২০ সেপ্টেম্বর – সময়ের এক আশ্চর্য সমাপতনে এবার বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে পুজোর আগেই শুরু হয়ে গেল পুজোর আনন্দ। শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত থেকে জামিন পেলেন দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল। যিনি সবার কাছে কেষ্ট মণ্ডল নামেই অধিক পরিচিত। গোরু পাচার মামলায় ২০২২ সালের ১১ আগস্ট অনুব্রত মণ্ডলকে তাঁর বোলপুরের নীচুপট্টির কালিকাপুরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তাঁকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিলো আসানসোল জেলে। পরবর্তীতে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয় অপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই সিবিআই একইভাবে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে অনুব্রত মণ্ডলের সরকারি দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে। তাঁকে প্রথমে আসানসোল জেলে রাখা হলেও, পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে সিবিআই তাঁকে নিয়ে যায় দিল্লির তিহার জেলে।
অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সিবিআই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণের হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির হদিশ পায় বলে দাবি করে। সিবিআই ও ইডি অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোল জেল থেকে দিল্লির তিহাড় জেলে নিয়ে গিয়ে সেহগাল হোসেনের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার জন্য একাধিকবার আদালতে আবেদন করে। এর পর সেই আবেদন আদালত মঞ্জুর করলে সিবিআই ও ইডি যখন অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোল জেল থেকে দিল্লির তিহার জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসানসোলে পৌঁছয় তখন দেখা যায় যে, পুরনো একটি হুমকি মামলার অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূমের দুবরাজপুর আদালতে এনে হাজির করা হয়েছে। আর দুবরাজপুর আদালত ওই মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দেওয়ায় তাঁকে দুবরাজপুরে কয়েকদিন রাখা হয়। পরে তাঁকে পুনরায় নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোল জেলে। সেখান থেকেই আদালতের নির্দেশে সিবিআই ও ইডি অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লির তিহার জেলে নিয়ে যায়।
এই মামলার তদন্তে সিবিআই বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক লিমিটেডের মাধ্যমে অনুব্রত মণ্ডল ‘কালো টাকা সাদা’ করেছেন বলে জানতে পেরে ওই ব্যাঙ্কের সিউড়ির প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও তদন্ত চালায়। আর অনুব্রত মণ্ডলের এইসব কাজের সঙ্গে তাঁর হিসাবরক্ষক চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মনীশ কোঠারীর যোগাযোগ থাকায় তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে ডেকে ইডি গ্রেপ্তার করে তিহার জেলে রাখে। এর পর সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলের একমাত্র মাতৃহীনা মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুকন্যা মণ্ডল ওরফে রুবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে ডাকে এবং তাঁকে সেখানে গ্রেপ্তার করে তিহার জেলে রাখা হয়। এই মামলায় প্রথমে যখন হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারী জামিন পান, তখন থেকেই অনুব্রত মণ্ডল এবং সুকন্যা মণ্ডলের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় বলে মনে করা হতে থাকে। এবারের লোকসভা ভোটের প্রচারে জেলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে অন্যান্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রকাশ্য জনসভায় সরাসরি অভিযোগ করেন যে, অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই ও ইডি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে রেখেছে। খুব শীঘ্রই অনুব্রত মণ্ডলের জেলমুক্তি ঘটবে বলেও দাবি করা হয়।
এরপর দেখা যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট কয়েকটি শর্তের বিনিময়ে জামিন দেয়। জামিন পাওয়ার পরেও সুকন্যা অবশ্য বোলপুরের বাড়িতে আসেননি। তবে, সুকন্যা মণ্ডলের জামিনের পরে জেলায় দলীয় কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় আনন্দে মাতেন। অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের প্রার্থনা জানিয়ে দলীয় কর্মীদের অনেকেই পাথরচাপুড়ির দাতা বাবার মাজারে গিয়ে চাদর চাপিয়ে প্রার্থনাও করেন। মনে করা হয় যে, সিবিআইয়ের মামলায় অনুব্রত মণ্ডল জামিন পাওয়ার পরে, ইডি-র মামলায় তাঁর জামিন পাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ
আদালত অনুব্রত মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করায় পুজোর আগে স্বাভাবিকভাবেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, আইনী বিভিন্ন কাজকর্ম সেরে সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি তিহাড় জেলের বাইরে মুক্ত আকাশের নীচে আসবেন। তারপরই আইনী দিকগুলি খতিয়ে দেখে তিনি মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে বোলপুরে আসবেন তা ঠিক হবে। এদিকে অনুব্রত মণ্ডল যখন তিহার জেল থেকে বেরিয়ে মুক্ত আকাশের নীচে পা রাখবেন তখন তাঁকে সেখানে স্বাগত জানাতে জেলা থেকে অনেক দলীয় কর্মী সেখানে হাজির হবেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে, অনুব্রত মণ্ডলের যতক্ষণ পর্যন্ত না জেলমুক্তি ঘটছে ততক্ষণ পর্যন্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকরা যাতে অতি উচ্ছ্বাসে না মাতেন, সে বিষয়ে দল সতর্ক থাকতে চাইছে বলেই জানা যাচ্ছে।