বুদ্ধিনাশের প্রমাণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজেপির হয়ে সম্প্রতি প্রতিটি নির্বাচনী প্রচরে টার্গেট করে চলেছেন সংখ্যালঘু মুসলিমদের৷ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজনের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ দেশের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে বলছেন ‘অনুপ্রবেশকারী’৷ বলছেন, বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে দেশের সব সম্পদ মুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ এমনকি হিন্দু পরিবারের সোনাদানা, মঙ্গলসূত্রও নাকি মুসলিমদের দিয়ে দেওয়া হবে৷ তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে দেওয়া হবে মুসলিমদের৷ অতিরিক্ত চাপ ও হতাশা থেকেই যে এই আচরণ, তা সহজেই অনুমান করা যায়৷ ১৬ বছর বাদ দিলে স্বাধীনতার পর থেকে বাকি সময়টা দেশে কংগ্রেস এবং অন্যরাই ক্ষমতায় ছিল৷ যদি এটাই তাদের লক্ষ্য হতো, তাহলে বহু আগেই তা করে ফেলত৷

নরেন্দ্র মোদি ‘যাদের বেশি সন্তান’ বলে তোপ দেগেছেন মুসলিমদের লক্ষ্য করে৷ অত্যন্ত লজ্জার বিষয় পড়াশুনা না করে একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বোধের মতন এমন কথা বলেন৷ সন্তানের জন্ম কমবেশি হিন্দু-মুসলিম উভয়ের ক্ষেত্রে সমান৷ গত ৬০-৭০ বছর ধরেই ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে৷ হিন্দুও কম-বেশি ৮০ শতাংশ৷ প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য এগিয়ে দেবার মতো যোগ্য লোক কি সরকার ও দলে নেই৷ মোদি জমানাতেও একাধিক সরকারি তথ্যে মোদির ভাষণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়৷ পরিকল্পনা করে ছক কষে মিথ্যার বেসাতি করা হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিভাজনের রাজনীতিকে পুষ্ট করতে৷

মুসলিমদের সম্পর্কে দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে যে কোনও ধর্মের সংবেদনশীল মানুষই ছিঃ ছিঃ করছেন৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বয়ং মোদিও তাঁর ভাই-বোনদের মিলিয়ে মোট ৬ জন৷ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও জানিয়েছেন, তাঁর ৫ সন্তান রয়েছে৷ আর লালুপ্রসাদ যাদবের সন্তান সংখ্যা ৯৷ অন্যদিকে, দেশের সংবিধানের রূপকার ড. বি আর আম্বেদকরও তাঁর পরিবারের চতুর্দশতম সন্তান ছিলেন৷ মোদি, খাড়গে, লালু বা আম্বেদকর কেউই মুসলমান নন৷ তাহলে বেশি সন্তানের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কী? বিভিন্ন সমীক্ষাতে এই তথ্য উঠে এসেছে, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে পারলেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব৷ স্বাধীনতার সাত দশক পরও শিক্ষাকে অনিবার্য করতে পারেনি সরকার৷ শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতির জন্য সংখ্যাগুরুদের মনে সংখ্যালঘুদের জুজু ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার আগে কয়েকশোবার ভাবা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর৷ নরেন্দ্র মোদির মুখে এসব কথা মানায় না৷ এসব মন্তব্যের পর মনে হয়, ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পরও বিজেপি নেতা হয়ে থেকে গেলেন নরেন্দ্র মোদি৷ তাঁর আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হল না৷


মোদিবাবুরা এখন বুঝে গিয়েছেন রামমন্দির নির্মাণের জিগির তুলে এখন আর মানুষকে বোকা বানানো যাচ্ছে না৷ বিকশিত ভারত, তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, ফাইভ ট্রিলিয়নের গল্প আর কেউ শুনছেন না৷ সবকা সাথ সবকা বিকাশ নিয়েও মানুষ বিদ্রূপ করা শুরু করেছে৷ এই অবস্থায় নির্বাচনে জেতার জন্য যা খুশি তাই প্রলাপ বকা শুরু করে দিয়েছেন৷ যুক্তি ও বিজ্ঞানকে ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে বলি দিয়ে প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যেসব ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাতে তাঁর সাধারণ জ্ঞান এবং প্রধানমন্ত্রীসুলভ সংযম ও দায়িত্ববোধ নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷

দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য বিষয়টা এখন আর দেশের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নেই, পৌঁছে গেছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের চর্চাতেও৷ তিনি আরএসএসের প্রচারক বা ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রধান মুখ হতেই পারেন৷ কিন্ত্ত এটা মনে রাখতে হবে ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের তিনি প্রধানমন্ত্রী৷ নূ্যনতম বোধবুদ্ধি থাকলে ভাষণ দেওয়ার আগে তিনি হোমওয়ার্ক করতেন৷ বক্তৃতায় এমন অসত্য কথা বলছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে নিজের সরকারের রিপোর্ট বা তথ্য পরিসংখ্যানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে৷ নির্বাচনী আচরণবিধি পালনের ক্ষেত্রে নিজে অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত না হয়ে উঠে সর্বাধিক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন৷ পদে পদে কলুষিত করছেন সংবিধানকে৷
বিনাশকালে বুদ্ধিনাশের এটাই কি বড় প্রমাণ?