নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান, ২৮ মে– রেমাল ঘূর্ণিঝডে়র প্রভাবে রাজ্যের অনান্য জেলার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের চারটি ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তি জারি করে একথা জানালেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার৷ একই রিপোর্ট পাঠানো হয় নবান্নে৷ ওই চার ব্লকে ঘরবাডি়, ফসল সবেরই ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে জেলা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক এর কথায় কোথাও কোন ফসলের ক্ষতির কথা জানানো না হওয়াতে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে৷ এদিকে রেমাল এর প্রভাবে শুধুমাত্র ফসলের ক্ষতিই হয়নি ব্যাবসাদাররাও চরম ক্ষতির মুখে পডে়ছেন৷ এমনটাই দাবি ব্যাবসায়ী মহলের৷
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে রাজ্যজুডে় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে অনেকটা দূরে হলেও পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে৷ জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার জানিয়েছেন, মোট চারটি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এরমধ্যে রয়েছে কেতুগ্রাম-১, কেতুগ্রাম-২, রায়না-২ এবং পূর্বস্থলী-২ ব্লক৷ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিসংখ্যানে জানা যায়, জেলা জুডে় মোট ৩১টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ভারি বর্ষণের কারণে মোট ২১৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ ঝডে়র পরবর্তী সময়ে সোমবার মেমারি-১ ব্লকের কলানবগ্রামে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে৷ মৃতরা সম্পর্কে বাবা ছেলে৷ মেমারি-১ ব্লকের দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনারপাড়ার বাসিন্দা পিতা-পুত্র’র নাম ফোরে সিং ও তরুণ সিং৷
জেলাশাসকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ব বর্ধমানের ডিরেক্টর এআরডি জানিয়েছেন গত ২৪ ঘন্টায় কোন গৃহপালিত প্রাণীর মৃতু্য হয়নি৷ পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার থেকে জানানো হয়েছে, জেলার কোনও এলাকা থেকে কোনও কৃষি ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি৷ যদিও কৃষির ক্ষতি হয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ জেলার চাষিরা৷ ব্যাপকভাবে ফসল নষ্ট হবার পর কেন এই কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ তবে জনপ্রতিনিধিরা মঙ্গলবারও ফসলের ক্ষতি নিয়ে সরব ছিলেন৷ মঙ্গলবার আবার কৃষি দপ্তরের দেওয়া তথ্য নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাডে়ননি বিজেপির রাজ্য নেতা প্রবাল রায়৷ তিনি বলেন সরকার বা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কার্যত কোনো যোগাযোগ নেই কৃষকদের, এটা তাই প্রমাণ করে৷ তাই সেভাবে তাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ নেই৷ কোনও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে এই ঝড় বৃষ্টির প্রভাবে একদিকে যেমন কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে একইভাবে জেলা জুডে় ব্যবসার ক্ষেত্রেও চরম ক্ষতির মুখে পডে়ন ব্যবসায়ীরা৷ বিশেষ করে কাঁচা বা পচনশীল পণ্য নিয়ে যাদের ব্যবসা৷ সুত্রের খবর যেখানে গত শনিবার থেকেই রেমালের খবর নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে ঠিক তখন থেকেই কি গ্রাম আর কি শহর দোকান বাজারে লোকজন কমেছে৷
ফলে দোকানদারদের বেচা কেনা শিকেয় ওঠে৷ বর্ধমান শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা সমাজসেবী প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, তিন দিন ধরে রাস্তাঘাট শুনশান৷ অনেকে আবার ঝড় বৃষ্টির দাপটে দোকান খুলতে পারেননি৷ কেনা বেচা এতটাই কম যে দোকান খোলার খরচটুকু উঠেনি৷ তার মতে ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মিলতে পারে, কিন্ত্ত ব্যাবসায়ে বেচাকেনা না হলে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা নেই৷ কিন্ত্ত সংবাদ মাধ্যমে সে সব দুর্দশা দুর্ভোগের কথা লেখা হয় না৷ এ ব্যাপারে অল বেঙ্গল ট্রেড এন্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সভাপতি বিশ্বেশ্বর চৌধুরী বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতির মুখে পডে়ন৷ কিন্ত্ত এ ব্যাপারে সরকারের কোন পরিকল্পনা না থাকায় সংকটে পড়তে হয় তাদের৷ এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার বলে দাবি তার৷ অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভারী বর্ষণের ফলে পূর্ব বর্ধমানে ৪৩টি কাঁচা ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ আর সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা বাডি়র সংখ্যা ৫টি৷ একই সঙ্গে জেলার রিপোর্টে কোন জায়গায় কোন ত্রান শিবির খোলার কথা বা বাঁধ ভেঙ্গে যাবার খবর নেই৷ সব রকমের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি প্রশাসনের৷