সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ
খায়রুল আনাম: একদিন অবিভক্ত পরাধীন ভারতকে ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি পেতে গিয়ে দ্বি-খণ্ডিত হতে হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তান ভাগের মধ্যে দিয়ে। আবার পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা, তা ভারতেরই সহযোগিতায় পূর্ণতা পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের মধ্যে দিয়ে। আর এই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবদ্দশায় তাঁর জীবন কেটেছে এই দুই দেশেই। শান্তিনিকেতনে গড়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের বিশ্বভারতীতে দেশ-বিদেশের যে সব পড়ুয়ারা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ জন। বিশ্বভারতীতেই বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ভবন।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে ইতিমধ্যেই ১১৫ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট পরিষেবা-সহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে, বাইরের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরফলে বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশি পড়ুয়ারা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
তাঁরা চাইছেন, দ্রুত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটুক এবং দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ছাত্রমৃত্যুর প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিলও করা হয়। এই মৌন মিছিলটি এসে শেষ হয় শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহের সামনে। সেখানে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিহত ছাত্রদের স্মৃতিতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় মোমবাতি হাতে। অপর দিকে দেখা যায় যে, রবিবার ২১ জুলাই একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন রুখতে রাষ্ট্র নির্দেশিত গণহত্যার বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন’ বলে প্রচার করে জমায়েত করা হয় শান্তিনিকেতনে।
এই জমায়েতে তেমন কোনও সাড়া না মিললেও অনেকেই মনে করছেন যে, দেশের পরিস্থিতি এবং আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায়, এখানকার বাংলাদেশি পড়ুয়াদের উদ্বগ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই ধরনের জমায়েত এবং কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশি পড়ুয়াদের দূরে থাকাটাই কাম্য। কেননা, ছাত্র হিসেবে ভিসা নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করতে আসেন, তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। সেই নিয়ম লঙ্ঘিত হলে যে কোনও মুহূর্তে ছাত্র ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে। এই রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পড়ুয়াদের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই কাজ করাটা একান্ত জরুরি এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলেই বলা হচ্ছে।