‘বিচলিত হবেন না, ভালো ফল হবেই’, অবজার্ভার পাঠাচ্ছেন অভিষেক

প্রশান্ত দাস: মিটেছে বহু প্রতিক্ষিত চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন৷ বিজেপির দাবি, “আব কি বার ৪০০ পাড়৷ ” অন্যদিকে সম্প্রতি ইন্ডিয়া জোটের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, ৩০০ এর কাছাকাছি আসন জিতে এবার কেন্দ্রে সরকার গড়বে ইন্ডিয়া জোটই৷ কেন্দ্রের পাশাপাশি বাংলাতেও লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি৷ ভোট মিটে গেলেও এখন সব রাজনৈতিক দলগুলি প্রস্তুতি শুরু করেছে গণনা পর্বের জন্য৷ সেই পর্যায়ে রবিবার বিকেলে এক জরুরি বৈঠকে বসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷

রবিবাসরীয় বিকেলে প্রায় ৫ টা নাগাদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এই বৈঠক করেন৷ অভিষেকের নির্দেশে এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন বাংলার ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী, জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি ও ভোটে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্বরা তথা অবজার্ভারগণ৷ তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কি? পরীক্ষা শেষেও আলাপচারিতার দরকার পড়ে৷ প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল হবে কিনা তার অঙ্ক কষে দেখতে হয়৷ আর সেই গুরুদায়িত্বই পালন করছেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ সেই উদ্দেশ্যেই নিজ সৈনিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন তিনি৷ বুথফেরত সমীক্ষায় গুরুত্বহীনতা, বরং গণনার জন্য পুরোদমে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিলেন অভিষেক৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শনিবার ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর বুথফেরত সমীক্ষায় ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র ক্ষমতায় আসার পূর্বাভাস মিলছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আগের থেকে অনেক ভাল ফল করবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে একাধিক সমীক্ষা থেকে৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ১৮ টি আসন৷ এবার তা বেড়ে হতে পারে ২৫ পাড়, বুথফেরত সমীক্ষা এমনটাই বলছে৷


তবে দলীয় নেতৃত্বদের সেই সমীক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়ার নির্দেশ দিলেন অভিষেক৷ সেই বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর অভিষেকের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত৷ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার মতে বেশ কিছু আসনে টানটান লড়াই হয়েছে৷ খুব কম ব্যবধানে হার জিত চূড়ান্ত হবে৷ সেখানে গণনায় কড়া নজর রাখতে হবে এবং এই নজর রাখার জন্যই বেশ কিছু অবজার্ভারকে জেলায় পাঠাচ্ছেন অভিষেক৷ যেমন ঘাটাল লোকসভা আসনে গণনার জন্য অবজার্ভার থাকবেন মানস ভুইঞাঁ ও অজিত মাইতি, মেদিনীপুরে জয়প্রকাশ মজুমদার, আরামবাগে শান্তনু সেন, হুগলিতে ইন্দ্রনীল সেন, তমলুকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঁথিতে খোদ প্রার্থী উত্তম বারিক, বিষ্ণুপুরে সমীর চক্রবর্তী প্রমুখ৷

বুথফেরত সমীক্ষার সত্যতা নেই, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অভিষেক৷ বৈঠকে তিনি বলেন, ২০২১ সালেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য বহু সংস্থার এক্সিট পোল মেলেনি৷ এবারও মিলবে না৷ এইসব হিসাবে গড়মিল রয়েছে৷ গণনার আগে তৃণমূলের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যই এইসব এক্সিট পোল বের করা হয়েছে৷ তাই গণনার ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া হোক৷ গণনা শেষ না হওয়া অবধি কাউন্টিং সেন্টার ছেডে় বেড়োনো যাবে না৷ গণনা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত লোক রাখতে হবে৷ বিরোধী প্রার্থী হয়তো প্রথমে এগিয়ে গেলেন, তার মানে কাউন্টিং সেন্টার ছেডে় বেরিয়ে আসব এটা হবে না৷ শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে৷ সেরা কাউন্টিং এজেন্টদের দল পুরস্কৃতও করবে৷ সমস্ত গণনা কেন্দ্রে প্রার্থীরা যেন কর্মীদের সঙ্গে জুড়ে থাকেন৷ যাতে কর্মীদের মনোবল অটুট থাকে৷ তাই বিচলিত হবেন না, ভালো ফল হবেই৷ বুথফেরত সমীক্ষার পেছনে থাকতে পারে বিজেপির অর্থনৈতিক চাপ, দাবি অভিষেকের৷

পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বদের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে প্রস্তুত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন যুবরাজ৷ বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য রেখে অভিষেক দাবি করেছেন, “আমি মানুষের চোখের মুখের ভাষা বুঝি৷ কেন্দ্রে সরকার বদলাবেই, কেউ আটকাতে পারবে না৷” ভোট মিটে গেলেও নিজ বক্তব্যে অটুট রইলেন অভিষেক৷ বুথফেরত সমীক্ষাকে দেখালেন বুড়ো আঙ্গুল, ভরসা রাখলেন গণনাতেই৷ পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা অনুযায়ী বেশির ভাগ লোকসভা আসনে জোড়া ফুল ফুটবে বলেই মনে করছে তৃণমূল৷ ব্যতিক্রমী হলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও৷ বুথফেরত সমীক্ষাকে ফেক বা ভুয়ো বলে অভিহিত করছেন মমতা৷ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি এসব বিশ্বাস করি না৷ ওই আসনে ও জিতবে, অমুক আসনে কে জিতবে, কত টাকার বিনিময়ে? এই এক্সিট পোল বিজেপির তৈরি করা৷ আমি এই হিসাব মানি না৷ কর্মীদের বলব শক্ত থাকতে৷ গণনা ভাল করে করতে৷ সমীক্ষা যা বলছে, তার দ্বিগুণ পাব৷ প্রত্যেকটা আসন আমরা জিতব৷” মমতার আরও সংযোজন, “আমরা যে ভাবে মাঠে-ময়দানে নেমে কাজ করেছি, লোকের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনও মনে হয়নি যে, মানুষ আমাদের ভোট দেবেন না৷” বৈঠকেও ঠিক একই বার্তা দিতে শোনা যায় অভিষেককেও৷