সারদা মামলায় নলিনী চিদম্বমের বিরুদ্ধে চার্জশিট ইডির, ১৮ জুলাই শুনানি

মোল্লা জসিমউদ্দিন:  শুক্রবার কলকাতার সিটি সেশন কোর্টের ইডি এজলাসে সারদা মামলায় এবার নলিনী চিদম্বরমের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ল। এদিন পি চিদাম্বরমের স্ত্রী-র নামে ইডি ১১০০ পাতার নথি জমা দেয় বিশেষ আদালতে। এর মধ্যে মূল চার্জশিট ৬৫ পাতার। অভিযোগ, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে ১.৫ কোটি টাকা নিয়েছিলেন নলিনী চিদাম্বরম। যদিও ইডির  কাছে নলিনী দাবি করেছেন, ‘ওই টাকা তিনি আইনজীবী হিসাবে পরামর্শ দিয়ে কনসালটেন্সি ফি হিসাবে নিয়েছিলেন’।

যদিও সেই সংক্রান্ত কোনও নথি তিনি ইডির কাছে দেখাতে পারেননি বলে সূত্রের খবর। নলিনী ওই অর্থ সুদীপ্তর কাছ থেকে নিয়েছিলেন ২০১১-১২ সালে। সেই সময় তাঁর স্বামী চিদম্বরম ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরফলে তদন্তকারীদের ধারণা, ওই দেড় কোটি টাকা ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসাবেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনী চিদম্বরমকে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। এই মামলায় এর আগেও নলিনীকে তলব করেছিল ইডি। তাঁর সম্পত্তিও এর আগে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে ৬৫ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। এটি এই মামলার তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট। চার্জশিটের পাশাপাশি ১১০০ পাতার তথ্যপ্রমাণের নথিও ইডি-র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর আগে এই মামলায় ৩৪ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে অনেককে।

তবে নলিনীকে দু’বার তলব করা হলেও তিনি হাজিরা দেননি। ইডি-র দাবি, সারদা মামলায় বেশ কয়েকবার  তলব করা হলেও একবারও হাজিরা দেননি নলিনী।  শুক্রবার তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবেই দেখানো হয়েছে নলিনী চিদম্বরমকে। আর্থিক তছরুপের অংশ ছিল ওই দেড় কোটি টাকা। চার্জশিটে এমনটাই দাবি ইডির। সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট ও অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম দেওয়া আছে। উনি কনসালটেন্সি বাবদ টাকা নেওয়ার কথা দাবি করলেও প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে পারেননি।


উল্লেখ্য,  সারদা মামলায় নাম জড়ানোর পরই নলিনী চিদাম্বরম দাবি করেছিলেন, ওই টাকা তিনি ট্যাক্স কনসালটেন্ট হিসাবে কনসালটেন্সি ফি বাবদ নিয়েছিলেন। যদিও ইডির দাবি, এর সপক্ষে কোনও নথি দেখাতে পারেননি নলিনী। এদিন আদালতে ইডি চার্জশিট পেশ করলে, আদালতের তরফে প্রশ্ন করা হয়, “এত দিন পরে কেন চার্জশিট দেওয়া হল?”। ইডি জবাবে বলে, “তদন্ত চলছে। এটা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট”। বিচারক বলেন, “ধরে নিন একজন ক্রিমিনাল ল-ইয়ার, তাঁর কাছে অপরাধীরা যান আইনের সাহায্যের জন্য। তাহলে কি উনি মানি লন্ডারিংয়ের পার্ট হয়ে গেলেন!”

আদালতের তরফে আরও প্রশ্ন করা হয়, “উনি যদি কনসালটেন্সি নিয়ে থাকেন, সেটা তো আয়কর দফতর দেখবে।” বিচারক প্রশ্ন করেন, “দশ বছর পর চার্জশিট কেন? আপনারা জমা দিলেন, আমি দেখব। কগনিজেন্স নেওয়া যাবে কি যাবে না? দেখা হবে। একজন ক্রিমিনাল টাকা লুঠ করল। তা থেকে ফি দিলেন, তাহলে কি আইনজীবী অভিযুক্ত হয়ে যাবে!” ইডি আদালতে চার্জশিট জমা দিলেও, আদালত তা গ্রহণ করেনি। নলিনী চিদাম্বরম কীভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত? সেই তথ্য বোঝাতে বলা হয়েছে। এরপর ইডি সময় চায়। আগামী ১৮ জুলাই এই চার্জশিটের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে বলে জানা গেছে ।