বুধবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বলেন, ‘বদল চাই, বদলা নয়’ সম্পর্কে যে ফোঁস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বলতে গিয়ে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি ছিল– এরকম অভিযোগে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সমাজমাধ্যমে। তিনি বলেছেন, তাঁর বক্তৃতার ‘অপব্যাখ্যা’ করেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। তার মধ্যে কিছু সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল এবং ডিজিটাল মাধ্যম আছে। তারা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন।
তিনি খুব জোরালোভাবে লিখেছেন, ‘ডাক্তারি ছাত্রদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমি একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। তাঁদের আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি এবং ন্যায্য বলেই মনে করি। আমি তাঁদের কোনও হুমকি দিইনি। এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
প্রকৃতপক্ষে বুধবার মমতা বলেছিলেন, ‘আমরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিইনি। আমরা এফআইআর করলে কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। …সুপ্রিম কোর্টও অনুরোধ করেছে, সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। অনেক গরীব লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছেন।… আপনারা আন্দোলন করছেন, কিন্তু আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি। কোনও ব্যবস্থা নেব না। কিন্তু এবার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন।’ তিনি বলেছিলেন যে, দিল্লিতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে তিনি সেরকম কোনও পদক্ষেপ করতে চান না।
বুধবার মেয়ো রোডে টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁর নিশানা যে বিজেপি-ই ছিল, তা এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কারণ, ভারত সরকারের মদতে তারা আমাদের রাজ্যে গণতন্ত্রকে আঘাত করার এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের সমর্থনে তারা অনাচার তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে আমার আওয়াজ তুলেছি।’
জমায়েতের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক বিতর্কিত মন্তব্যে বলেন, ‘আমায় অনেক গালাগালি দিয়েছেন। অনেক অসম্মান করেছেন। আমি অনেক ভেবেছি। আমি ভেবে দেখলাম, এঁদের বিরুদ্ধে কোনও দিনও বদলা নিইনি। আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। আজ বলছি, ওই কথা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন। ‘আমি অশান্তি চাই না। কিন্তু কুৎসা, অপপ্রচার এবং চক্রান্ত করে যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে আপনি কামড়াবেন না ঠিকই, কিন্তু ফোঁস তো করতে পারেন।’
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এই দুই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। এমনকি তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয় তাঁকে। তাঁর এহেন বক্তব্যকে একপ্রকার হুঁশিয়ারি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন বিরোধীরা। এমনকি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্যের পর পাল্টা মন্তব্যে চিকিৎসকরা দাবি করেন ‘ভয় দেখিয়ে লাভ নেই’। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, তবে কি আন্দোলনকারীদেরও ভয় দেখিয়ে কন্ঠ প্রতিরোধ করতে চাইছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়?
দেশজুড়ে এই সমালোচনা মধ্যেই বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর করা মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে তাঁর ব্যাখ্যা— ‘আমি গতকাল আমার বক্তৃতায় যে বাক্যাংশটি ব্যবহার করেছি, তা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের একটি উদ্ধৃতি। কিংবদন্তি সাধক বলেছিলেন, মাঝেমাঝে আওয়াজ তুলতে হয়। অপরাধ ও ফৌজদারি অপরাধ হলে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে হবে।’