বাজেটে কর্পোরেটদের থেকে বেশি কর দিয়েও মধ্যবিত্তের প্রাপ্তি শুধু হতাশা

দিল্লি, ২৩ জুলাই: কর্পোরেট সংস্থার থেকে বেশি কর দেন মধ্যবিত্তরা। অথচ তাঁদের আর্থিক উন্নয়নে কোনও নজর নেই কেন্দ্রের মোদি সরকারের। একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে সরকারের নির্ধারিত কর। কিন্তু বাড়ছে না রোজগার। প্রতি মুহূর্তে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের। কোথাও খেতে গেলেও, কিছু কিনতে গেলেও দিতে হয় পণ্য ও পরিষেবা কর।

এবছর বাজেটে কর ছাড় দিতে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাড়িয়ে ৭৫ হাজার করেছে কেন্দ্র সরকার। লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর সরকার ভারসাম্য রাখতে উদ্যোগী হয়েছে বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়াতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে যে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার, তাতে কর্মসংস্থান আদৌ বাড়বে নাকি কর্পোরেট সংস্থাগুলি আরও লাভবান হবে, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। এবার ভারতে বিনিয়োগকারী বিদেশি কর্পোরেট সংস্থাগুলির করও ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ কমিয়েছে। তাই এই বাজেট আদানি-আম্বানিদের বলে দাবি করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই নেই।

এদিকে মোদি সরকারের আমলে গত কয়েক বছরে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। যার আওতায় রয়েছে আয়কর ও কর্পোরেট কর। আর এখন রাজকোষে জমা হওয়া করের মধ্যে আয়করই বেশি জমা হয়। যার সিংহভাগ আসে মধ্যবিত্তের পরিশ্রমের উপার্জন থেকে। ২০২২-২৩ সাল থেকে এই পরিবর্তন এসেছে। দেখা গিয়েছে, রাজকোষে কর্পোরেট করের চেয়ে বেশি জমা পড়েছে আয়কর। সে বছর কর্পোরেট কর থেকে আয় হয় ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। আয়কর থেকে ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৬০ কোটি আয় হয়। ২০২৩-‘২৪ সালে কর্পোরেট কর থেকে ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা আয় হলেও, আয়কর থেকে সরকার ১০ লক্ষ ২২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা আয় করে। অথচ কর্পোরেট সংস্থাগুলি ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট পায়, সাধারণ মধ্যবিত্তরা জিএসটি রিটার্ন পান না। আয়কর এবং কর্পোরেট কর মিলিয়ে দেশের মাত্র ২ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষই কর দেন, যা মোট জনসংখ্যার ১.৬ শতাংশ।


যদিও ২০১৯-‘২০ সালে কর্পোরেট কর বাবদ সরকারের আয় হয় ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। সেই নিরিখে আয়কর বাবদ রাজকোষে ঢোকে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৫৪ কোটি। ২০২১-‘২২ সালে কর্পোরেট কর আদায় হয় ৭ লক্ষ ২ হাজার ৩৭ কোটি। সেই নিরিখে আয়কর ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা ছিল।

এদিকে কর্পোরেট জগতের সকলেই কর মেটান না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশে মোট ১৫ লক্ষ নথিভুক্ত বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-‘২৪ সালে মাত্র ৫.৬ লক্ষ কর্পোরেট সংস্থা কর দিয়েছে। এবং ৫.১ লক্ষ সংস্থা জিরো ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করেছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার অমিতাভ তিওয়ারি সংবাদ সংস্থাকে এই তথ্য দিয়েছেন। তাঁর দাবি, দেশের মাত্র ৫ শতাংশ কর্পোরেট সংস্থা ৯৭ শতাংশ কর মেটায়। ৪০ শতাংশ কর দেয় শুধুমাত্র প্রথম সারির ১৫০টি সংস্থা। অমিতাভ তিওয়ারির মতে, মধ্যবিত্তের পরিবর্তে কর্পোরেটদের থেকে বেশি কর নেওয়া উচিত। অতীতে একই দাবি করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।