ও সিপিআই তাদের ভাগের তিনটি করে আসনের পরিবর্তে দু’টি করে আসন নিয়ে সন্ত্তষ্ট হয়ে লোকসভা ভোট করতে রাজী হয়েছে৷ ফরওয়ার্ড ব্লককে না বলে পুরুলিয়ায় বামফ্রন্টের জোটধর্ম ভেঙে সেখানে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন সিপিএমের বিমান বসু৷ আর তারই জেরে দলের রাজ্য দফতর হেমন্ত বসু ভবন থেকে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়৷ আবার বারাকপুর, মথুরাপুর ও বসিরহাটে সিপিএম এককভাবে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী৷ সিপিএমের উপরে কংগ্রেসের রাগের কারণ হলো, কোনও আলোচনা ছাড়াই সিপিএম এভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ায়৷ কেননা, এই তিনটি আসনেরই দাবিদার ছিলো কংগ্রেস৷ কংগ্রেস বলছে, মথুরাপুর আসনে তাদেরই লড়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় কংগ্রেসের দিল্লি নেতৃত্ব তাতে শীলমোহর দেওয়া সত্বেও, সেখানে একতরফাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সিপিএম৷ প্রদেশ কংগ্রেসের পর্য্যবেক্ষক গোলাম আহমেদও সিপিএমের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷
ঠিক একইভাবে বীরভূমের নলহাটিতে দলীয় কর্মসূচিতে এসে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় সিপিএমের আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন যে, বীরভূম লোকসভা আসনটি সিপিএম কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়ে বোলপুর লোকসভা আসনে সিপিএম শ্যামলী প্রধানকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়েছে৷ বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী বলে কংগ্রেসের মিল্টন রশিদের হয়ে প্রচার করছে সিপিএম৷ কিন্ত্ত আমরা কংগ্রেসকে সমর্থন করবো না৷ তিনি অভিযোগ করেন যে, যারা দেশ বিক্রি করে বিজেপিকে সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের তোষামোদ ফরওয়ার্ড ব্লক করতে পারবে না৷ আমাদের দল ছোট না বড়, আগামীদিনে আমরা বেশি লোক পাব কী পাব না, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন৷ কিন্ত্ত মতাদর্শের দিক থেকে কংগ্রেসের অত্যাচার, স্বৈরাচারী শাসন, দেশে জরুরি অবস্থা জারি, মিসার মতো কালাকানুন কায়েম করা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই বামফ্রন্ট গঠিত হয়েছিলো৷ সেই কংগ্রেসকে আমরা সমর্থন করবো না৷ কিন্ত যেখানে বামফ্রন্টের প্রার্থী আছে সেখানে আমরা যাবো৷ কিন্ত্ত কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা কথাও বলবো না৷ বাম সংহতি তৈরী করেছিলেন নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু৷ সেই থেকে এসেছে বামফ্রন্ট৷ তাই আমরা কারও অনুগ্রহের পাত্র হবো না৷ আমরা চাই, বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে উঠুক৷ যে ঐক্য কংগ্রেসের সর্বনাশা সিদ্ধান্ত, বিজেপির মতো শয়তানের দল আর দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলেই তিনি মত প্রকাশ করেন৷ আর এথেকেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী কংগ্রেসের মিল্টন রশিদ চরম সঙ্কটে পড়ে গেলেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷